ভোটারদের উপর সু কি’র মন্ত্র ভেঙ্গে দেয়ার প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের বিরোধী দলগুলোর
নভেম্বরে জয়ের আশা করছে এনএলডি, তবে নতুন দলগুলোর দৃষ্টি রয়েছে ২০২৫ সালের দিকে

মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নভেম্বরে। নতুন রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করছে অং সান সু কি’র ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি থেকে ভোটারদের ভাগিয়ে নিয়ে যেতে। মিয়ানমারের প্রতীক এই নেতার বাইরেও ভোটারদের অন্য একটা ভবিষ্যৎ দেখানোর চেষ্টা করছে তারা।
দুই বিরোধী নেতা বলেছেন এনএরডি নেতা গত পাঁচ বছরে প্রত্যাশিত পরিবর্তন ও উন্নয়নের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তারা ওই দল থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা দল গঠন করেছেন।
পিপলস পায়োনিয়ার পার্টির নেতা থেত থেত খাইন নিক্কিকে বলেন যে, এনএলডি বিশেষ করে অর্থনীতিকে অগ্রাহ্য করেছে এবং অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত পরিস্থিতির দিকে বেশি নজর দিয়েছে।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার শান্তির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, সে কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা নেতৃত্বের শূণ্যতা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের প্রতিদিনের মৌলিক চাহিদা অবশ্যই পূর্ণ হতে হবে, এবং সে কারণে উন্নয়নকে আমরা শান্তির উপরে স্থান দিয়েছি”।
একই সাথে তিনি অভিযোগ করেন যে, এনএলডি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সু কি আর তার ঘনিষ্ঠ সহকারীদের উপর অতিমাত্রায় নির্ভর করেছে। তিনি বলেন যে, তার নিজের দল ‘যৌথ নেতৃত্বের উপর বিশ্বাস করে”।
তবে থেত থেত খাইন আশা করছেন যে, আগামী পাঁচ বছরে রাজনৈতিক মানচিত্র অনেকটাই বদলে যাবে। তিনি বলেন, “এনএলডি খুবই ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল এবং অং সান সু কির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, যার বয়স ৭৫ হয়ে গেছে। ২০২৫ সালে তার বয়স হবে ৮০। এবং সে সময় এনএলডি তার উপর অতটা নির্ভর করতে পারবে না। এনএলডিকে তার যুগটা পার হয়ে এগিয়ে যেতে হবে”।
এনএলডি ২০১৫ সালে ভূমিধস বিজয় পায়। প্রতিদ্বন্দ্বী আসনগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশতে জয়ী হয় তারা। থেত থেত খাইন পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের এমপি। ২০১৫ সালে তিনি এনএলডি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি দল ত্যাগ করে পিপিপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার দলের পার্লামেন্টে একটি দল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন: “নির্বাচনের পর আমরা আমাদের শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণের সুযোগ পাবো এবং ২০২৫ সালের নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত হতে পারবো”।
পিপলস পার্টির প্রধান এবং বিশিষ্ট গণতান্ত্রিক অধিকার কর্মী কো কো গাইও বলেছেন যে, এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে। ১৯৮৮ সালে জেনারেল নে উইনের বর্বর শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন কো কো গাই।
সু কির এনএলডি দলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা করেছেন তিনি। কিন্তু চলতি বছরে তিনি পিপি দল গঠন করেছেন। কো কো গাই সু কির সরকারকে সরাসরি সমালোচনা না করলেও তিনি স্পষ্ট করেই তার হতাশার কথা জানিয়েছেন।
কো কো গাই নিক্কিকে বলেন, “২০১৫ সালের নির্বাচনে, এনএলডিকে বহু মানুষ ভোট দিয়েছে। ভোটাররা প্রার্থীদেরকে দেখেনি, শুধু দলের প্রতীক দেখেছে। ফলে এখন মানুষ পরিস্থিতি নিয়ে হতাশায় পড়ে গেছে।
তিনি বলেন, “এনএলডি আর অং সান সু কির কাছ থেকে আমরা বহু বছর ধরে অনেক বেশি আশা করেছিলাম এবং সেখানে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। একজন মাত্র নেতা ছিল সেখানে”।
ইয়াঙ্গুন-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক খিন জাউ উইন নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থানকে উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন এবং অনেক চ্যালেঞ্জ সত্বেও সেটা আরও গণতন্ত্রকে আরও পরিপক্কতার দিকে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “বহু মানুষ সু কিকে প্রায় পূজা করে এবং তার ক্যারিশমা নিয়ে তারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিটা অনেকটাই এক দলীয় রাষ্ট্রের মতো। আমাদের নতুন চেহারার প্রয়োজন, নতুন কণ্ঠস্বর আর গণতন্ত্রের অগ্রগতির প্রয়োজন”।