ফ্যাশন ভিকটিম: সঙ্কটের মধ্যে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে গার্মেন্ট কর্মীরা

বৈশ্বিক বড় বড় ব্র্যাণ্ডগুলো দাম কাটছাটের দাবি জানানোর পাশাপাশি সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করছে বলে বহু মিলিয়ন গার্মেন্ট কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরবরাহকারী গার্মেন্ট কারখানাগুলোর অর্ডারও দরকার। শুক্রবার গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে, যাতে তারা গত বছরের তুলনায় দাম ১২ শতাংশ কম রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটস (সিজিডাব্লিউআর) তাদের গবেষণায় এ তথ্য পেয়েছেন। সরবরাহকারীদের ‘অসহায়ত্ব’কে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
১৫টি দেশের ৭৫টি কারখানায় পরিচালিত অনুসন্ধানে সরবরাহকারীরা জানিয়েছেন যে, তাদেরকে গড়ে অর্থ পরিশোধের জন্য ৭৭ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যেখানে মহামারীর আগে তাদেরকে ৪৩ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। এতে আরও বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই শিল্পে সারা বিশ্বে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ কাজ করছে।
প্রতিবেদনের লেখক এবং সিজিডাব্লিউআরের ডিরেক্টর মার্ক অ্যানার বলেন, “আমরা মূল্যের একটা নাটকীয় পতন দেখতে পাচ্ছি, সেই সাথে অর্ডার কমে যাওয়া এবং দেরিতে অর্থ পরিশোধের প্রবণতা বেড়েছে”।
“এতে সরবরাহকারী আর কর্মীদের জন্য আমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি সরবরাহকারীদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে”।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সারা বিশ্বে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তখন ফ্যাশন কোম্পানিগুলো বহু বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করেছে। এ কারণে ৫.৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেতন ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রেশার গ্রুপ ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইন জানিয়েছে।
কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, গুয়াতেমালা, ভারত, মেক্সিকো, পেরু এবং ভিয়েতনামের সরবরাহকারীরা সিজিডাব্লিউআরকে জানিয়েছে যে, তারা এরই মধ্যে তাদের শ্রমশক্তির ১০ শতাংশকে ছাটাই করেছে এবং আরও ৩৫ শতাংশকে তাদের কাটছাট করতে হবে।
সিজিডাব্লিউআর বলেছে, “তাদের দেয়া এই তথ্য সত্য হলো সারা বিশ্বে এই শিল্পে বহু মিলিয়ন গার্মেন্ট কর্মী কাজ হারাবে”।
দ্বিতীয় সঙ্কট
উৎপাদনকারী ও শ্রমিক অধিকার গ্রুপগুলো বলেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে যে সব অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছিল, নতুন অর্ডারের সাথে সেগুলোর কিছু কিছু পুনর্বহাল শুরু হয়েছিল। কিন্তু কারখানাগুলো যেটুকু চুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে, সে তুলনায় সেটা কম।
অ্যানার বলেন, “ক্রেতারা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে”। সরবরাহকারীদের জন্য এই পরিস্থিতিকে ‘আসন্ন দ্বিতীয় সঙ্কট’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
উৎপাদনকারীদের অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন যে, অর্ডারের এই বৈষম্য চলতে থাকলে তাদেরকে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশান বাংলাদেশের পাঁচটি গার্মেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছে। গবেষণায় যে ৭৫টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জরিপ চালানোর হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি কারখানা হলো বাংলাদেশের। তারা জানিয়েছেন যে, তাদেরকে পণ্যের মূল্য ৫ থেকে ১৫ শতাংশ কমাতে বাধ্য করা হয়েছে।
বাংলাদেশের একটি কারখানার মালিক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশানের ডিরেক্টর ইকবাল হামিদ কুরাইশি বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে অর্ডারের পরিমাণ বাড়ছে কিন্তু দাম কমিয়ে দিতে হয়েছে।
কুরাইশি বলেন, “ব্র্যান্ডগুলোর সাথে দর কষাকষির সুযোগ নেই বললেই চলে। তারা আমাদেরকে বলেছে যে, তাদের প্রস্তাবিত দামে আমরা রাজি না হলে তারা অন্য কারখানার কাছে যাবে”। তিনি বলেন কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ যদি এই শিল্পের উপর আঘাত না হানে, তাহলে হয়তো শিল্পের ক্ষতিটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে।