আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, জুন ০৬, ২০২৩

তালেবানদের মনোভাব, প্রতিশ্রুতি বলছে তারা পরিবর্তন চায়: হুসাইন

REPORT-4-ENG-21-10-2020-Afg

বিশ্ব যখন আফগান-অভ্যন্তরীণ আলোচনার ব্যাপারে অগ্রগতির অপেক্ষা করছে, একজন বিশেষজ্ঞ তখন বলেছেন যে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তান এখন একটা ‘করো অথবা মরো’ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে হয় তাদেরকে রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় আসতে হবে, নতুবা দেশ নতুন গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। 

দেশের ১৯ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ১২ সেপ্টেম্বর আফগান সরকারের প্রতিনিধিরা দোহাতে তালেবান সদস্যদের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন। 

আফগানিস্তানে ইসলামাবাদের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন সাইয়েদ আবরার হুসাইন। আনাদোলু এজেন্সির সাথে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, শান্তির পথে অনেক চড়াই উৎরাই রয়েছে। তিনি মনে করছেন যে, এই শান্তি প্রক্রিয়াকে আগামী দিনগুলোতে অনেক রকমের উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। 

সাবেক এই দূতের মতে, শুধু আফগানিস্তানের ভবিষ্যতই নয়, বরং ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন-তালেবান যে চুক্তি হয়েছে, তার পরিণতিও নির্ভর করছে আফগান-অভ্যন্তরীণ সংলাপের উপর। 

“সবার দৃষ্টি এখন আফগান-অভ্যন্তরীণ সংলাপের উপর। কোন সন্দেহ নেই যে এতে চড়াই উৎরাই রয়েছে। সব পক্ষকেই এখানে ছাড় দিতে হবে, বিশেষ করে কাবুল সরকার আর তালেবানদের এখানে বেশি এগিয়ে আসতে হবে”, বললেন হুসাইন। তার লেখা বই ‘আফগানিস্তান: মোল্লা উমর সে আশরাফ ঘানি তক’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। 

দুই পক্ষকে এজেন্ডার ব্যাপারে একমত হতে হবে

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ রাজনীতির ব্যাপারে একটা বোঝাপড়াই আসার আগে দুই পক্ষকে একটা এজেন্ডার ব্যাপারে একমত হতে হবে – যেমন সহিসংতার মাত্রা কমানো, অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে সম্মতি এবং সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয়গুলো। 

তিনি সতর্ক করে দিয়ে এটাও বলেন যে, বর্তমান শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে গেলে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসবে এবং দেশে নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। 

তালেবানরা তাদের অবস্থান বদলেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হুসাইন বলেন অনেক উত্থান পতন আর যুদ্ধের ক্লান্তি দুই পক্ষের মধ্যেই পরিবর্তন এনেছে। তিনি আশাবাদ জানিয়ে বলেন যে, তালেবানদের কট্টর অবস্থানের মধ্যে, বিশেষ করে নারী অধিকারের প্রশ্নে পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, “তালেবানরা নিশ্চিতভাবে অনেক বদলেছে। তারা অনেক উত্থান পতন দেখেছে। একই সাথে দুই পক্ষের মধ্যেই যুদ্ধের একটা ক্লান্তি জমেছে। সে কারণে দুই পক্ষই এখানে মাঝামাঝি একটা পথ খুঁজার চেষ্টা করবে। এই তালেবান ২০ বছর আগের তালেবান নয়। আমি নিশ্চিত যে তারা সমঝোতাই সফল হবে”।

মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে হুসাইন বলৈন যে, আফগান-অভ্যন্তরীণ সংলাপের মাধ্যমে একটা সমঝোতায় আসার আগেই পুরোপুরি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আফগান বাহিনী এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে তাদের বিমান শক্তির অভাব রয়েছে। সে কারণে তারা বিপদে পড়ে যাবে। 

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না যে, দ্রুত সেনা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আবার অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষাও করবে না। এখন বিষয়টা নির্ভর করছে আফগানদের উপর। তাদেরকে সংলাপে অগ্রগতি করতে হবে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই একটা ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে”।

মজার ঘটনা

সাবেক দূত একটি মজার ঘটনার কথা বলেন। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে চরম শীতের মধ্যে কান্দাহারের উপকণ্ঠে স্টাফদের সাথে তাকে পুরো রাত গাড়িতে থাকতে হয়েছিল। কারণ তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র শহরে ক্রুজ মিসাইল দিয়ে হামলা করতে যাচ্ছে। 

হুসাইন বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল তালেবানদের কাছে তথ্যটা পৌঁছে দিতে। আমি এক সহকর্মীকে সাথে নিয়ে মোল্লা ওমরের বাসভবনে যাই, যেটা পাকিস্তান কনস্যুলেট থেকে মাত্র ৫০০ মিটারের মতো দূরে ছিল। এক নিরাপত্তা রক্ষী মোল্লা ওমরের সেক্রেটারি তাইয়েব আগাকে আমাদের বিষয়টি জানানোর পর তিনি তৎক্ষণাৎ আমাদের সাথে দেখা করতে আসেন। আমরা তাকে তথ্য জানিয়ে দ্রুত নিরাপত্তার জন্য সরে আসি”।

তবে ওই গোয়েন্দা তথ্য সঠিক ছিল না। 

হুসাইন অভিযোগ করেন যে, কান্দাহারে তালেবানদের মোরাল পুলিশের প্রধান মৌলভি গুলাম হায়দারের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। 

তিনি তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “২০০০ সালের জুলাইয়ে স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে শর্টস পড়ে সৌজন্য ম্যাচ খেলার কারণে হায়দার পাকিস্তানের একটি ফুটবল ক্লাবের সব সদস্যকে গ্রেফতার করেছিলেন। তালেবান সরকারের হস্তক্ষেপের পর তাদেরকে একদিন আটকে রেখে সবার মাথা কামিয়ে পরদিন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল”।