আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, জুন ০৬, ২০২৩

দ্বৈত হুমকির মুখে পাকিস্তানের বহু শতকের পুরনো নৌকা গ্রাম

img-20200912-145226-1

মধ্যদিনের প্রখর রোদের মধ্যে তিন জন মানুষকে ছোট্ট একটা দাঁড়টানা কাঠের নৌকায় করে গ্রামে নিয়ে যাচ্ছে ১৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আফজাল মাল্লাহ। পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় মিষ্টিপানির লেক মাঞ্চারের নীল পানিতে চলাফেরা করে এই নৌকাগুলো। 

মাঞ্চারের পূর্ব উপকূল থেকে ঝাড়া ২০ মিনিট লাগলো তার লেকের মাঝামাঝি নোংর করা কয়েক ডজন নৌকার কাছাকাছি পৌঁছাতে। ভাসমান এই নৌকাগুলোই বহু শতকের পুরনো মোহানা বা মাল্লাহ কমিউনিটির বাসস্থান। তিন দশক আগেও যাদের জনসংখ্যা ছিল ৫০,০০০, সেটা আজ কমে মাত্র ৪৫০ জনে নেমে এসেছে। 

এই লোকেরা নৌকাতেই বাস করে। 

মাল্লাহ বা মোহানা বলা হয় দক্ষিণ সিন্ধ প্রদেশের জেলেদের। মাঞ্চার লেক ওই এলাকাতেই অবস্থিত। 

দক্ষিণাঞ্চলীয় দাদু ও জামশোরো শহরে ইন্দুস নদীর পশ্চিমে ২৫০ বর্গকিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে এই লেক বিস্তৃত। এশিয়ার বৃহত্তম সুপেয়পানির লেক হিসেবেও পরিচিত মাঞ্চার। পানির গড় গভীরতা ২.৫ থেকে ৩.৭৫ মিটার। ভরা বর্ষা মওসুমে এই লেকের আকার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে। 

ভাসমান ঘর

নৌকার জেলে ইউসাফ বললেন, লেকের পাড়ের উষর পাড়গুলোতে ১৫ বছর আগেও ঘাস ছিল। দিয়ার কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকায় দুলতে দুলতে কথা বলছিলেন তিনি। এই নৌকা বর্ধিত একটি পরিবারের বসবাসের স্থান। 

২০০ বছরের পুরনো এই গ্রামে আর মাত্র ৪৫টি নৌকা বাকি আছে। বহু পরিবার দেশের অন্যান্য অংশে চলে গেছে, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাছের ব্যবসায় কমে আসায় তারা তাদের নৌকাগুলো মেরামত করতে পারেননি। 

ক্যানোর যাত্রীরা সতর্কতার সাথে নৌকায় উঠলো। এই নৌকাগুলো তৈরিতে প্রায় ১.২ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি খরচ হয় আর এগুলো প্রায় ৪০ বছর টিকে থাকে। 

img-20200912-134136-1

কোনায় ঐতিহ্যগত বিছানা রিল্লি বা রাল্লিতে এক শিশুকে ঘুমন্ত দেখা গেলো। বোটের আরেক কোনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নাঘর হিসেবে। তৃতীয় আর চতুর্থ কোনার একটি জিনিসপত্র রাখার জায়গা আর শিশুদের খেলার জায়গা হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। 

অনেক পরিবারই অভিবাসী পাখি ধরে পোষেন। প্রতি বছর মধ্য এশিয়া থেকে পাকিস্তানের উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য উড়ে আসে পাখিগুলো। শীতের সময়টা তারা এখানেই কাটায়। 

চিন্তার পরিবর্তন

ব্যবসায়ের সম্পদ সীমিত করা এবং স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করা ছাড়াও গ্রামের যুবকদের মানসিকতার পরিবর্তনেও কাজ করছে প্রযুক্তি। 

ইউসাফ বলেন, “আমাদের যুবকদের অনেকেই আর এখানে বাস করতে চায় না। টেলিভিশন আর মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে তাদের মানসিকতা পুরোপুরি বদলে গেছে”।

“তারা শহরে গিয়ে সেখানে বাস করতে চায়”। 

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত পরিবার গ্রাম থেকে শহরে চলে গেছে। শুধু মাছের ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণেই নয়, বরং সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। 

img-20200912-145159-1

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সন্তানেরা সিন্ধ আর বালুচিস্তানের মৎস্য ব্যবসায়ের শহরগুলোতে অবস্থানরত কাজিন ও স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছে। বাইরের জগতে তাদের এই প্রবেশাধিকার সৃষ্টি হওয়ার তাদের মানসিকতা বদলে গেছে। তারও তাদের মতো সেখানে যেতে চায়”।

আশার ঝলকানি

সাম্প্রতিক ভারি বৃষ্টিপাতের মওসুমে এক দশক পর লেকগুলো ভরে যাওয়ায় আশার কিছুটা আলো দেখতে পাচ্ছে এই সম্প্রদায়ের লোকেরা। 

রেকর্ড বৃষ্টিপাতে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো এবং শস্য ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এতে পর্যাপ্ত ফ্রেশ পানির যোগান তৈরি হয়েছে, যেটা দিয়ে লেকের পানির বিষাক্ততা কেটে গেছে। 

img-20200912-134433-1

অন্যান্য জেলেদের মতো ইউসাফও প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী করাচিতে গিয়ে মাছ বিক্রি করেন। তিনি বললেন, “পরিস্কার পানির অর্থ হলো আরও মাছ, আরও পাখি, আরও ঘাস, এবং আরও ব্যবসায়”।

তাছাড়া, খাবার পানির জন্য অধিবাসীদের সেহওয়ান গিয়ে পানিও নিয়ে আসতে হবে না।