আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

পাকিস্তানের গোয়াদারে চীনের হাই-সিকিউরিটি কম্পাউন্ড: ভারতের উদ্বেগের কারণ?

DEFENCE-ENG-09-06-2020-India

পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর গোয়াদারে চীন বেশ কিছু হাই-সিকিউরিটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে বলে সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে। ২০১৭ সালের মর্চে চীনের সামরিক সূত্রগুলো বলেছিলো যে তারা বিদেশে চীনের স্বার্থ রক্ষায় গোয়াদার ও জিবুতিতে চীনা মেরিন সেনা মোতায়েন করবে। ভারত মহাসাগরে চীনের তৎপরতাগুলো বিবেচনায় নিলে মনে হবে বেইজিং গোয়াদারকে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক হাব-কাম-সমারিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

চীন তার পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনঝিয়াং প্রদেশের কাশগর নগরীকে কারাকোরাম হাইওয়ের মাধ্যমে আরব সাগরের তীরে গোয়াদার বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছা প্রথম প্রকাশ করে ২০০১ সালের দিকে। এর লক্ষ্য ছিলো চীনের ভূবেষ্টিত উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলকে সাগরের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পরিবহনের খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা। ২০০৬ সালের দিকে গোয়াদারের প্রাথমিক উন্নয়ন কাজ শেষ করে চীন এবং একই বছর কারাকোরাম হাইওয়ে উন্নত করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি সই করে।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে চীনের একটি কোম্পানি গোয়াদার পরিচালনার ভার গ্রহণ করে এবং এর চার মাস পর চীনের শিনঝিয়াং ও গোয়াদারের মধ্যে বাণিজ্য ট্রানজিট করিডোর চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোরের (সিপিইসি) প্রস্তাব করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা ফাঁকা বুলি

১০১৫ সালের এপ্রিলে এক যৌথ ঘোষণায় সিপিইসিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ফ্লাগশিপ প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে গোয়াদার বন্দরকে আঞ্চলিক বাণিজ্য হাবে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান ও চীন।

চীনের রফতানিমুখি অর্থনীতি বিশ্ববাজারে পৌছার জন্য বর্তমানে সাগর পথের উপরেই নির্ভর করছে। কিন্তু ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে এই বাণিজ্য পথ অনেকটাই নাজুক। তাই সাগর এড়িয়ে স্থল পথের উপর নজর দেয় বেইজিং। এ জন্যই সিপিইসি, বিআরআই, তেল/গ্যাস পাইপলাইন, ইত্যাদি।

ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাটি করেছিলেন এডমিরার লিউ হুয়াকিং, সেই ১৯৮০’র দশকে। তার লক্ষ্য ছিলো ২০১০ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরে চীনা নৌ বাহিনীর বিচরণ শুরু হবে। প্রথমে তথ্য সংগ্রহ, পরে ২০২০ সালের পর থেকে শক্তি প্রদর্শন।

জলদস্যুতা প্রতিরোধে ২০০৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যে প্রস্তাব গ্রহণ করে তা চীনের জন্য শাপে বর হয়। ২০০৯ সালে চীন প্রথম সোমালিয়া উপকূলে এন্টি-পাইরেসি টাস্কফোর্স মোতায়েন করে। ২০১৪ সাল থেকে চীনের পারমাণবিক ও প্রচলিত সাবমেরিনগুলো ভারত মহাসাগরে বিচরণ করতে শুরু করে। করাচি বা কলম্বো বন্দরেও নোঙ্গর করে এগুলো। কৌশলগত সাবমেরিনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গোয়দারের কাছে তুরবাতে একটি ভেরি লো ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএলএফ) স্থাপনা নির্মাণে পাকিস্তানকে সহায়তা করে চীন।

কলম্বোতে চীনা সাবমেরিন নোঙ্গর করার পর ভারতে হৈ চৈ শুরু হলে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি স্থায়ী নৌ ঘাঁটি নির্মাণের তাগিদ অনুভব করে বেইজিং। এরই জের ধরে ২০১৭ সালে আফ্রিকার জিবুতিতে চীনের প্রথম বৈদেশিক ঘাঁটির যাত্রা শুরু। তবে এর আশেপাশে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের ঘাঁটি রয়েছে।

পাশাপাশি চীন ভারতকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন দেশে (শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার) সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তার ঘাঁটিগুলোকে সামরিক কাজে ব্যবহার করছে চীনের এখনো সেরকম কোন তৎপরতা নেই। অবস্থানগত কারণে ভারত মহাসাগরে ভারতের আধিপত্য বেশি।

আর সে কারণেই চীন ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোকে কৌশলগত মিত্রে পরিণত করছে। ফলে এগুলোকে চীনা ঘাঁটির প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ ভারত শিগগিরই একে-২০৩ রাইফেল উৎপাদন শুরু করতে পারছে না

পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর চীনের ওই স্বার্থের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিলে যায়।

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয় যে ডুয়েল-ইউজ লজিস্টিকস ফ্যাসিলিটিজগুলো চীনের নীতির সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খেয়ে যায়। আর সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য আদর্শ মিত্র পাকিস্তান হলো সবচেয়ে ভালো জায়গা। চীনা ভাষ্যকাররাও এই ধারণাকে সমর্থন করেন।

গোয়াদারে চীনের নৌ ঘাঁটি ভারত মহাসাগরে ভারতের তৎপরতা চালানোর ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব করবে।