আমরা লাইভে English বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০২৩

বন্দিবিনিময় প্রায় শেষ, শুরু হতে যাচ্ছে আফগান শান্তি আলোচনা

REPORT-1-ENG-04-09-2020-Afg

আফগান সরকার বলেছে বার বার থমকে যাওয়া তালেবান বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া বৃহস্পতিবার মোটামুটি শেষ হয়েছে। এর ফলে দেশের দীর্ঘতম যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার পথে সম্ভাব্য চূড়ান্ত বাধা দূর হলো।

যুদ্ধ অবসানের আলোচনা শুরু করার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি মতো ৫,০০০ বন্দীর সবাই মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তালেবানরা আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে। বন্দি মুক্তি দিতে কাবুল সরকার বিলম্ব করায় তালেবানরা সারা দেশে সরকারি বাহিনীর উপর হামলা জোরদার করে। 

বৃহস্পতিবার আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জাভেদ ফয়সাল বলেন, তালেবানরা আফগান কমান্ডারদের মুক্তি দেয়ার পর বাকি ৪০০ তালেবান বন্দির মধ্যে গুটি কতেক ছাড়া সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। 

বাকি অর্ধ ডজনের মতো বন্দির বিরুদ্ধে আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান ও ফরাসী নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এদের মুক্তি বন্ধ রাখতে ওই তিন দেশ লবিং করে। যদিও অন্য আমেরিকান কর্মকর্তারা বন্দিমুক্তির কাজ দ্রুত শেষ করতে আফগান সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিলো।

তবে আফগান ও তালেবান কর্মকর্তারা বলছেন যে মুখরক্ষার অংশ হিসেবে এসব বন্দিকে কাতারে নিয়ে সাময়িকভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হবে।

ফয়সাল বলেন, আমরা দ্রুত সরাসরি আলোচনা শুরুর আশা করছি।

গত ফেব্রুয়ারিতে সই হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো এই বন্দিবিনিময়। ওই আলোচনায় আফগান সরকারকে রাখা হয়নি। এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তান থেকে মোটামুটি ১২,০০০ মার্কিন সেনার দেশে ফেরত যাবার পথ সুগম হয়। ১৪ মাসে এসব সেনা ফেরত যাবে। বিনিময়ে তলেবানরা কোন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

চুক্তির এই অংশের বিরোধিতা করে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির প্রশাসন। তাদের দাবি হলো আমেরিকানরা তালবানদের পক্ষে বড় দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাবুল সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

তবে যাই বলা হোক না কেন আমেরিকান সেনারা চলে যাবে এটা বুঝতে পেরে আফগান সরকার নমনীয় হয়। রাজনৈতিক প্র্রক্রিয়া ও মানবাধিকার প্রশ্নে তালেবান ও আফগান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য রয়েছে। কয়েক দশক ধরে চলে আসা সংঘাতের কারণে ক্ষোভও আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করবে।
আফগান সরকার প্রথমে বন্দি মুক্তির বিরোধিতা করে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের প্রবল চাপের মুখে তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। মার্কিনীরা মনে করছেদীর্ঘ ও ব্যয়বহুল এই যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র উপায় হলো আফগান শান্তি আলোচনা, যা আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করবে।

৫,০০০ বন্দির মধ্যে আফগান সরকার ৪০০ বন্দির মুক্তি আটকে দিয়েছিলো। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোতে জড়িত থাকার অভিযোগ। কিন্তু আবারো সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একদিকে তালেবানরা সরকারি বাহিনীর উপর হামলা বাড়িয়ে দেয়, যাতে ডজন ডজন আফগান সেনা মারা পড়ে। অন্যদিকে মুক্তি সম্পন্ন করতে যুক্তরাষ্ট্রও চাপ দেয়।

লয়া জিরগার সঙ্গে আলোচনা করে গত মাসে প্রেসিডেন্ট ঘানি শেষ দফার বন্দিদের মুক্তি দিতে ডিক্রি সই করেন। তবে নতুন শর্ত দেয়া হয়। আফগান সরকার দাবি করে তাদের ২০ জনের মতো কমান্ডোকে মুক্তি দিতে হবে। ২০১৮ সালে গাজনি প্রদেশে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় এরা তালেবানদের হাতে ধরা পড়ে। 

গত সোমবার আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ শাহ বলেন যে তার সরকার বাকি তালেবান বন্দিদের ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ তালেবানরা নিশ্চয়তা দিয়েছে যে তারা সব কমান্ডোকে মুক্তি দেবে। 

তবে সব তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেয়ার আগে কতজন কমান্ডোকে পাওয়া যাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে এ পর্যন্ত ১০ কমান্ডোকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।