কাশ্মিরের জনমিতি বদলানো বন্ধে ভারতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই কাশ্মিরের জনসংখ্যা চিত্র পরিবর্তন থেকে ভারতকে বিরত রাখার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের স্থিতিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই কাশ্মির। একটি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সম্মেলনে সোমবার এ কথা জানান বক্তারা।
সম্মেলনে বক্তৃতাকালে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী শিবলি ফারাজ বলেন, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের জনসংখ্যা ও স্বতন্ত্র পরিচিতি পরিবর্তন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘকে অবশ্যই অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নতুন রেসিডেন্সি আইন বাস্তবায়নের পর জম্মু ও কাশ্মিরের হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিককে নাগরিকত্ব প্রদান করায় ভারত-শাসিত কাশ্মিরে আশঙ্কা বেড়েছে।
ফারাজ বলেন, অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে ভারতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের সভাপতি সর্দার মাসুদ খান কাশ্মিরে ভারতের নৃশংসতার প্রতিবাদে দেশটির বিরুদ্ধে বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও অবরোধ আরোপের প্রস্তাব করেন।
তিনি সম্মেলনে বলেন, আমি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানাব, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভারত থেকে অ-হালাল মাংস ও অ-হালাল পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে।
আরও পড়ুনঃ কাশ্মীরে একবিংশ শতকের গ্রেট গেম
তিনি কাশ্মিরিদের সহায়তার জন্য ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক ও ইসলামি সংহতি তহবিলের সহযোগিতায় কাশ্মির হিমেনিটেরিয়ান ফান্ড গঠনের আহ্বানও জানান।
তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির আইনপ্রণেতা আলী সাহিন বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাশ্মির ইস্যু হলো মূল ইস্যু।
তিনি বলেন, চীন ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক সঙ্ঘাত বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি কতটা ভঙ্গুর। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ সমস্যার কেন্দ্র হচ্ছে কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৪৭, ৫১, ৮০, ৯৬, ৯৮, ১২২ ও ১২৬ নম্বর প্রস্তাবে জাতিসংঘের তদারকিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ গণভোটের মাধ্যম জম্মু ও কাশ্মিরের জনসাধারণের ভাগ্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ সত্ত্বেও ভারত অনেক বার এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, তুরস্ক শান্তিপূর্ণভাবে কাশ্মির ইস্যুর সমাধান চায়।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মিরের জনসাধারণের আকঙ্ক্ষার আলোকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে কাশ্মির ইস্যুর সমাধান হওয়া উচিত বলে তুরস্ক মনে করে।
আরও পড়ুনঃ অধিকৃত কাশ্মীরে আবারো উৎকণ্ঠা, এলপিজি মজুত ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য স্কুলভবন খালি করার নির্দেশ
গত বছরের ৫ আগস্ট কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর সামরিক লকডাউন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রীনগরের শিশু আর আঙ্কার শিশু একই, কাশ্মির উপত্যকার নারী মানে আনাতোলিয়ার নারী। কাশ্মিরি মায়ের কান্না তুর্কি মায়ের কান্নাই।
তিনি বলেন, কাশ্মির আমাদের সমসাময়িক কানাকালে ও দারদেনেলিস। কানাকালের ওই ঘটনার সময় আপনারা আমাদের সাথে ছিলেন, আজ কাশ্মির প্রশ্নে আমরা আছি আপনাদের সাথে। তিনি এর মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দার্দানেলিস যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিলেন।
তুরস্কে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সিরাজ সাজ্জাদ কাজি বলেন, ভারত-অধিকৃত কাশ্মির থেকে সর্বশেষ যেসব প্রতিবেদন আসছে তা খুবই পীড়াদায়ক।
তিনি বলেন, কাশ্মিরিদের অধিকার নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। প্রায়ই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কেবল চলতি বছরই শতাধিক কাশ্মিরি নিহত হয়েছে।
প্রবাসী কাশ্মিরি নেতা গোলাম নবি ফাই বলেন, কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সাথে মধ্যস্ততা করার প্রস্তাবে ভারতের না বলাটাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রহণ করাটা বিস্ময়কর বিষয়।
প্রবাসী কাশ্মিরিদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ফাই প্রস্তাব করেন, আমরা ভারতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বৈশ্বিক প্রচারণা শুরু করতে পারি।