আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি ভিন্ন হবে, ব্যতিক্রম হবে শুধু আফগানিস্তান

TOP NEWS-ENG-07-11-2020
জো বাইডেন

জো বাইডেনের পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন জাগছে, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি বড় ধরনের কোন পরিবর্তনটি আনতে পারেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কেন্দ্র করে এটি কোনো অস্বাভাবিক প্রশ্ন নয় কারণ আর তিনি হলেন বিশ্বের ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি’। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মার্কিন নীতিতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সেজিপিওএ নামে পরিচিত ইরান সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়া; উচ্চাভিলাষী ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের অবসান; চীনের সাথে সত্যিকারের বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করা; ফিলিস্তিনি শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন- যাতে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরাইল আর সম্প্রসারণ করবে না।

বাইডেন ও ট্রাম্প প্রধান প্রধান পররাষ্ট্রনীতিতে একে অপরের থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করার প্রেক্ষাপটে বাইডেন প্রশাসন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনবে। তারা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কবর দেবে, ইউরোপের সাথে আবার সম্পৃক্ত হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে বাইডেন প্রশাসন ইরানের প্রতি অনেক বেশি নমনীয় হবে। সেইসাথে ন্যাটো/ইউরোপ ও রাশিয়ার সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবে।

আফগানিস্তান

অবশ্য বাইডেন প্রশাসনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে আফগানিস্তানে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি অনুসরণ করে যাওয়া। বস্তুত, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রতি সোচ্চার বাইডেন। তিনি সেখানে বিশেষ বাহিনীর অল্প কিছু সদস্য রাখার পক্ষপাতী, যাদের কাজ হবে আইএসআইএস ও আল-কায়েদাকে দমন করা।

সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছে, তালেবান ও মার্কিন বাহিনী যৌথভাবে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়গাই করছে। বিশেষ করে কুনার প্রদেশে আইএসআইএসের ঘাঁটিতে তা হচ্ছে। মার্কিন সৈন্যরা বিদায় নেয়ার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে এই প্রদেশটি যাতে আইএসের হাতে না পড়ে, তা চায় দুই পক্ষই।

দোহা চুক্তির চেতনার আলোকে এটি একটি বড় ঘটনা। এই চুক্তি অনুযায়ী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আন্তর্জাতিক হামলা থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব তালেবানের। আইএসআইএসকে দমন করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় সাধনের জন্য তালেবান কেবল দায়িত্বশীল বাহিনী ও বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলছে না, সেইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টিও বিবেচনা করতে সহজ করে তুলছে।

গত বছর প্রকাশিত ‘আফগানিস্তান পেপার্সে’ দেখা যায়, জো বাইডেন সবসময়ই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য হ্রাস করার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি বরং সন্ত্রাসদমন কৌশলের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন। 

আফগানিস্তান পেপার্সে বলা হয়েছে, তালেবানকে সামরিকভাবে হারানো যাবে- এমন ধারণার প্রতি বাইডেন সবসময়ই বেশ সন্দিহান ছিলেন।

ওবামা প্রশাসন ইরাক থেকে মার্কিন প্রস্থানের কৌশল প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছিল বাইডেনকে। বাইডেন প্রত্যাহার ও সামান্য মাত্রায় সন্ত্রাসদমন কার্যক্রম বহাল রাখার পক্ষপাতী হওয়ায় চলমান কুনার অভিযান বাইডেন প্রশাসনের আমলে অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক হামলা আবারো প্রমাণ করেছে যে আইএসআইএস এখনো শক্তিশালী রয়ে গেছে এবং তারা রাজধানীতে সমন্বিত হামলা চালাতে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো তালেবানও চায় খুব বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এবং ক্ষুব্ধ তালেবান যোদ্ধাদের আকর্ষণ করতে শুরু করার আগেই আইএসআইএসকে চেপে ধরতে।

এমন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প-পরবর্তী যুগে যৌথ অভিযান সম্ভবত চালু থাকবে এবং খুব সম্ভবত বাইডেন প্রত্যাহার পরিকল্পনা পরিবর্তন করবেন না। 

তিনি সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমার দায়িত্ব হলো আমেরিকান জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা এবং আমাদের নারী ও পুরুষদেরকে ক্ষতিকর অবস্থার দিকে না ঠেলে দেয়া... প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি এ কাজই করব।

হোয়াইট হাউসে জো বাইডেন থাকলে দায়িত্বশীল প্রত্যাহার খুবই সম্ভব। আর তিনি ট্রাম্পের মতো ‘প্রতিশ্রুতি’ পূরণের কোনো চাপেও থাকবেন না। আরো বড় কথা তিনি সবেমাত্র তার মেয়াদ শুরু করবেন।

আর আফগান রাজনৈতিক এলিটদের কাছে হোয়াইট হাউসে বাইডেনের উপস্থিতি তাদের চোখ খুলে দিতে পারে। তারা এখনো তালেবানের সাথে আলোচনার অভিন্ন কাঠামো নির্ধারণ করতে পারেনি, শান্তিচুক্তি করতে পারেনি। বিশেষ করে যারা এখনো দীর্ঘ মেয়াদে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য রাখার পক্ষপাতী, তারা নতুন অবস্থা বুঝতে পারবে বলে আশা করা যায়।

তালেবান এবং মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক কাবুলের বিকল্পগুলো কমিয়ে ফেলবে, তাদের দরকষাকষির জায়গা আরো সঙ্কুচিত করে ফেলবে।