আমরা লাইভে English শনিবার, এপ্রিল ০১, ২০২৩

প্লাস্টিক দূষণে টানা তৃতীয় বছরের মতো শীর্ষে কোকাকোলা, পেপসি ও নেসলে

1766
স্কটল্যান্ডের একটি সমুদ্র সৈকতে পড়ে আছে কোকাকোলার প্লাস্টিকের বোতল। কোম্পানিটি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে সরে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ছবি: উইল রোজ/ গ্রিনপিস

প্লাস্টিক ব্যবহার পরিত্যাগের জন্য কাজ করে চলা বৈশ্বিক পরিবেশবাদীদের জোট- ব্রেক ফ্রি ফরম প্লাস্টিক’ তাদের বার্ষিক নিরীক্ষার ভিত্তিতে তালিকাটি প্রস্তুত করেছে। সেখানে শীর্ষ দূষণকারী হিসেবে এবছরও এক নম্বর স্থান দখল করেছে কোকাকোলা। 

তারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পানীয় উৎপাদক কোম্পানি। কিন্তু, পণ্য বিপণনের মোড়ক ও ধারকে প্লাস্টিকের ব্যবহার মোটেও কমায়নি কোকাকোলা, পেপসি ও নেসলে। এই লক্ষ্যে তাদের অগ্রগতি একেবারেই শূন্য। ফলে চলতি বছরেও টানা তৃতীয়বারের মতো সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টিকারী কোম্পানির তালিকায় নাম উঠেছে তাদের। 

প্লাস্টিক ব্যবহার পরিত্যাগের জন্য কাজ করে চলা বৈশ্বিক পরিবেশবাদীদের জোট- ব্রেক ফ্রি ফরম প্লাস্টিক' তাদের বার্ষিক নিরীক্ষার ভিত্তিতে তালিকাটি প্রস্তুত করেছে। সেখানে শীর্ষ দূষণকারী হিসেবে এবছরও এক নম্বর স্থান দখল করেছে কোকাকোলা। 

প্রায় ৫৫টি দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে এসব কোম্পানির পণ্য প্রভাবকে এক জরিপের আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে ৫১টি দেশের সমুদ্র সৈকত, নদীর তটরেখা, উদ্যান এবং অন্যান্য স্থানে ছরিয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় মিলেছে কোমল পানীয়টির প্লাস্টিকের বোতল।

এমনকি গত বছরের চাইতেও বেড়েছে তাদের সৃষ্ট দূষণ। ২০১৯ সালে মোট ৫১টি দেশে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ৩৭টি দেশে কোকাকোলার প্লাস্টিকের বোতল ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে বলে জানানো হয়। 

কোকাকোলার জনপ্রিয়তাই পানীয় বাজারে তাদের শীর্ষে থাকার কারণ। দূষণেও প্রভাব ফেলেছে সেটাই। তাইতো দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা পেপসিকো এবং নেসলের সম্মিলিত দূষণের চাইতেও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করে চলেছে আটলান্টা ভিত্তিক কোম্পানিটি।  

জরিপের সময় বর্জ্যের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে কোকাকোলা ব্র্যান্ডের চিহ্ন স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায় ১৩ হাজার ৮৩৪টি প্লাস্টিক খণ্ডে। পেপসিকো এবং নেসলের ক্ষেত্রে যা যথাক্রমে; ৫,১৫৫ ও ৮৬৩৩টি।  

এবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং তারা বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য চিহ্নিতকরণে সাহায্য করেন। তারা মোট ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৪ টুকরো প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে ৬৩ শতাংশের গায়েই কোনো না কোনো বড় ভোক্তাপন্য উৎপাদক ব্রান্ডের সুস্পষ্ট চিহ্ন ছিল। 

ব্র্যান্ড চিহ্নিতকরণের উপর জোর দেওয়া হয়- কারণ এর সাহায্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কোম্পানির উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালান পরিবেশবাদীরা। 

কিন্তু, পুঁজিবাদী তাড়নায় পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে মাথা ঘামানো অন্তত বড় ব্র্যান্ডগুলোর স্বভাব নয়। চলতি বছরের শুরুতেই কোকোকোলা প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার পরিত্যাগ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। কোম্পানিটির যুক্তি ছিল, তাদের ভোক্তারা এমন বোতল পছন্দ করেন। 

ওই ঘোষণায় পরিবেশবাদীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কোম্পানিটি।

এই অবস্থায় গত মার্চে অলাভজনক সংস্থা টিয়ারফান্ড জানায়, কোকাকোলা, পেপসিকো, নেসলে এবং ইউনিলিভার ছয়টি উন্নয়নশীল দেশে পাওয়া ৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টির জন্য দায়ী।  

ব্রেক ফ্রি ফরম প্লাস্টিকের বৈশ্বিক প্রচারণা সমন্বয়কারী ইমা প্রিস্টল্যান্ড বলেন, ''বিশ্বের সেরা (প্লাস্টিক) দূষণকারীরা প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে প্রচণ্ড কাজ করার দাবি করে থাকে। অথচ, কাজের বেলায় তারা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।'' 

প্রিস্টল্যান্ড জানান, বিশ্বব্যাপী যত্রতত্র প্লাস্টিকের আগ্রাসন বন্ধ করতে হলে, সবার আগে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি পুনঃব্যবহার কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। 

'সেরা দূষণকারী হওয়ায় কোকাকোলা, পেপসিকো এবং নেসলে-কে এই সঙ্কট সমাধানে নেতৃত্ব দিতে হবে। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় সকল সামর্থ্য আছে। শুধু ইচ্ছে শক্তি কাজে লাগালেই তারা পণ্য বাজারজাতকরনে বিকল্প উপাদান ব্যবহার করতে পারবে,' তিনি বলছিলেন। 

সবচেয়ে ভয়ংকর বাপার হচ্ছে, ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর যত প্লাস্টিক উৎপন্ন হয় তার ৯১ শতাংশ আর পুনঃব্যবহার হয় না। বরং তা বর্জ্য হিসেবে পরিবেশে জমা হয়। অনেক সময় তা নিচু জমি ভরাটের কাজেও ব্যবহার করা হয়। 

প্লাস্টিকের এই উপস্থিতি মাটির উর্বরতা হ্রাস করে, পানি শোষণ ক্ষমতা কমায়। আবার প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম ক্ষয়ে যাওয়া কণা পানি ও বাতাসের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য চক্রেও প্রবেশ করছে।