ড্রিংকসের বোতল থেকে তামাকের প্যাকেট, প্লাস্টিক দুষণের বড় ক্ষেত্র গঙ্গা ও মেকং

থাইল্যাণ্ডে মেকং নদীর একটি উপনদীর কাছে উন্মুক্ত মাঠে মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি বা বাতাসে সেখানকার বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে মেকং নদীতে প্লাস্টিক দুষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলতে যাচ্ছে।
এদিকে, ভারতের গঙ্গা নদীর উপকূল বরাবর তামাক পাতার প্যাকেট প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে আছে, যেগুলো সংগ্রহ করে সরিয়ে ফেলাটা খুবই কঠিন।
প্লাস্টিক দুষণের উৎস খোঁজার জন্য জাতিসংঘের একটি অনুসন্ধানে এশিয়ার দুষণের প্রধান এই কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করেছে। গবেষকরা বলেছেন, এই সব দুষণ বন্ধ করার জন্য শুধু কিছু প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, বরং প্লাস্টিক দুষণের উৎসগুলো বন্ধের জন্য নীতিও গ্রহণ করতে হবে।
জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রগ্রামের (ইউএনইপি) রাসায়নিক, বর্জ্য ও বাতাসের মান বিষয়ক আঞ্চলিক সমন্বয়ক মিস কাকুকো নাগাতানি-ইয়োশিদা বলেছেন, “আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত প্লাস্টিক দুষণের প্রকৃতির সাথে আমাদের এখানকার চিত্র অনেকটাই আলাদা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ভারতে নৌ সীমায় প্লাস্টিক দুষণের বিষয়ে জাপানের অর্থায়নে একটি গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসের বাইরেও কৃষি, ফিশারিজ, নির্মাণ ও জাহাজ পরিবহনের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক দুষণের ধরণ সব জায়গায় আলাদা এবং এগুলোর জন্য স্থানীয়ভিত্তিক সমাধান প্রয়োজন”।
ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা, সরেজমিন জরিপ, বর্জ্য পরিদর্শন, এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক সার্ভেয়িং মেশিনের প্রাপ্ত ফলাফল মিলিয়ে গবেষকরা নয়টি জায়গার প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যাণ্ড, ভিয়েতনাম ও ভারত। স্থানীয় বিভিন্ন কমিউনিটিও মোবাইলে বর্জ্য ফেলার বিভিন্ন জায়গার তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে।
জাতিসংঘের এই গবেষণায় সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দুষণের মাত্রার দিক থেকে যে সব স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে থাইল্যাণ্ডের মুন নদী, যেটা মেকং নদীতে গিয়ে পড়েছে। পানির কাছাকাছি অবস্থিত বস্তি বা ছোট শহর – যেখানে বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো আরেকটি সমস্যা তৈরি করেছে। নদীতে বয়ে যাওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য অনেক সময় বন্দরগুলোতে গিয়ে জমা হয়।
ভারতের মুম্বাইয়ে যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়, এর অর্ধেকই হলো প্লাস্টিকের বোতলের ঢাকনা। আগ্রায় তাজমহলের কাছে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৬২ শতাংশই হলো পলিথিন। ভিয়েনতিয়েনে প্লাস্টিক বর্জের ৫৬ শতাংশ হলো বিভিন্ন পানিয়ের বোতলের ঢাকনা, মাছ ধরার জাল, এবং উচ্চ ঘনত্বের পলিথিনে তৈরি রেইনকোট।
মেকং আর গঙ্গাতে ক্ষুদ্র আকারের প্লাস্টিকও রয়েছে প্রচুর। এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিকগুলো আসছে বিভিন্ন পণ্য থেকে, এর মধ্যে বিউটি ক্রিমের উপরের ফয়েল পেপারও রয়েছে। ভিয়েতনামের কান থো শহরেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
কিন্তু ৮০ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎসই চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। গবেষকরা বলেছেন, বিভিন্ন ধরণের পণ্যের একটা ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা দরকার যেগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়।
তারা আরও বলেছেন যে, সরকারকেও তাদের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শহরগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে উন্নত করতে হবে, এবং নদী ও নালার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বর্জ্য সংগ্রহের নেটওয়ার্ককে আরও সম্প্রসারণ করতে হবে।