আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মে ৩০, ২০২৩

দক্ষিণ এশিয়ার সম্মিলিত মানসিকতা প্রকাশ করে দিয়েছে এক চিত্রতারকার মৃত্যু

SAM SPECIAL-ENG-25-08-2020

ভারতীয় এক চিত্রতারকার মৃত্যু নিয়ে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে তোলপাড় চলছে। সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন বলিউডে তারকা হওয়ার দৌড়ে মধ্য পর্যায়ের এক প্রতিযোগী। কিন্তু মৃত্যু তার নামটিকে মিডিয়ায় বড় করে তুলেছে। তার জীবনের প্রতিটি খুটিনাটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেগুলো বিচার করে মতামতও দেয়া হচ্ছে।

মনে হয় তার মৃত্যু একজন তারকাকে নিয়ে মানুষের কল্পনার ঢাকনাটি খুলে দিয়েছে, কিভাবে একজন তারকা জীবন যাপন করে, মানুষ কিভাবে তাদের জন্য প্রতিক্রিয়া দেখায়—এসব আরকি। এটা দেখিয়ে দিয়েছে একজন তারকার জীবনে রয়েছে নৈতিকতা বিসর্জন, লোভ, শত্রুতা, এমনকি খুন পর্যন্ত। খুবই অশোভন এই জগত, তেমন অনুকরণযোগ্যও নয়। যেকোন এলিটের জীবনও একই।

অথচ মানুষ এমন এক জগত নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে যার অংশ তারা নয়। তাহলে কেন এরকম উন্মাদনা? তাও আবার সুশান্ত কোন সুপারস্টার নয়। তাহলে তার মৃত্যুকে কেন আলাদা করে দেখা হচ্ছে? সে কি ছিলো, আর এখন কি হয়েছে?

বলিউড হলো স্বপ্নকে সুন্দর মোড়কে মুড়িয়ে এমনভাবে বিক্রি করা যেন চাকচিক্যই বাস্তব জগত। এটা সত্যি, ভুয়া নয়—এমন বিশ্বাস জন্মানো জরুরি। আর এ কারণেই সে এত ভালো করছে। জনগণের আলোচনার বিষয় হিসেবে ভারতের চলচ্চিত্র জগত সম্ভবত অন্য যে কোন খাতের তুলনায় অনেক বড়। এটা স্বস্তি দেয়, আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে, এমনকি আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নও করে। কোন সন্দেহ থাকলে সেটিকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়। আর সে এভাবেই থাকে।

এই অবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে সুশান্তের মৃত্যু। বলিউড যদি কোন কাল্পনিক জগত না হতো, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রয়োজন, তাহলে বাস্তবটি কি হতো? এটা এক গভীর সম্মিলিত অসুস্থতা যা সবাইকে প্রভাবিত করছে। যারা কিনা সেই জগতের অংশ, যাকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

বলিউড কি অন্যান্য এলিট জগতের প্রতিচ্ছবি?

বিনোদন জগত ও ক্ষমতার মধ্যে কতটা মিল তা ভেবে বিমোহিত হতে হয়। এর কারণ অনেকগুলো। দুটি জগতই নিষ্ঠুর এবং ব্যক্তিগত লাভকে ঘিরে আবর্তিত। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে, এটা হলো টাকা, আর রাজনীতির ক্ষেত্রে—ক্ষমতা। দু’টিই তাদের নিজের জন্য। কিন্তু বিনোদন জগতের ক্ষমতা টাকাও নিয়ে আসে। তাই ক্ষমতাই হলো আসল কথা।

সবাই এই খেলা খেলে এবং প্রায় সবাই নোংরা খেলা খেলে। তাই শিকারও সবাই। কিন্তু আজকের ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি আগামীকালই ধসে পড়তে পারেন। তাই সুশান্তের মতো খেলোয়াড়রা নিরাপদ নয়। তারা যেকোন দিন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে হারিয়ে যেতে পারে। 

আর অর্থলোভ কতটা ছোঁয়াচে হতে পারে সেটাও এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটা করোনাভাইরাসের চেয়েও ছোঁয়াচে। মনে হয় যারাই তার সংস্পর্শে এসেছে বা তার জীবনের অংশ ছিলো তাদের সবার মধ্যেই কিছু সন্দেহজনক বিষয় ছিলো। একে সম্ভবত একটি কথায় প্রকাশ করা যায়: ‘শকুনের আড্ডা’।

এটি আরও বেশি উপযুক্ত কারণ মৃত্যুর পরও ঝগড়া, বিদ্বেষ, হয়রানি এবং লুকোচুরি বন্ধ হয়নি। একজন আরেক জনকে দূষছে, গোপন ও সত্য ফাঁস করে দিচ্ছে, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, এবং অবশ্যই পুরনো শত্রুতার ঝাল মেটাতে পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কাহিনীর সবেমাত্র শুরু, এখনো অনেক দূর যেতে হবে। 

এই পর্বে জনগণের প্রতিক্রিয়া খুবই তাপর্যপূর্ণ। এটা ভারতীয় মিডিয়া থেকে অন্যসব বিষয়কে হটিয়ে দিয়েছে, এমনকি করোনাভাইরাসকেও কভারেজ পাওয়ার জন্য সুশান্তের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। একটি দেশ যখন মহা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখিন তখন জনগণের আগ্রহ তারচেয়েও বেশি একজন আধা-নায়কের আত্মহত্যা নিয়ে। এ জাতীয় মনযোগ বৃদ্ধির জন্য কোন জিনিসটি দায়ী?

লুকানোর জায়গা নেই

একটি কারণ হলো যে উচ্চপর্যায়ের অনৈতিকতা ও আবর্জনা বেরিয়ে আসে তা আকর্ষনীয়। এখানে এগুলোর কোন কমতি নেই। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোন গোপনীয়তাই আর লুকানো থাকছে না। মিডিয়া বা পুলিশ, সবাই এগুলো খুঁজে বের করতে চাচ্ছে এবং অনেক কিছু পাওয়াও গেছে। জনগণকে এগুলো মুগ্ধ করছে। গুরুত্বপূর্ণ মানুষের গোপন বিষয়গুলো জানতে পেরে মানুষ সেগুলো উপভোগ করছে, সেগুলো লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এটাই বাস্তব জগত, যে জগতটিকে তারা কখনো জানতে ও দেখতে পাবে না। এখন তাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই। তাদের লুকানোর কোন জায়গা নেই।

এটাই হলো সুশান্ত পর্বের সংক্ষিপ্ত বার্তা। ক্ষমতা ও অর্থের অধিকারী প্রতিটি ব্যক্তি তার নোংরা গোপনীয়তাকে লুকিয়ে রাখছে। ক্ষমতাসীন শ্রেণীর ক্ষেত্রে এ গোপন বিষয়গুলো কখনো প্রকাশ পায় না কারণ সেগুলো লুকিয়ে রাখতে বহুরকম শক্তি কাজ করে। এক্ষেত্রে হয়েছে উল্টা। তাই মানুষ বেশি বেশি করে জানছে।

বেশি জানার অধিকারটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। কিন্তু সুশান্তের আত্মহত্যা দেখিয়ে দিয়েছে মানুষের জানার আকাঙ্ক্ষা কতটা গভীর। বলিউড যেহেতু কল্পনার জগত তাই জাতীয় রাজনীতি নিয়েও জনগণ একইভাবে ভাবতে শুরু করবে না—এমনটা আশা কেউ করতেই পারে।