নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি: এভারেস্টজয়ী আখলাকুর রহমান
হোয়াটসঅ্যাপে সাড়া না পেয়ে সরাসরি কল করলাম।
কোনো সমস্যা নেই। হেলিকপ্টারের শব্দ নিশ্চয় শুনছেন? এভারেস্ট অভিযান শেষ করে আমরা মাত্র (১৬ মে) কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। একটু আগেই নেটওয়ার্ক সংযোগ পেলাম।
এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী হিসেবে ফিরছেন...
ধন্যবাদ। (হেলিকপ্টারের তুমুল শব্দ) আমি কাঠমান্ডু ফিরে আলাপ করছি, আপনি হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠিয়ে রাখতে পারেন।
....
আপনার এভারেস্ট অভিযান শুরু হয়েছিল কবে?
যুক্তরাজ্য থেকে ১১ এপ্রিল নেপাল এসেছি। বলা যায়, সেদিনই অভিযানের শুরু! কাঠমান্ডু থেকে লুকলা পৌঁছাই ১৪ এপ্রিল। সেখান থেকে ট্র্যাক করে বেজক্যাম্পে গিয়েছি ২২ এপ্রিল।
আর সামিট করলেন...
১৩ মে নেপাল সময় সকাল সাড়ে সাতটায়।
এভারেস্টচূড়ায় উঠে কী মনে হচ্ছিল...
একজন পর্বতারোহীর জন্য এ তো স্বপ্নের মতো। যার পেছনে কয়েক বছরের চেষ্টা, প্রস্তুতি ছিল। আবার পরিবার-পরিজন রেখে দীর্ঘ যাত্রায় যখন মন ভেঙে আসছিল, তখনই চূড়ায় পৌঁছাই। তাঁদের মুখ ভীষণ মনে পড়ছিল, গর্ব হচ্ছিল। অসাধারণ এক মুহূর্ত।
ফেসবুকে ছবিতে দেখলাম এভারেস্টচূড়ায় আপনার হাতে দুই দেশের পতাকা।
জি, আমার মা পতাকাটা বানিয়ে দিয়েছেন—বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের পতাকা। আমার জন্মদেশ বাংলাদেশ। আমি বড় হয়েছি যুক্তরাজ্যে। দুই দেশেরই প্রতিনিধি আমি—এটাই আমার পরিচয়। এভারেস্টচূড়ায় যখন পতাকাটা উড়িয়েছি, নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছিল।
অভিযানে কোন বিষয়টি আপনাকে বেশি ভুগিয়েছে?
এভারেস্টের মতো অভিযানে শারীরিক চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। মানসিক শক্তি ধরে রাখাও কিন্তু কম চ্যালেঞ্জের নয়। আমার জন্য এই চ্যালেঞ্জই বেশি ছিল। ঈদের দুদিন আগে ভীষণ ডিপ্রেশনে ভুগেছি। জীবনে প্রথম এমন একটা দিনে পরিবার-পরিজন ছাড়া। বাসায় সবাই কী করছে, কী খাচ্ছে, এসবই তখন ভাবছিলাম। ভাবছিলাম তারা আমাকে কতটা মিস করছে। আমার গাইড, শেরপা, সঙ্গীরা মন খারাপ দেখে অনেক বোঝাল। আমার খেতে ইচ্ছা করছিল না। তারা খাওয়াদাওয়া করতে বলল। একসময় মনে হলো আমি এখানে, এই দুর্গম তুষারসমুদ্রে কেন এসেছি, আমি কী চাই...। মনে হলো, এই অভিযান সফলভাবে শেষ হলে অনেক মানুষকে সহযোগিতা করতে পারব, অনুদান সংগ্রহ করে অনেকের পাশে দাঁড়াতে পারব। ইতিবাচক দিকগুলো নতুন করে শক্তি জোগাল আমার মনে।
এসব প্রস্তুতি তো আগে থেকেই নিতে হয়...
তা ঠিক। আমিও তো তিন–চার বছর আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছি। চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময় সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ১৫ কিলোমিটার করে দৌড়াতাম। জিমে যেতাম। মাইন্ডসেট বড় একটা ব্যাপার, তারও চর্চা করেছি।
পর্বতারোহণে আগ্রহী হলেন কখন?
পর্বতারোহণ বিষয়ে আমার আগ্রহ ছোটবেলায় তৈরি হয়েছে। একসময় ভিডিও দেখে নিজেকে পর্বতারোহীদের ভিড়ে খুঁজে পেতাম। আবার বড় হয়ে একসময় মনে হলো, আমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে। আমার সন্তান যেন আমার কাজ দেখে অনুপ্রেরণা পায়, আমার কমিউনিটি যেন গর্ববোধ করে।
প্রথম পর্বতারোহণ...
ওয়েলসের মাউন্ট স্নোডনকে আমি বলি বাড়ির কাছে পর্বত। ছোট এই পর্বত দিয়েই আমার পর্বতারোহণ জীবনের শুরু। এরপর কোথাও পর্বতারোহণে গেলে এখানেই আসি ঝালিয়ে নিতে।
এরপর তো আরও পর্বতে গেছেন...
রাশিয়ার এলব্রুস পর্বতাভিযান করেছি। আফ্রিকার তানজানিয়ায় মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো অভিযান তিন দিনে সম্পন্ন করেছি। সেটা শেষ করে চলে গিয়েছিলাম আল্পস পর্বতমালার মঁ ব্লাতে। সাত দিনের মধ্যে দুটি অভিযান সম্পন্ন করেছি। দ্বিতীয়বার এলব্রুস আরোহণ করেছি ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে। হিমালয়ের আমা দাবলামসহ বিভিন্ন পর্বতেও এসেছি।
আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন
বাংলাদেশে আমাদের বাড়ি। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৯৮২ সালে আমার জন্ম। যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা। ১৮ বছর ধরে বিমা খাতে ব্যবসা করছি।
বাংলাদেশে আসা হয়?
বাংলাদেশ তো আমার জন্মদেশ। আমরা ৭ ভাই, ৩ বোন। আমার সবচেয়ে বড় দুই বোন বাংলাদেশেই থাকেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে গিয়েছিলাম দুই সপ্তাহের জন্য। করোনার কারণে তো মাঝে দুই বছর চলে গেল। নিশ্চয় আসব। সত্যি বলতে, নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।