আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল হয়ে ওঠার কারণেই লাদাখে সঙ্ঘর্ষ

TOP NEWS-ENG-23-06-2020

প্রথম দেখায় মনে হতে পারে লাদাখে ভারত-চীনের সঙ্ঘর্ষ গতানুগতিক সীমান্ত বিবাদ থেকে সৃষ্ট সহিংসতা মাত্র। কিন্তু শিকড় রয়ে গেছে চলমান ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটের গভীরে। 

ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির চেহারাটা এমন: ভারত আদর্শিকভাবে চীনের বেল্ট অ্যাণ্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প, বিশেষ করে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) বিরোধিতা করে; ভারত একইসাথে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির দাবার ছকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’; চীনের বিপরীতে ভারত মার্কিন নীতিকে অনুসরণ করে; এবং ভারত নিজের পেশি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে এবং এ অঞ্চলে নতুন রাজনৈতিক বিভাজন তৈরির জন্য তারা সঙ্ঘাতে জড়াচ্ছে। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন নীতির উৎস হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চলমান ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’। সম্প্রতি ট্রাম্প চীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘বাণিজ্য যুদ্ধকে’ শীতল যুদ্ধে রূপান্তরের হুমকি দিয়েছেন। 

Lifts-0001-Top News-Bangla-23 June 2020-ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল হয়ে ওঠার কারণেই লাদাখে সঙ্ঘর্ষ

এই নীতির শিকড় লুকিয়ে আছে এই বিশ্বাসের মধ্যে যে, চীন বিশেষভাবে তার সংযোগ প্রকল্পগুলোর দিকে নজর দেয়ায় সামরিকভাবে জবাব দেয়ার সুযোগ তারা কম পাবে, এবং একটা ‘পেশীবহুল কৌশল’ কূটনীতি ও দর কষাকষির চেয়ে বেশ কিছুকাল ধরে বেশি টেকসই হবে, যেটার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো তাদের মিত্র দেশগুলোর পক্ষে এ অঞ্চল ও এর বাইরে চীনা প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে, বিশেষ করে নেপালের উপর চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, যেটা এর আগে এককভাবে ভারতীয় প্রভাবের অধীনে ছিল। 

তবে বাস্তবতা সম্পর্কে এই পর্যালোচনাটা সঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেপাল সম্প্রতি পার্লামেন্টে আইন পাস করেছে। এই আইন নেপাল সরকারকে দেশের মানচিত্র পরিবর্তন ও বর্তমানে ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু এলাকার উপর নিজেদের দাবি জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। পার্লামেন্টে পাস করা বিলের একটা অনুচ্ছেদ দিয়ে যদিও বাস্তব পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলা যাবে না, এর পরও এটা একটা নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে, যেমন, অনেক বেশি চীনা প্রভাবের অধীনে থাকা নেপাল এখন ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্ত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লো। এর অর্থ হলো ভারতকে এখন তিন দেশের সাথে সীমান্তে ভূখণ্ডগত বিবাদ নিয়ে চলতে হবে – দেশ তিনটি হলো চীন, পাকিস্তান ও নেপাল। 

চীনের সাথে সঙ্ঘাত উসকে দেয়ার পেছনে ভারতের নিশ্চিত উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলে চীনের কৌশলকে ব্যাহত করা। চীনের কৌশল হলো ভারতের চারপাশ দিয়ে মিত্র দেশের বলয় গড়ে তোলা এবং ভারতকে এমন একটা ভৌগলিক বাস্তবতায় ঠেলে দেয়া, যেখানে চীনের সংযোগ প্রকল্পগুলোর বিরোধিতা করা এবং এ অঞ্চলে মার্কিন পুতুল হিসেবে কাজ করার জন্য ভারতের সামনে খুব সামান্য সুযোগ খোলা থাকবে। 

