আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, জুন ০৬, ২০২৩

ফিরে দেখা ঢাকার মৃতপ্রায় শিল্প দৃশ্য

পপ আইকন গুরু আযম খান

চারদিকে রঙের ছড়াছড়ি। দেয়ালগুলো চটকদার পেইন্টিং আর কৃত্রিম শিল্পকর্ম দিয়ে ভর্তি। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘লাস্ট সাপারও’ আছে, কিন্তু চরিত্রগুলো স্থানীয় শিল্পীদের পরিচিত চেহারা দিয়ে আঁকা। দেয়ালে ওণ্ডার উম্যান আকাশে গুলি ছুঁড়ছে, সুপারম্যান দাঁড়িয়ে আছে, উভয়ের চেহারায় এক শিল্পী দম্পতির মুখ। দেয়াল, সিলিং আর পিলার – এমনকি মেঝেতেও বাংলাদেশের মৃতপ্রায় রিকশা আর্ট আর সিনেমা প্রচারণা পেইন্টিংয়ের এই প্রদর্শনী চলছে। 

প্রদর্শনীর নাম রংবাজ। শিল্পীদের গ্রুপ বৃত্তের সাম্প্রতিক প্রদর্শনী এটা। প্রদর্শনীটি হয়েছে ঢাকার গ্রিন রোর্ডে বৃত্তের শিল্প কেন্দ্রে। সমসাময়িক শহুরে শিল্পকলার প্রতিনিধিত্ব করছে এই প্রদর্শনী, বাণিজ্যিক এবং পরিশীলিত সব ধারারই মিশ্রন এখানে। 

নীচে জনগণকে দেখেছেন ট্রাম্প ও অন্যান্য বিশ্বনেতা

শিল্পী তাইয়েবা বেগম লিপি ব্যাখ্যা করে বললেন, “এই বিশেষ প্রদর্শনীতে একটা বিকল্প শিল্প চর্চার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। ‘মূলধারার’ শিল্পী ছাড়াও এখানে আছেন চলচ্চিত্র প্রচারণা পেইন্টার মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু, রিকশা পেইন্টার তপন দাস। আমরা মেধাবিদের তুলে এনেছি এবং মৃতপ্রায় এই বাণিজ্যিক শিল্পের প্রদর্শনী ও সেগুলোর প্রচারের চেষ্টা করছি। 

এই প্রচেষ্টায় আরও যে সব শিল্পী তাদের রং তুলি নিয়ে যুক্ত হয়েছেন, তারা হলেন মাহবুবুর রহমান, তাইয়েবা বেগম লিপি, আমিনুল ইসলাম আশিক, লুতফুন নাহার, শিমুল দত্ত, শিমুল সাহা এবং ইয়াসমিন জাহান নুপুর।

রংবাজ ছবি থেকে নেয়া

বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শনীর ব্যাপারে একটা বক্তব্যও এখানে রয়েছে, যেটা সিলিংয়ে দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতারা উপর থেকে নিচে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সম্ভবত তারা ভাবছেন যে, ক্ষমতার রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা বিশ্বের সবার উপরে অবস্থান করছেন। 

চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু ঠিক রেখে একটা আন্তর্জাতিক মাত্রা যোগ করা হয়েছে এখানে। মেরেলিন মনরোকে দেখা গেলো কড়া হলুদ পোষাকে যেখানে তার আইকনিক পোজে স্কার্ট নিচের দিকে টেনে রেখেছেন তিনি। বাংলাদেশের পপ আইডল গুরু আজম খানকে দেখা গেলো একটি কমলা আর হলুদের ছবিতে। পাশেই বিটলস আর মাইকেল জ্যাকসনের ছবি। 

মেরেলিন মনরো

রংবাজ প্রদর্শনীতে রংবাজ চলচ্চিত্রটিরও জায়গা হয়েছে। রাজ্জাকের হাতে হুইস্কির বোতল। গোলাপি সুন্দরী কবরী তার চমৎকার হাসি মুখে, উদ্বিগ্ন রোজি সামাদসহ অন্যরা – ওই প্রজন্মের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য কিছুটা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেবে। 

প্রদর্শনীর ক্ষণকালীন বৈশিষ্ট্যটা মজার। কারণ ম্যুরালগুলো দেয়ালে আঁকা হয়েছে এবং পরবর্তী প্রদর্শনীর সময় সেগুলো তুলে ফেলা হবে। 

লাস্ট সাপার

দর্শনার্থী যারা প্রদর্শনীর শিল্পের কোন নমুনা নিয়ে যেতে চান, তারা প্রদর্শনীর কিছু উপহার সামগ্রী কিনে নিতে পারেন। রিক্সার ডিজাইন আঁকা কিছু চায়ের পাত্র রয়েছে। বা একটি ফ্রাইং প্যান রয়েছে, যেটাতে একজন ফিল্ম স্টারের চেহারা আঁকা, অথবা একটা টিন বক্স, যেটাতে অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক ঘোড়ার একটি ছবি এবং এ ধরনের আরও কিছু। শহরবাসীদেরকে শিল্পের কোলাজের একটা তৃপ্তি দেয়ার জন্য কল্পনা আর মজার একটা ভালো মিশেল ঘটেছে এখানে।