সীমান্ত বিবাদ মীমাংসার জন্য চীন কেন ভুটানকে ‘প্যাকেজ সমাধানের’ প্রস্তাব দিচ্ছে?

গত সপ্তাহে চীন ভুটানের পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের উপর নিজেদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু একই সাথে তারা বিবাদ মীমাংসার জন্য একটা ‘প্যাকেজ সমাধানের’ প্রস্তাব দিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, “চীনের অবস্থান সবসময় অপরিবর্তিত ও স্পষ্ট রয়েছে। চীন আর ভুটানের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিত হয়নি এবং এখানে কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, যার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের অংশ রয়েছে”।
তিনি আরও বলেন, বেইজিং একটা সমাধানের প্রস্তাব দিচ্ছে, কারণ ‘এই ইস্যুগুলোকে চীন আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক ফোরামে তুলতে চায় না এবং এগুলো সমাধানের জন্য চীন সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছে’।
আরও পড়ুনঃ ভুটান সব বিরোধপুর্ণ এলাকা নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করবে
তবে এই সমাধান প্রস্তাবের ব্যাপারে এখনও কিছু প্রকাশ করা হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৯৯৬ সালে চীন ভুটানকে ভূখণ্ড বদলের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে ধরণের কিছু একটা হবে এটা।
দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালে ভুটানের চতুর্থ রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুক ভুটানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে চীনের প্রস্তাবের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বেইজিং উত্তরের ৪৯৫ বর্গমিলোমিটারের এলাকার সাথে পশ্চিমের ২৬৯ বর্গকিলোমিটার জায়গা বদল করতে চায়’।
পশ্চিম সেক্টরের মধ্যে রয়েছে দোকলাম – যেখানে ২০১৭ সালে ভারত আর চীনের বাহিনী পরস্পরের বিরুদ্ধে ৭৩ দিন ধরে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। ভুটান সেই চুক্তি নাকচ করে দেয়।
পরের বছরও দুই দেশ আলোচনা জারি রাখে। তবে এর মধ্যে জুন মাসে চীন সবাইকে অবাক করে দিয়ে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (জিইএফ) বৈঠকে ভুটানের ত্রাশিগাং জেলার সেকটাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের জন্য অনুদান দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলে এবং দাবি করে যে, এই অভয়ারণ্যটি ‘বিতর্কিত এলাকার’ মধ্যে পড়েছে।
জিইএফ কাউন্সিল চীনের দাবি নাকচ করে দিয়েছে এবং ভুটান বলেছে যে, এই এলাকার বিষয়টি কখনও দুই দেশের সীমান্ত আলোচনার মধ্যে ওঠেনি।
ভুটান আর চীনের মধ্যে সীমান্ত আলোচনা তিনটি এলাকা নিয়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এগুলো হলো জাকারলুং ও পাসামলুং এবং পশ্চিম ভুটানের একটি জায়গা। সেকটাং এগুলোর কোনটারই অংশ নয়।
দ্য হিন্দু জানিয়েছে, পাসামলুপ এবং জাকারলুং উপত্যকাকে চীন মধ্যবর্তী অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।
ভুটান ও সিরিয়ায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ভিপি হারান হাফপোস্ট ইন্ডিয়াকে বলেন যে, বর্তমান প্রস্তাবিত প্যাকেজ সম্পর্কে তিনি অবগত নন, তবে দুই দশকের বেশি আগে চীন যে প্রস্তাব দিয়েছিল সেখানে পশ্চিম সেক্টরের জায়গার পরিবর্তে মধ্যবর্তী সেক্টরের দাবি ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিল চীন, যার মধ্যে দোকলামও রয়েছে”।
আরও পড়ুনঃ চীনা উপস্থিতি জোরদারের আশঙ্কায় ভুটানকে বাণিজ্য, কানেকটিভিটিতে প্রলুব্ধ করছে ভারত
ভারতের উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞরা চলতি মাসের শুরুর দিকে হাফপোস্টকে বলেছিল যে, ত্রাশিগাং জেলার উপর চীন যে দাবি জানিয়েছে, সেটাকে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এই অঞ্চলের কর্তৃত্ব পেলে ভারতের উপর কৌশলগত সুবিধা পাবে চীন।
ভারত এই পরিস্থিতির উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে বলে জানা গেছে।
ভিপি হারান বলেন যে, এ বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিটা প্রাসঙ্গিক কারণ দোকলামের সার্বভৌমত্বের উপর নির্ভর করছে যে, ভারত, চীন আর ভুটানের ত্রিদেশীয় সংযোগ পয়েন্টটি কোথায় হবে।
“ভারত আর চীনের বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সে চুক্তি অনুসারে ত্রিদেশীয় সংযোগ পয়েন্ট নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় দেশের সাথেও আলোচনা করতে হবে, এ ক্ষেত্রে সে দেশটি হলো ভুটান। কিন্তু এ ধরণের কোন আলোচনা এখনও হয়নি”।