আরও পড়ুনঃ আশেপাশে কেন বন্ধু নেই তা দেখতে হবে ভারতকে

ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিতভাবে চায় ভারত যাতে চীন ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং এর মাধ্যমে যাতে সামরিক দিক থেকে ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল আরও শক্তিশালী হয়। 

২৯ মে ট্রাম্প প্রশাসন ‘চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার’ যে কথা বলেছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটটা এখানে বোঝা যাবে, যে প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতসহ তাদের মিত্র দেশগুলো চীনকে ‘শাস্তি দেয়ার জন্য’ সমন্বিত নীতি গ্রহণ করেছে। 

ভারত আর চীনের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাব সত্বেও চীনের বিরুদ্ধে তিনি যে সব অভিযোগ এনেছেন, তার মধ্যে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের ‘অবৈধ দখলদারিত্ব’, যেটার কারণে এই জলসীমায় ‘নৌ পরিবহন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে গেছে’।

Lifts-0002-Top News-Bangla-23 June 2020-ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল হয়ে ওঠার কারণেই লাদাখে সঙ্ঘর্ষ

এই বক্তব্যটা কাশ্মির এবং এ অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি নিয়ে ভারতের দাবির মতো একই রকম। এই দাবির কারণেই এ অঞ্চলে ভারত তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, এবং এ কারণেই আকসাই চিনকে ভারতের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা করে ভারত চীনের বিরুদ্ধে সীমানা অতিক্রম করেছে। 

এই পদক্ষেপের সাথে এ অঞ্চলে ভারতের অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর সংযোগ রয়েছে, বিশেষ করে গালওয়ান ‘নালাহের’ উপর নির্মিত ব্রিজ নিয়ে, চীন যেটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এবং যেটার সূত্র ধরেই বর্তমান অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই ব্রিজটি হলো ফিডার রোডগুলোর নেটওয়ার্কের একটা অংশ, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শায়ক-দৌলত বেগ ওলদি রোডের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য ভারত যেগুলো নির্মাণ করছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং গত বছর এটার উদ্বোধন করেন। 

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে আশা ভারতের, তার সাথে এটা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এই অঞ্চল দিয়ে চীনের বহু বিলিয়ন ডলারের সিপিইসি চলে গেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সাথে চীনকে ভৌগলিকভাবে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে এটা একটা চাবিকাঠি। 

আরও পড়ুনঃ হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সামুদ্রিক নজরদারী বিমান মোতায়েনের বিরোধিতা, কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

গালওয়ানে ভারতের কর্মকাণ্ডের সাথে চীন এবং চীনা সংযোগ প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন নীতির সরাসরি যোগ রয়েছে। এ অঞ্চলে চীনের অবস্থানকে দুর্বল করে এবং চীনের সামরিক উপস্থিতিকে পেছনে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে ভারত আশা করছে যে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশসহ পুরো জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চলের উপর তারা তাদের দাবিকে আরও জোরালো করতে পারবে। চীনের ক্ষতি করে, ভারত এই আশা করছে যে, মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে এ অঞ্চলে তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। 

এই ধরনের চিন্তাভাবনার যদিও কোন বাস্তব ভিত্তি নেই, কিন্তু মোদি সরকার যে হিন্দুত্ববাদী ব্র্যাণ্ডের জাতীয়তাবাদ বিক্রি করছে ভোটারদের কাছে, সেখানে এটাকে বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য স্বপ্ন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। 

এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে কেন অপমানিত হওয়ার পরেও ভারত বাস্তবতার ভিত্তিতে তাদের নীতিগুলোর পুনর্যাচাই করছে না, এবং সেখানকার জনগনের মধ্যে এই কাল্পনিক বিশ্বাস রয়েছে যে, চীনের বিপরীতে ভারতের সামরিক সক্ষমতা রয়েছে এবং সে জন্যেই তারা ‘প্রতিশোধ নেয়ার’ জন্য সোরগোল শুরু করেছে।