সার্বভৌম অস্তিত্ব নিয়ে নয়, সরকারের বর্ধিতাংশ হিসেবে কাজ করছে নেপালের পার্লামেন্ট

সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্লামেন্টের দুই কক্ষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নকারী শাখা হিসেবে, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা নিম্নকক্ষ বিল নিয়ে কাজ করে, ওই ইস্যুতে জনস্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে এবং নীতি প্রণয়ন করে। কিন্তু নেপালের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস দিন দিন নির্বাহীদের প্রভাবে চাপা পড়ে যাচ্ছে, এবং অনেকটা সরকারের বর্ধিতাংশ হিসেবে কাজ করছে। স্বতন্ত্র শক্তি নিয়ে প্রধান পক্ষ হিসেবে ভূমিকা রাখছে না। পার্লামেন্ট বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন।
এটা অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। ঐতিহাসিকভাবে সবসময় পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দলের অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। নীতি বিষয়ক আলোচনা, আইন প্রণয়ন, নীতি প্রণয়ন, এবং সরকারকে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়গুলো সেখানে প্রাধান্য পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কিন্তু নেপালের ইতিহাসের শক্তিশালীতম সরকার যখন গঠন করা হয়েছে, তখন পার্লামেন্ট সিস্টেম আগের চেয়ে আরও ফাঁপা হয়ে উঠেছে।
পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার দামান নাথ ধুনগানা বলেছেন, “পার্লামেন্টে কেমন ধরণের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তার উপর ভিত্তি করে এটা কাজ করে। এখন পার্লামেন্ট তাদের হাতে, যারা একসময় পার্লামেন্ট সিস্টেমকেই বিশ্বাস করতো না”।
ধুনাগানা মাওবাদীদের দিকে ইঙ্গিত করেন। মাওবাদীরা ২০১৮ সালে ইউএমএলের সাথে মিলে যায় এবং নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করে। পার্লামেন্টে এখন তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। মাওবাদীরা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল এবং পার্লামেন্ট সিস্টেমকে তারা বয়কট করেছিল।
কিন্তু ধুনগানার মতে, সমস্যাটা শুধু ক্ষমতাসীন দলের নয়। প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস – যারা পঞ্চাশের দশক থেকে পার্লামেন্টারি সিস্টেমের পক্ষে রয়েছে, তারাও বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ব্যার্থ হয়েছে। ধুনাগানা বলেন, ‘নেপালি কংগ্রেস পার্লামেন্টারি সিস্টেমের কিছু বিষয় সংবিধানে যুক্ত করতে ব্যার্থ হয়েছে’। তিনি বিশ্বাস করেন যে, অনাস্থা ভোট এবং নিম্নকক্ষ পুরোপুরি নির্বাচিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ এবং পার্লামেন্টারি সিস্টেমের জন্য এটা জরুরি। তিনি বলেন, “কিন্তু পার্লামেন্টকে প্রাণবন্তু ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকার আর বিরোধী দর – উভয় পক্ষেরই সীমাবদ্ধতা দেখছি আমি”।
গুরুত্বপূর্ণ জননীতি ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করার বদলে সরকার নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বেশি ব্যস্ত। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেন ধুনগানা।
তিনি বলেন, “পার্লামেন্টের এটা নিয়ে সচেষ্ট হওয়া উচিত যাত্র গণতন্ত্র এবং ফেডারেল সিস্টেমকে কার্যকর করে তোলা যায়”।
পার্লামেন্টারি বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাহী ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্কটা স্পর্শকাতের এবং এখানে ভারসাম্যের প্রয়োজন। যদিও ক্ষমতার সুস্পষ্ট বিভাজন এখানে রয়েছে, তবে অনেক জায়গা আছে, যেখানে এটা আবার একে অন্যের সাথে মিশে গেছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে সরকার মূলত নির্দেশনা দিচ্ছে যে পার্লামেন্টকে কিভাবে চলা উচিত, বিশেষ করে যেখানে বিরোধী দল অত্যন্ত দুর্বল।
নেপালি কংগ্রেস নিয়মিত হাউজ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে এবং কিছু জনমুখী ইস্যু উত্থাপন করেছে, কিন্তু এ ধরণের ঘটনা বিরল এবং কিছু সক্রিয় আইনজীবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মূলত ক্ষমতাসীন দলের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। নেপালি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের চিফ হুইপ বাল কৃষ্ণা খান্ড বলেছেন, “হাউজে ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দল যে সব ইস্যুগুলো উত্থাপন করে, সরকারের সেগুলোর ব্যাপারে জবাব দেয়া উচিত। কিন্তু সরকার এই ইস্যুগুলোর কোনটিই গুরুত্বের সাথে নেয়নি। এতে বোঝা যায় যে, পার্লামেন্ট ব্যবস্থা আসলেই কার্যকর হচ্ছে না”।