আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

ভারতের কঠোর আইনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরি নারীদের শৈল্পিক প্রতিবাদ

চিত্রকলা থেকে কবিতা – শিল্পকর্ম দিয়ে নয়াদিল্লীর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা

art-1-05-08-2020
ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরা এক কাশ্মীরি নারীর এই ছবিটি এঁকেছেন হিনা আরিফ। স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য কাশ্মীরী স্থাপত্য আর মানুষের ছবি আঁকা শুরু করেন হিনা। তিনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের ঐতিহ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। 

২০১৯ সালের আগস্টে ভারত সরকার যখন জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন বাতিল করে সেখানে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো, তখন সেখানকার মানুষ পাল্টা লড়াই করতে চেয়েছিল। এখন, প্রতিবাদের জন্য নিজেদের কলম, কবিতা আর রংতুলি হাতে তুলে নিয়েছেন কাশ্মীরের নারীরা। 

গত বছরের শরৎকালে কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী হিনা আরিফ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থাপত্য এবং ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরা কাশ্মীরিদের ছবি আঁকা শুরু করেন। তার বিশ্বাস হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় ভারত সরকার কাশ্মীরের ঐতিহ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। সেই বোধোদয় থেকেই এই কাজ হাতে নেন তিনি। 

“আমি যদি কিছুই করতে না পারি, তাহলে অন্তত এই স্থাপত্য আর মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে পারি আমি”, বললো সে। বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন তিনি যারা কাশ্মীরের প্রাত্যহিত জীবনের ছবি তুলে থাকেন। তিনি মনে করেন, তার প্রজন্ম যদি প্রতিবাদ করতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখন জানতেই পারবে না যে, দায়েব কি বা ফেরান জুব্বাটা কেমন। কাশ্মীরী বাড়িগুলোর কাঠের ব্যালকনিকে দায়েব বলা হয়। 

art-02-05-08-2020
কাশ্মীরি চিত্রশিল্পী হিনা আরিফ

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় পুরোপুরি থমকে যান কবি রুমুজ। তার মনে হয়েছে কাশ্মীরীদের থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। রুমুজ আসলে ছদ্মনাম। তুর্কি ভাষায় এর অর্থ হলো ‘গোপনীয়’। কারণ প্রতিশোধের আশঙ্কার কারণে আসল নাম প্রকাশ করতে চান না তিনি। 

মানুষের সম্পর্ক নিয়ে, বিশেষ করে স্রষ্টার সাথে নারীর সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন তিনি। নারীদের ব্যাপারে যে অসহায় ও অবমাননামূলক ধারণা রয়েছে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। একই সাথে কাশ্মীরের সঙ্ঘাত আর প্রতিবাদকে নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন তিনি। রুমুজ বিশ্বাস করেন, তার প্রতিবাদের অনুভূতি এখন প্রকাশ করাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কাশ্মীর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে এবং কাশ্মীরীদের উপর প্রতিদিন নতুন আইন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। 

art-03-05-08-2020
হিনার আঁকা এক কাশ্মীরি মেষপালকের ছবি। 

তার লেখা মূলত কাশ্মীর আর এর মানুষের প্রতিচ্ছবি; তার একটি কাশ্মীরি কবিতার অনুবাদ অনেকটা এমন:

আদেশ জারি করেছে তারা

মজুদ করো সবকিছু

যুদ্ধের মেঘে

ঢেকে গেছে রাতের আকাশ

তোমাদের সবার নাম মুখস্থ করেছি আমি;

জানালার কপাট সশব্দে খুলে

চাঁদ দেখার প্রতিশ্রুতি থাকলো আমার।

art-04-05-08-2020
ভারত সরকার কর্তৃক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে এর প্রতিবাদ জানান কাশ্মীরের সাংবাদিকরা। 

 

art-05-05-08-2020
হিনার আঁকা এই চিত্রকর্মে এক কাশ্মীরীকে ঐহিত্যবাহী ফেরান পরিধান অবস্থায় দায়েব, বা কাঠের ব্যালকনিতে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কাশ্মীরি ঘরবাড়ির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এই দায়েব। 

৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার প্রায় এক বছর চলে গেছে। এই অনুচ্ছেদ যখন বাতিল করা যখন, তখন প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী সাইয়েদ আরিজ। অস্থির হয়ে উঠেছিলেন তিনি আর কাশ্মীরী ভাষাকে তখনই জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। তার মনে হয়েছে, এই ভাষা এখন বিপন্ন অবস্থায় চলে গেছে, কারণ কাশ্মীরে জনমিতি আর সংস্কৃতি বদলে দেয়ার জন্য আইন করা হচ্ছে। লাদিশাহ লেখার আর সেটা পারফর্ম করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। লাদিশাহ হলো কাশ্মীরি বিশেষ গান, যেখানে সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বক্তব্য উঠে আসে। 

art-06-05-08-2020
লাদিশাহ সাঙ্গীতিক পারফর্মারের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে আছেন শিল্পী সাইয়েদ আরিজ। 

লাদিশাহ সাধারণত পুরুষেরা গেয়ে থাকেন এবং এখন এটার পরিবেশনা প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। আরিজের মনে হয়েছে, এই ঐতিহ্যকে তিনি বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।