আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

পেশোয়ারে রাজ কাপুর-দিলীপ কুমার যাদুঘর প্রকল্প: বলিউড সংযোগকে তুলে ধরছে পাকিস্তান

screenshot-2020-11-07-073142
পাকিস্তানের পেশোয়ারে দিলীপ কুমারের পূর্ব পুরুষদের বাড়ি

পাকিস্তানের পেশোয়ারে বলিউডের জনপ্রিয় তারকা অভিনেতা রাজ কাপুর ও দিলীপ কুমারের পূর্বপুরুষদের যে বাড়ি রয়েছে, সেগুলো মেরামতের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির সংরক্ষণবিদেরা। ভারতের সাথে মধ্য এশিয়ার সাংস্কৃতির বন্ধনকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 

দুই চলচ্চিত্র তারকার পূর্বপুরুষদের এই বাড়িগুলো বিংশ শতকের শুরুর দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরনো শহরের একটি সড়কে কয়েক মিটার দূরে বাড়ি দুটি দাঁড়িয়ে আছে। তবে এগুলোর মেরামত করাটা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। 

২০১৪ সালে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণার পর এগুলো সংরক্ষণের আগ্রহ বেড়েছে। খাইবার-পাখতুনখাওয়া – যে রাজ্যের মধ্যে পেশোয়ার পড়েছে – সেই রাজ্য সরকার বাড়ি দুটো কিনে সেগুলোকে যাদুঘরে রূপান্তরের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। 

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পুরাতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগের পরিচালক আব্দুল সামাদ বলেন, “চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পেশোয়ারের একটা বিশেষ জায়গা রয়েছে। তবে গত কয়েক দশকে জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণে নগরীর প্রকৌশলগত ও পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহ্যগুলোর ক্ষতি হয়েছে”।

c-2-1
খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের প্রত্মতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগের পরিচালক আব্দুল সামাদ

কাপুর আর কুমারের জন্ম পেশোয়ারে, ১৯২০-এর দশকে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার পর পাকিস্তানের জন্ম হয়। 

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দুই অভিনেতাই জনপ্রিয়তা পান। কাপুর তার উচ্ছ্বল ব্যক্তিত্বের কারণে চলচ্চিত্র প্রেমিদের কাছে ‘দ্য শো-ম্যান’ উপাধি পান। অন্যদিকে কুমারকে বলা হয় ‘ট্রাজেডি কিং’, কারণ পর্দায় দুঃখের চরিত্রগুলো তিনি দারুণভাবে তুলে ধরতে পারতেন।

কাপুর ১৯৮৮ সালে নয়াদিল্লীতে মারা যান। ৯৭ বছর বয়সী কুমার এখনও জীবিত আছেন এবং তার স্ত্রী সাবেক বলিউড অভিনেত্রী সায়রা বানুর সাথে মুম্বাইয়ে বাস করছেন তিনি। 

তবে পেশোয়ারের সাথে বলিউডের যোগাযোগ এই দুজনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রূপালি পর্দার সুপারস্টার ‘বলিউডের বাদশাহ’খ্যাত শাহরুখ খানের বাবাও ছিলেন পেশোয়ারের মানুষ।

স্থানীয় সরকার কাপুর আর কুমারের পূর্বপুরুষের বাড়িটি সংরক্ষণের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি আরও বড় ‘পেশোয়ার রিভাইভাল প্ল্যানের’ একটা অংশ। সামাদ জানান, এই পরিকল্পনার অধীনে শহরের প্রায় ১৮০০ বাড়ি মেরামত করা হবে, যেগুলো সবগুলোর বয়সই শতবর্ষের উপরে। সাংস্কৃতিক গন্তব্য হিসেবে পেশোয়ারের যে সুনাম ছিল, সেটি পুনরুদ্ধারের জন্যেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, “দেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র যদিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু বলিউডের জন্য পাকিস্তানীদের ভালবাসা এখনও রয়ে গেছে। তাছাড়া ভারতীয় অভিনেতাদের বাড়িগুলো কেনার অর্থটাও আসছে রাষ্ট্র থেকেই। তাই, এক হিসেবে পাকিস্তানী সরকার তাদের উত্তরাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর এই প্রচেষ্টাকে সমর্থনই করছে”।

c-3-1
পেশোয়ারের পুরনো দেয়াল নগরীর একটি সড়ক

কুমারের পূর্বপুরুষের বাড়িটি প্রাসাদের মতো, কয়েকতলা উঁচু বাংলো। চুনাপাথর আর সবুজ রঙে রাঙানো ব্যালকনি সজ্জিত এই বাড়িটি এখন গুদামঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে কাপুড়ের পুরনো বাড়িটি নির্মান করেছিলেন তার দাদা দেওয়ান বাশেবারনাথ। ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সাল সময়কালে নির্মিত হয় এটা। তার ছিলে ঋষি আর রনধির ১৯৯০ সালে এটা দেখে যান। পেশোয়ারের কালচারাল হেরিটেজ কাউন্সিল সেটাই বলছে। 

দেশভাগের আগে কাপুর আর কুমার পরিবার যখন ভারতে চলে যান, তখন দুটো বাড়িই বিক্রি করে দেয়া হয়। 

বলিউডের পুরনো ও বর্তমানের তারকাদের বাড়িগুলো প্রায়ই পর্যটনের জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে ওঠে। মুম্বাইয়ে শাহরুখ খানের বাসভবনকে প্রায়ই ভারতের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় ঠিকানা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

তবে চলচ্চিত্রকার, ইতিহাসবিদ ও লেখক অমিত খান্না কাপুর ও কুমারের পুরনো বাড়িকে যাদুঘরে রূপান্তেরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

তিনি বলেন, “বলিউড তারকারদেরকে সারা বিশ্বেই উদযাপন করা হয়। এর মধ্যে ব্রিটেনের মাদাম তুষোর যাদুঘরও রয়েছে… সেখানে এটা মহান কোন বিষয় হবে না”। তিনি আরও বলেন, যাদুঘরের জন্য পেশোয়ারের চেয়ে লাহোর অনেক উপযুক্ত জায়গা। 

c-4-1
পেশোয়ারের একটি সড়কের দৃশ্য

“বহু ভারতীয় অভিনেতা – যেমন কিংবদন্তী অভিনেতা প্রাণ ও কামিনি কুশাল এবং দেওয়ান সরদার লালের মতো প্রভাবশালী প্রযোজক ও পরিচালকদের শিকড় রয়েছে লাহোরে। সে ক্ষেত্রে বলিউডের সাথে যোগাযোগ তুলে ধরার ক্ষেত্রে লাহোর অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে”।

তবে, ইকবাল কাসিমের মতো সিনেমা-প্রেমীরা বলছেন, পেশোয়ারের এই সংস্কার প্রকল্পের দিকে তারা তাকিয়ে আছেন। তাদের বিশ্বাস পুরো এশিয়াতেই বলিউডের ভক্তদের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি করবে এটা। 

পুরনো দিল্লীর ৬৮ বছর বয়সী এই মশলা ব্যবসায়ী বলেন, “পেশোয়ারে আমার অনেক আত্মীয় রয়েছে। পরেরবার সেখানে গেলে অবশ্যই আমি এই বাড়িগুলো দেখতে যাবো”।

“তাদের দুজনেরই ছবি দেখে বড় হয়েছি আমি। তাদের পূর্বপুরুষের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেলে সেটা হবে আমার কাছে তীর্থ দর্শনের মতো”।