আমরা লাইভে English সোমবার, মার্চ ২৭, ২০২৩

বাইডেন ও চীন প্রসঙ্গে মাহাথির: ট্রাম্পের চেয়ে খারাপ হতে পারে না

অ্যাপেক, টুইটার বিতর্ক আর মালয়েশিয়ার পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন ৯৫ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ

Screenshot 2020-11-21 072828
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ

মার্কিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের ব্যাপারে ‘আরও যৌক্তিক’ অবস্থান গ্রহণ করবেন, যেটা এশিয়ার ছোট দেশগুলোর উপকার করবে। নিক্কি এশিয়াকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। 

৯৫ বছর বয়সী মাহাথির সবসময় আমেরিকার সমালোচনা করে এসেছেন, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়ার কারণে। তবে বাইডেনের মধ্যে তিনি এমন একজন নেতাকে দেখছেন, যিনি চীনের সাথে সম্পর্ক মেরামত করবেন, বিগত ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যেটার অনেক ক্ষতি হয়েছে। 

মাহাথির বলেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট “ট্রাম্পের চেয়ে খারাপ হতে পারবে না। ট্রাম্পের অধীনে বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কারণ তিনি চীন, ইউরোপ, মেক্সিকো এমনকি কানাডার সাথেও ঝগড়ায় নেমেছিলেন”।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, এই সত্য অস্বীকারের উপায় নেই যে, চীনের সমৃদ্ধি এশিয়ার সার্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত অর্থনীতিগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “বাইডেনকে চীনের সাথে সম্পর্ককে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে, কারণ এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ”।

মাহাথির প্রায় ২৪ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সবশেষ দুই বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বে এক অভ্যন্তরীণ ক্যু-এর মধ্য দিয়ে তার সরকারের পতন ঘটে। 

মুহিউদ্দিনের ক্ষমতা গ্রহণের আগে মাহাথির নিজেই অ্যাপেক সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এটা করলে পৃথিবীর একমাত্র নেতা হিসেবে দুইবার অ্যাপেক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করার মর্যাদা পেতেন তিনি। 

https___s3-ap-northeast-1.amazonaws.com_psh-ex-ftnikkei-3937bb4_images__aliases_articleimage_7_4_1_5_30765147-1-eng-GB_RTX8AND5
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন

তার বদলে এখন শুধু পরামর্শ দিতে পারেন তিনি। কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা এবং কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, “মহামারীর একটা দিক হলো মানুষ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে এবং মানুষ যখন কাজ করে না, তখন তাদের উৎপাদনশীলতা থাকে না এবং তারা অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখতে পারে না”।

সম্প্রতি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচনায় আসেন মাহাথির। ফ্রান্সে ইসলামি জঙ্গি হামলা এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তার বেশ কতগুলো টুইটের কারণে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তিনি লিখেছিলেন যে, “ফরাসীরা অতীতে মুসলিমদের যেভাবে হত্যা করেছে, সেটার কারণে ফরাসীদের হত্যা করার অধিকার মুসলিমদের রয়েছে”।

মাহাথিরের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। টুইটার তার পোস্ট মুছে দেয়। কিন্তু মাহাথির বলেছেন তার বক্তব্যকে প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। নিক্কি এশিয়াকে তিনি বলেন, এই বক্তব্যের জন্য তার কোন অনুশোচনা নেই। 

তিনি বলেন, “আমি যেটা বলেছি, সেটার পক্ষেই আছি আমি। কিন্তু তারা কি ব্যাখ্যা দিচ্ছে, সেটা তাদের ব্যাপার, সেটা ইচ্ছা করেই তারা করছে। তারা আমাকে ব্ল্যাকমেইল আর তাচ্ছিল্য করতে চায়। আমি দীর্ঘতম সময় ধরে যুদ্ধ আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি”।

এখন তিনি দেশের পরবর্তী রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, কারণ গুঞ্জন ভাসছে যে, কোভিড-১৯ এর চলমান ঢেউটা কমে আসলে মুহিউদ্দিন নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন। মাহাথির বলেন, তিনি একটা ‘তৃতীয় শক্তি’ তুলে ধরতে চান, যেটা হয়তো বড় হবে না, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব রাখবে”।

তার নতুন রাজনৈতিক দল হোমল্যাণ্ড ফাইটার্স পার্টি এবং মাহাথিরের কিছু অনুগতদের নিয়ে এই শক্তি গঠিত হতে পারে।

https___s3-ap-northeast-1.amazonaws.com_psh-ex-ftnikkei-3937bb4_images__aliases_articleimage_7_8_7_4_30764787-1-eng-GB_RTX7A3CX
আনোয়ার ইব্রাহিম (বাঁয়ে)

বর্তমান ক্ষমতাসীন দল মুহিউদ্দিনের মালয়েশিয়ান ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পার্টি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ইউনাইটেড মালয়িজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশা, এবং মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টির সাথে জোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন তিনি। 

মাহাথির বলেন দেশের স্বার্থে আনোয়ারের সাথে আবার কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। তিনি বলেন এটা ছিল শর্তসাপেক্ষ। সেটা হলো আনোয়ার ক্ষমতায় বসার আগে ছয় মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি। 

তিনি বলেন, আনোয়ার “এ ব্যাপারে রাজি হয়নি এবং এই বিষয়টাকে সে গুরুত্ব দিচ্ছে না যে, জোটের প্রতি মালয়ীদের সমর্থন ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমি সাহায্য করতে পারি”।

মাহাথির বলেন, আগামী নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ নেই। তবে তার সমর্থকরা হয়তো তাকে জোর করে নির্বাচন করতে বাধ্য করতে পারে। 

তিনি বলেন, “আমি এরই মধ্যে সরে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু মানুষ এখনও আমার কাছে আসছে ও আলোচনা করছে। দল যদি বলে আমাকে নেতৃত্বের অংশ হতে হবে, আমার মনে হয় না যে, আমি তাদেরকে নাকচ করে দিতে পারবো, আর সে কারণেই আমি এখনও সক্রিয়। কিন্তু অবশ্যই আমার জন্য স্বাস্থ্যের প্রয়োজনেই আমার সক্রিয় থাকা দরকার”।