আমরা লাইভে English সোমবার, জুন ০৫, ২০২৩

কার মাথায় উঠবে দিল্লীর মুকুট?

৭০ আসনের দিল্লী স্টেট অ্যাসেম্বলির জন্য এই নির্বাচনটা ‘করো অথবা মরো’ যুদ্ধের মতো। ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে ভোট হবে এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

নির্বাচনে তিনটি বড় পক্ষ রয়েছে। তৎপরতার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এরা হলো আম আদমি পার্টি (এএপি), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আর কংগ্রেস। তবে এই তিনটি দলের মধ্যে বিজেপি সবচেয়ে মরিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। 

পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ৩৭৫ বিজেপি এমপির সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে শেষ কয়েকটা দিন দিল্লীর বস্তিতে থাকে… সেখানে থাকে, সেখানে খায় এবং সেখানেই ঘুমায়। এটা নজিরবিহীন এবং অবিশ্বাস্য। এর আগে আর কোন রাজ্যের নির্বাচনে আর কোন দলের পক্ষ থেকে কোনদিন এ ধরণের নির্দেশনা আসেনি। এর মাধ্যমে দিল্লী নির্বাচনের গুরুত্ব এবং বিজেপির মরিয়া অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। 

প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই চমক দেখেছেন। মাত্র কয়েকদিন আগেই তিনি পার্লামেন্টে ঘোষণা দিয়েছেন যে, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য যে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে, সেটার জন্য ১৫ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অবাক করা ব্যাপার হলো, নির্বাচন কমিশন লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু দেখতে পায়নি। 

শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীদেরকে অবজ্ঞামূলক ভাষায় বর্ণনা করেছেন মোদি। গান্ধীবাদের অনুসরণে চলমান শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে তিনি হেয় করেছেন, যে ধরণের আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন থেকে ভারতের গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করে রেখেছে। 

অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন যে, দিল্লী নির্বাচনের ফলাফল সবাইকে চমকে দেবে। যেন তিনি আগে থেকেই জানেন নির্বাচনের ফলাফল কি হবে। 

বিজেপির দুই প্রধান ব্যক্তি – মোদি আর শাহ – দিল্লী নির্বাচনকে সাম্প্রদায়িকভাবে (বা হিন্দু-মুসলিম) বিভক্ত করে ফেলেছেন, যেমনটা এর আগে আর কখনই হয়নি। বিজেপি কার্যত বিজেপি এমপি পারভেশ ভার্মাকে আরও মহান করে তুলেছে, উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা থেকে যাকে নিষিদ্ধ করেছিল নির্বাচন কমিশন। যেমন তিনি বলেছিলেন, “শাহিন বাগের সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা হিন্দু নারীদেরকে ধর্ষণ আর হত্যা করবে”।

পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্মাকে বাছাই করেছিল বিজেপি। একজন এমপির জন্য এটা ছিল একটা বড় সম্মান! আর ওই বক্তৃতায় তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা ভারতকে ভেঙ্গে ফেলতে চায় এবং তারা প্রধানমন্ত্রী মোদি আর অমিত শাহকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করছে!

৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শেষ মুহূর্তে দিল্লী অ্যাসেম্বলি নির্বাচন একটা অসুস্থ পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এটা যেন এএপি আর বিজেপির মধ্যে অথবা প্রধানমন্ত্রী মোদি আর দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে একটা যুদ্ধের পর্যায়ে চলে গেছে। এএপি এখনও ফেভারিট হিসেবে রয়েছে, অন্যদিকে শাহিন বাগ ইস্যু নিয়ে এএপি’র উপর নগ্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। 

তিন বড় দলের প্রচারণার স্টাইলটা এ রকম:

এএপি: অরবিন্দ কেজরিওয়াল আর তার টিম পুরো মনোযোগ দিচ্ছে গত পাঁচ বছরে তাদের সরকার যে সব কাজ করেছে তার উপর। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানি এবং সমাজের সিনিয়র নাগরিক, দুর্ঘটনার শিকার, নারীসহ (দিল্লী মেট্রোতে ফ্রি চলাচল) বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য যে সব জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তারা গ্রহণ করেছে, সেগুলো তুলে ধরছে তারা। 

গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এএপি শাহিন বাগের পর্ব থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে, যদিও বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় সেটাই মূল বিষয়। এএপি সব সময় তাদের নির্বাচনী প্রচারণাকে স্থানীয় সমস্যা এবং এএপি সরকার সাধারণ মানুষের জন্য যে সব কাজ করেছে, সেগুলোর মধ্যে সীমিত রেখেছে এবং শাহিন বাগের ইস্যু থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে। এএপি আশা করছে অন্তত ৫০টি আসন তারা পাবে। 

বিজেপি: বিজেপির কৌশল হলো মোদি সরকার বিগত ছয় বছরে যে সব কাজ করেছে, সেগুলো তুলে ধরা। সে কারণেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, এমপি প্রাভেশ ভার্মা এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথের মতো বিজেপি নেতাদেরকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। যদিও ঠাকুর এবং ভার্মাকে নির্বাচন কমিশন যথাক্রমে ৭২ ঘন্টা ও ৯৬ ঘন্টার জন্য নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিষিদ্ধ করেছে। 

এই তিনজনই অব্যাহতভাবে মোদি সরকারের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) বিরোধী চলমান শাহীন বাগ বিক্ষোভকারীদেরকে তাদের প্রচারণার কেন্দ্রে রেখেছে। মোদি নিজেই তার দিল্লীর নির্বাচনী সমাবেশে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। 

মোদি বলেছেন: “এই মানুষগুলো সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সময় আমাদের বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিল। দিল্লীর নাগরিকরা কি এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়? এই মানুষেরা সেই সব মানুষকে রক্ষা করছে যারা ভারতকে টুকরো টুকরো করতে চায়। একটা সময় ছিল যখন দিল্লীতে মাঝে মাঝেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটতো; এই মানুষেরাই বাটলা হাউজে এনকাউন্টারের ঘটনাকে সাজানো বলে মন্তব্য করেছিল; এরা সেই একই মানুষ যারা টাকডে-টাকডে মানুষদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল… এখন আমরা বিক্ষোভ দেখছি। জামিয়া এবং শাহিন বাগ সহ এই সবগুলো বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে”।

বিজেপি ভোটাদেরকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভাজিত করার চেষ্টা করেছে, যেমনটা তারা ঝাড়খাণ্ডে করেছিল। কিন্তু ঝাড়খাণ্ডে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের কাছে বিজেপি হেরে গেছে। বিজেপির এই মেরুকরণ যদি সফল হয়, তাহলে দিল্লী অ্যাসেম্বলিতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে এই সম্ভাবনাটা কম মনে হয়। 

কংগ্রেস: পুরনো প্রাচীন দলটি নিজেদের ভেতরে ভেতরে ভালো করেই জানে যে, তাদের কোন সুযোগ নেই। তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যে সব প্রতিশ্রুতির কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বেকার ভাতা দেয়া (স্নাতকদের জন্য মাসিক ৫০০০ রুপি এবং স্নাতকোত্তরদের জন্য ৭৫০০ রুপি), পরিবেশের উন্নতি এবং বাতাসের মান বাড়ানোর জন্য বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ করা, যেটার কারণে পরিবহন সিস্টেম ব্যাহত হচ্ছে, এবং ১০০টি ‘ইন্দিরা ক্যান্টিন’ স্থাপন করা, যেখানে গরিবদের জন্য প্লেট প্রতি ১৫ রুপি করে খাবার দেয়া হবে।

বিজেপি এবং কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলগুলো খুব বেশি কিছু হারাবে না যদি তারা দিল্লী নির্বাচনে হেরে যায়। কিন্তু এএপির জন্য এখানে সবকিছু বিপন্ন হয়ে পড়বে কারণ তাদের তৎপরতা দিল্লীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং যেহেতু ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা মারাত্মক খারাপ করেছে।