আমরা লাইভে English সোমবার, জুন ০৫, ২০২৩

কোভিড-১৯ এর মধ্যে পঙ্গপালের হামলায় পাকিস্তান, ভারতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি

ECONOMY-ENG-30-05-2020

করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে যেখানে লড়াই এখনও চলছে, সেখানে পাকিস্তান আর ভারতের উপর আরেকটি কঠিন সঙ্কট নেমে এসেছে, যেটা দেশ দুটির খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। 

পঙ্গপালের ঝাঁক দুই দেশেই কৃষি জমিতে হামলা চালিয়ে ফসল ধ্বংস করছে, যেটা এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ নিয়ে আসতে পারে। 

পাকিস্তানে চারটি প্রদেশের ৬০টির বেশি জেলায় বিপুল পরিমাণ শস্য এরই মধ্যে গিলে ফেলেছে পঙ্গপাল। 

আরও পড়ুনঃ বিমানবন্দরে পরিষেবা উন্নত করতে আউটসোর্সের পরিকল্পনা পাকিস্তান সরকারের

পঙ্গপালের ঝাঁক প্রতিবেশী ইরান থেকে বালুচিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এই পতঙ্গগুলো মূলত মরুভূমি থেকে এসেছে এবং গাছের বাকল থেকে শুরু করে বীজ, ফুল সবকিছু তারা খেয়ে ফেলে এবং দিনে ৯৩.২ মাইল পর্যন্ত গতিতে এরা যাতায়াত করতে পারে। 

ভারতে পঙ্গপালের ঝাঁক উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের কৃষিক্ষেতগুলোতে হামলা করছে এবং মওসুমি শস্য ধ্বংস করে ফেলছে। 

ভারতের রাজধানীর দিকে চলেছে পঙ্গপালের ঝাঁক

রাজস্থান, গুজরাট, ও মহারাষ্ট্রে ফসল ধ্বংস করার পর পঙ্গপালের ঝাঁক এখন দেশের রাজধানী দিল্লীর দিকে ছুটছে। 

ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের আঞ্চলিক ফোরকাস্টিং সেন্টারের প্রধান কুলদিপ শ্রীবাস্তব আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন, “আগামী দুই দিন বাতাসের গতি দিল্লীর দিকে যাওয়ার পক্ষে উপযোগী। সে কারণে, এটা পঙ্গপালদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাতাসের গতি দিক বদলাতে পারে, ফলে শহর এলাকায় পঙ্গপালের প্রভাব কম হতে পারে”।

ন্যাশনাল হর্টিকালচার রিসার্চ টিম সকালে (ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত) যে সময়টাতে পঙ্গপাল নিষ্ক্রিয় থাকে, সে সময়টাতে রাসায়নিক প্রয়োগ করছে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন যে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। 

পঙ্গপাল মোকাবেলায় পাকিস্তানকে সাহায্য করছে তুরস্ক

পঙ্গপালের বিস্তার ঠেকাতে কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়নে পাকিস্তানকে সহায়তা করছে তুরস্ক। 

পঙ্গপাল মোকাবেলার জন্য আঙ্কারা একটি বিশেষভাবে তৈরি পাইপার ব্রেভ স্প্রে বিমান এবং বিমানের চার ক্রুকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীকে দিয়েছে।

সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হতে না পেরে কৃষকরা প্রথাগত উপায়ে পঙ্গপাল থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না। 

পাঞ্জাব ও বালুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা এই পতঙ্গকে দূরে রাখতে ড্রাম পেটাচ্ছে। 

অন্যান্য এলাকায় ধোঁয়া ছড়িয়ে পঙ্গপালের জন্য অক্সিজেনের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন যে, এই ধরনের প্রচেষ্টা পঙ্গপাল দমনে খুব সামান্যই প্রভাব ফেলবে। 

পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে পরস্পর যোগাযোগ রাখছে ভারত, পাকিস্তান, ইরান

১৯৯৩ সালে একই ধরনের পঙ্গপালের আক্রমণে মহারাষ্ট্রের অমরাবতী, ওয়ারধা, এবং নাগপুরের জেলাগুলোতে সব শস্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। 

পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাভেদ হুমায়ুন অবশ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। 

তিনি বলেন, “সন্দেহ নেই যে, এটা (পঙ্গপালের হামলা) একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, এবং আমরা এটাকে গুরুত্বের সাথে দেখছি। তবে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বললে, আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি গম, চাল ও অন্যান্য সবজি আমাদের মজুদ রয়েছে”।

আরও পড়ুনঃ কোভিড-১৯: পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা

তিনি বলেন, “অন্তত নিকট ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার কোন সঙ্কটে আমরা পড়বো না”।

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার ন্যাশনাল লোকাস্ট কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করেছে, যাতে এই পতঙ্গের বিস্তার পর্যবেক্ষণ এবং তাদেরকে দমন করা যায়। 

আনাদোলু এজেন্সির সাথে আলাপকালে পাকিস্তান সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন যে, পাকিস্তান, ইরান ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরস্পরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, এবং প্রতিদিনই সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করছেন।