কোভিড-১৯-এর কারণে ভুটানের কৃষি ও বন নীতি বদলে যাচ্ছে

কোভিড-১৯ এর কারণে ভুটানিরা শুধু বাড়ির পেছনে সবজি চাষই শুরু করেনি, বরং এটা কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের নীতিতে কিছু পরিবর্তনও আনতে পারে। এমনকি এটা খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভুটানের সক্ষমতাও বাড়িয়ে দিতে পারে।
জনগণকে কৃষিতে নিয়োজিত করার কর্তৃত্ব যদিও মন্ত্রণালয়ের নেই, তবে মন্ত্রী ইয়েশি পেঞ্জোর বলেছেন যে, ভুটান মার্কেটিং কৌশল বদলাতে পারে মহামারীর কারণে কৃষির প্রতি যে আগ্রহ বাড়ছে, সেটাকে ভবিষ্যতেও টেকসইভাবে ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারে।
তিনি বলেন যে, দেশের কৃষিপণ্য মূলত ছিল সরবরাহ-ভিত্তিক। মানুষ তাদের ছোট খামারগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং এরপর উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য কম দামে বিক্রি করে। “এই কৌশলের সমস্যা হলো চাষিরা এখানে ক্রেতাদের দয়ার উপর নির্ভরশীল, যাদের বাজার দরের উপরে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে; সে কারণে মানুষ কৃষিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে”।
আরও পড়ুনঃ জ্বালানি ও দরকারি জিনিসের মজুদ শুরু করেছে ভুটান
মন্ত্রণালয় চাহিদা-ভিত্তিক উৎপাদনের প্রস্তাব করতে চায়, যেখানে বাজারে চাহিদা রয়েছে – এমন কৃষিপণ্য উৎপাদন করবে চাষিরা এবং মূল্যও তারা ভালো পাবে। “কোভিড-১৯ আমাদেরকে শিখিয়েছে যে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা কতটা ভঙ্গুর, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আমাদেরকে শিখিয়েছে যে, আমাদের পণ্যের জন্য বাজারের গুরুত্বটা কত বেশি”।
মন্ত্রী বলেন, ভুটানের উচিত মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে পণ্যের বৈচিত্র বাড়ানো যাতে ভুটানি পণ্যের জন্য একটা বড় বাজার তৈরি হয়।
তিনি বলেন যে, চিনির মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে ভুটানের আলু শুধু সবজি হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। একইভাবে দেশের ভু্ট্টার যে সব জাত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সামান্য কিছু খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং কর্নফ্লেক্স তৈরিতে সেটা ব্যবহার করা যায় না, আন্তর্জাতিক বাজারে যেটার অনেক চাহিদা রয়েছে। “আমাদেরকে যদি আমাদের কৃষি পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার আকর্ষণ করতে হয়, তাহলে আমাদের পণ্যের ব্র্যাণ্ডিং ও প্যাকেজিং করতে হবে, এবং আমাদের উচ্চমানের বীজের প্রয়োজন হবে”।
মন্ত্রী বলেন যে, মূল্য চেইন প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং যথাযথ বাজারজাতকরণের কৌশল গ্রহণ করে সরবরাহ-উপযোগী উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফরকালে মন্ত্রী বলেন যে, স্থানীয় সরকারগুলো উৎপাদিত কৃষিপণ্যের জন্য বাজার সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মহামারীর কারণে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে গেছে।
উৎপাদন সক্ষমতা, বাজার চাহিদা এবং ভোক্তার গ্রহণের মাত্রা বিবেচনা করে কাঁচা মরিচ, টমেটো, বেগুন, লেটুস, বাধাকপি এবং ফুলকপি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে আরবান এগ্রিকালচারাল ইনিশিয়েটিভ। এবং এ জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ১১.৪ মিলিয়ন ন্যু।
আরও পড়ুনঃ একবিংশ শতকের অর্থনৈতিক রোডম্যাপ চালু করেছে ভুটান
সবজির উৎপাদন যেহেতু মওসুম-ভিত্তিক, সে কারণে সবজির মওসুমে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়, আবার শীতের মওসুমে আমদানি করতে হয়। গত বছর ছয় মাসের মধ্যে ভুটান ১০,৪৫৫ মেট্রিকটন টাটকা সবজি আমদানি করেছিল।
বাজারের ভারসাম্যহীনতা এড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয় একই সাথে শহর এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ, শুকানোর সুবিধা, গ্রিনহাউজ, সমন্বিত ওয়্যারহাউজ, উন্মুক্ত ওয়্যারহাউজ, এবং বাজার শেডের সুবিধা দেয়ার জন্য কাজ করছে।
স্থানীয় সরকারের নেতারা মানুষকে গ্রামে ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গ্রামীন এলাকাতেও খামার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে মন্ত্রণালয়।