আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

মালয়েশিয়ার আলুর বাজারে বাংলাদেশের ‘ডায়মন্ড’

269275_n1

সম্প্রতি কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক উৎপাদিত আলু মালয়েশিয়াতে রপ্তানি শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ন্যানো গ্রুপ ও বিএডিসি’র মধ্যে আলু উৎপাদন ও রপ্তানি বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বিএডিসি এ পর্যন্ত ৪টি কনটেইনারের মাধ্যমে মোট একশত এগার মেট্টিক টন ডায়মন্ড জাতের আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেছে। মালয়েশিয়ার আমদানিকারক কোম্পানী মাইডিন মালয়েশিয়া, চিন হুয়াত ট্রেডিং ও টেনবিলি গ্রুপ এ আলু আমদানি করে। হাই কমিশন জানিয়েছে, বিএডিসি’র ইতিহাসে এটাই সর্বপ্রথম আলু রপ্তানি। রপ্তানিকৃত এ আলু বগুড়া, পঞ্চগড় ও সিরাজগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। বিএডিসি’র মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ চাষ বা কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে ডায়মন্ড জাতের উন্নতমানের এ আলু উৎপাদিত হয়েছে।

মালয়েশিয়া প্রতিবছর প্রায় একশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আলু আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আলু আমদানি করে চীন থেকে।

তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া মালয়েশিয়ার আলুর বাজারে বড় সরবরাহক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশও দেশটিতে আলু পাঠায়। অনেক দিন ধরে ঢাকা চাইছে দেশটির আলুর বাজারে পোক্তভাবে ঢুকতে। কিন্তু নানা কারণে সেটি হয়ে ওঠেনি।

বিএডিসি উৎপাদিত মানসম্পন্ন আলু ও রপ্তানি বিষয়ক চুক্তি সেই আকাঙ্খা পূরণের পথে বাংলাদেশের এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে। মান এবং রপ্তানীর ধারাবাহিকতা রক্ষার তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি মান এবং রপ্তানীর ধারা বজায় রাখা সম্ভব হয় তবে বড় রপ্তানীকারকদের টেক্কা দিয়ে ওই বাজারে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করারা সময়ের  ব্যাপার মাত্র।

হাই কমিশন বলছে, বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মালয়েশিয়াতে মোট ৯.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আলু রপ্তানি করে। মালয়েশিয়ায় আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০১৯ সাল ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আলু রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ পটেটো এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া সফর করে। প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাণিজ্যিক উইং মালয়েশিয়ার প্রধান প্রধান আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভায় মিলিত হয় এবং আমদানিকারকদের চাহিদা মোতাবেক উৎকৃষ্ট মানের আলু সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়। এর ফলে মালয়েশিয়াতে আলু রপ্তানি পূর্ববর্তী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।

মালয়েশিয়াতে আলুর পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে) মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। কৃষিপণ্যের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের বাঁধাকপি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিপণ্যের সাথে সাথে অন্যান্য প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে বাংলাাদেশ হাইকমিশনের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশি কূটনীতিক তথা হাই কমিশন মনে করেন-

আলু রপ্তানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।