আমরা লাইভে English সোমবার, জুন ০৫, ২০২৩

মিয়ানমারে সংবিধান পুনর্গঠনের দুটো সম্ভাব্য ‘চাবি

মিয়ানমার পার্লামেন্টের এক সেনা সদস্য

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দেশের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য যে ১১৪টি প্রস্তাব দিয়েছে, দেশের রাজনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য এর মধ্যে দুটো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমটি হলো, পার্লামেন্টে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা তাতমাদাওয়ের যে সংখ্যক আসন সংরক্ষিত আছে, তার পরিমাণ কমিয়ে আনার প্রস্তাব।

বর্তমানে সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদসহ অন্যান্য কিছু ধারার অধীনে পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন অনির্বাচিত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সুবিধার কারণে সামরিক বাহিনী দেশের আইন প্রনয়নের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার বাইরেও এর মাধ্যমে তারা বাড়তি ক্ষমতা ধারণ করে।

২০১৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এনএলডির বিরুদ্ধে কড়া বিরোধীতা করে আসছে সামরিক বাহিনীর এমপিরা। সামরিক বাহিনীর ইমেজের ক্ষতি করতে পারে এ ধরণের কোন মন্তব্য বা প্রস্তাবনা নির্বাচিত সদস্যদের পক্ষ থেকে আসলে তার কঠোর বিরোধীতা করেছে সামরিক বাহিনীর এমপিরা।

গত সপ্তাহে এনএরডি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেখানে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে সামরিক বাহিনীর আসন সংখ্যা ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছে। এই ধারাবাহিকতায় সেনাদের এমপি সংখ্যা ২০২৫ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে অবশ্য সামরিক প্রতিনিধিত্ব পুরোপুরি বিলুপ্ত করার কথা বলা হয়নি।

এনএলডি ধারাবাহিকভাবে সেনা প্রতিনিধিত্ব কমানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার বিপরীতে জাতিগত পার্টিগুলো দাবি করেছে যাতে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব একবারে পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হয়।

এনএলডি সম্ভবত ভাবছে যে, তাদের মধ্যমপন্থী প্রস্তাব সামরিক বাহিনীর এমপিদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। কেউই অবশ্য বলতে পারেন না এটা আদৌ কাজ করবে কি না।

কিন্তু আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি যে, এনএলডি যদি পার্লামেন্ট থেকে সকল সামরিক এমপিদের একবারে সরিয়ে দেয়ার  চেষ্টা করে, তাহলে এখন যে প্রতিরোধের মোকাবেলা করছে তারা, তার চেয়ে বেশি প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে তারা।

দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনার মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো সংবিধানে যে কোন সংশোধনী প্রস্তাবনার ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর ভেটো দেয়ার ক্ষমতা বাতিল করা।

সংবিধানের ৪৩৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সংবিধানের পরিবর্তনের যে কোন প্রস্তাব পাস হওয়ার জন্য ৭৫ শতাংশের বেশি এমপিদের সমর্থন লাগবে। এর অর্থ হলো সামরিক বাহিনীর অনুমোদন ছাড়া সংবিধানে কোন পরিবর্তন আনাটা অসম্ভব।

এনএলডি সংবিধান পরিবর্তনের যে সব প্রস্তাব করেছে এর মধ্যে একটি হলো সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্ট সদস্যদের ৭৫ শতাংশের সমর্থনের বদলে ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দুই তৃতীয়াংশের’ সমর্থন লাগবে।

এনএলডি’র প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস হলে ব্যাপক সমালোচিত সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে চলে আসবে।

এই সম্ভাবনা কম যে সামরিক বাহিনী এনএলডি’র প্রস্তাবিত সকল সংশোধনী মেনে নেবে, তবে এই দুটো প্রস্তাবের একটিকে তারা মেনে নিতে পারে। এর একটি পাস হলেও গণতন্ত্রায়নের প্রক্রিয়া এবং সংবিধানকে বেসামরিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সেটা হবে যথেষ্ট।

পার্লামেন্টে সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনলে, বা সংবিধান সংশোধনের জন্য ৭৫ শতাংশের কম ভোটের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে সংবিধান সংশোধনকে আটকে দেয়ার ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। এর ফলে সংবিধান থেকে অগণতান্ত্রিক বিধানগুলো দূর করা এবং ফেডারেল ইউনিয়ন গঠনের পথে বাধা দূর করাটা সহজ হবে।