আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

ভারতীয় মিডিয়ার গুজব-প্রবণতা সঙ্ঘাত সৃষ্টি ও সম্পর্ক নষ্টের ঝুঁকি তৈরি করছে

ISSUE-3-ENG-07-09-2020-China

শুক্রবার বিকেল থেকেই ভুয়া খবর ছড়ানো শুরু হয়েছে যে, তাইওয়ান পিপলস লিবারেশান আর্মির (পিএলএ) একটি সু-৩৫ জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করেছে। তাইওয়ানের ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়’ দ্রুত এই মিথ্যা চাবি নাকচ করে বিবৃতি দিয়েছে। ভারতীয় মিডিয়া ‘নিউজ লাইন আইএফই’ প্রথম টুইটারে এই খবর ছড়ায়। এরপর এবিপি নিউজ এবং টাইমস নাউসহ বেশ কিছু ভারতীয় মিডিয়া এই ভুয়া খবর প্রচারের সাথে যুক্ত হয়। খবরটি ভুয়া জানানোর পর নিউজ লাইন আইএফই টুইট পোস্টটি ডিলিট করে দেয়। কিন্তু পরে এ ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। 

সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ভিত্তিতে ভারতীয় মিডিয়া ভিত্তিহীন ভুয়া খবর প্রচার করেছে, যেটা শুধু নেতিবাচক প্রভাবই ফেলেনি। একইসাথে তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতি নিয়ে ভুল ধারণা উসকে দিয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে ভারতীয় মিডিয়ার গুজব রটানোর প্রবণতা আবারও প্রকাশ্যে উঠে আসলো। 

কিছু ভারতীয় মিডিয়া এবং সাংবাদিক বারবার চীনকে টার্গেট করে নোংরা গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে, ভারতীয় এক সাংবাদিক দাবি করেন যে, উহানের জনগণকে তাদের ঘরে আটকে রাখা হয়েছে এবং সাহায্যের জন্য তারা আহাজারি করছে। কিন্তু টুইটারে যে ভিডিও তিনি পোস্ট করেন, সেখানে উহানের মানুষ আসলে একে অন্যকে উৎসাহিত করছিল। জুনে চীন-ভারত সীমান্তে সঙ্ঘাতের পর পিএলএ’র হতাহতের বিষয়টি নিয়েও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রচার করে ভারতীয় মিডিয়া। চীনের মানহানীর উদ্দেশ্যে তথ্য ও ভিত্তিহীন এ ধরণের হাস্যকর, অপেশাদার সংবাদ প্রচারের কারণে ভারতীয় মিডিয়ার ভাবমূর্তিরই ক্ষতি হচ্ছে। 

চীন-ভারত সীমান্ত সঙ্ঘাতের প্রেক্ষিতে ভারতীয় মিডিয়ার এই প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে। সে কারণে তারা চীনের মূল ভূখণ্ড ও তাইওয়ানকে নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে এই আশায় যে, সেখানকার পরিস্থিতি যাতে ঘোলাটে হয়ে ওঠে। 

কিন্তু তাইওয়ানের ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়’ চীনা ও ইংরেজি ভাষায় দেয়া বিবৃতিতে এই ‘অশুভ অপকর্মের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী যে কোন ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে, যে কোন ভুল তথ্যের কারণে সেটা উসকে উঠতে পারে। তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত, এবং এ অঞ্চলে যে কোন অপ্রত্যাশিত সামরিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা সবসময় রয়েছে। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সাথে ভারতীয় মিডিয়ার গুজবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর অর্থ হলো এ ধরণের উসকানির পরিণতি তারা বহন করতে পারবে না। ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এর উপর নজরদারি করছে। 

চীন আর ভারত দুটোই জনবহুল দেশ। চীন আর ভারত যেভাবে ভিন্নভাবে কোভিড-১৯ এর মোকাবেলা করেছে, এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য অর্জনের যে পার্থক্য, সেটার কারণে ভারতের একটা মিশ্র ও জটিল মানসিকতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু, বাধাহীনভাবে চীনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর গুজব ছড়ালে ভারতীয় মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাই নষ্ট হবে। একটা বড় দেশের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বৃহৎ চিত্রটা থাকা উচিত। কিন্তু কিছু ভারতীয় মিডিয়ার সুস্পষ্টতই সেটা নেই। তারা তাদের ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক স্বার্থই শুধু দেখে থাকে। মানুষের নজর কাড়ার জন্য তারা সামাজিক স্বার্থ এবং ন্যূনতম পেশাদারিত্বটুকুও বজায় রাখেনি। 

চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতির পেছনে ভারতীয় মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। নয়াদিল্লীর সাথে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সম্পর্কের অবনতির পেছনেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। ভারত যদি সত্যিই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নতি চায়, তাহলে ভারতীয় মিডিয়াকে অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।