আমরা লাইভে English বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০২৩

চীনের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ, কিন্তু কেন?

ISSUE-2-ENG-28-08-2020-BD

বাংলাদেশ ৯টি অবকাঠামো প্রকল্পে ৬.৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের জন্য প্রতিবেশী চীনের দিকে হাত বাড়িয়েছে। এই পদক্ষেপ নয়া দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করেছে। এর রেশ ধরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা তাড়াহুড়া করে ঢাকায় গিয়েছেন বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য।

খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ প্রথম পর্যায়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর, বরিশাল-ভোলা সেতু, একটি টেকনোলজি পার্ক স্থাপনে তহবিল চেয়েছে। ঢাকা তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার জন্যও তহবিল চেয়েছে।

এসবের মধ্যে ভারতীয় মিডিয়ায় তিস্তা প্রকল্পটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিস্তার উৎপত্তি হিমালয়ে। এটি ভারতীয় রাজ্য সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদীর পানিবণ্টন একটি বিবদমান বিষয়। ভারত ও বাংলাদেশ ও ভারত কয়েকবার চুক্তির কাছাকাছি গেলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সই করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদেরা চুক্তি সইয়ে বাধা সৃষ্টি করছেন।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে চীনের প্রভাব নিয়ে ভারতের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

বাংলাদেশ পানির স্বল্পতা সমস্যা সমাধান করতে ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে সম্ভবত তার নিজের সীমানার মধ্যেই তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা উন্নত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর জন্য সহায়তা কামনা করেছে চীনের কাছে। বেইজিং বলেছে, তারা এই প্রকল্পে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে খুবই আগ্রহী।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। দুই দেশ ২০১৫ সালে কৌশলগত অংশীদার হয়। চীন হলো বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী, বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্য অংশীদার। চীন ইতোমধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করা সত্ত্বেও নয়া দিল্লি ও বেইজিংয়ের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষায় সতর্ক বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ সম্পর্কে স্পর্শকাতর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট চীনা প্রকল্পে সম্পৃক্ত হতে চায় না বাংলাদেশ। ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার বিদ্রোহ দমনে সহায়তা করেছে বাংলাদেশ। 

আরও পড়ুনঃ শ্রিংলার ঝটিকা সফর: বাংলাদেশ কি তার কার্ডগুলো দেখিয়েছে?

আসলে ভারতই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদার করতে বাধার সৃষ্টি করছে।

নয়া দিল্লির উপর্যুপরি সরকারগুলো তিস্তা বিরোধ নিষ্পত্তিতে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে নয়া দিল্লির সাথে সহযোগিতা যৌক্তিক করাটা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের গলাবাজি- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতে থাকা বাংলাদেশীদের উইপোকা হিসেবে অভিহিত করেছেন- ও সাধারণভাবে অভিবাসন ইস্যুতে অবস্থান বাংলাদেশীদের প্রবলভাবে কষ্ট দিয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী অ্যাক্ট ও জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু মোদি সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোনো পরামর্শ না করে এবং তাদের উদ্বেগে কর্ণপাত না করেই তার কাজে এগিয়ে গেছে।

তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশে একটি রিজার্ভার নির্মাণও রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ শুষ্ক মওসুমে ব্যবহারের জন্য পানি জমিয়ে রাখতে পারবে। এটা ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা হ্রাস করবে। আর তা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে ভারতের দুর্বলতাই প্রকাশ করছে। চীনের তহবিল ও প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।