আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

বিরোধী দলগুলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির নীতি পাকিস্তানের প্রতি হুমকি

COLUMN-ENG-12-08-2020

ধরা হয়ে থাকে পাকিস্তান হলো পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক দেশ ও ফেডারেশন। কিন্তু শাসকেরা কখনোই এ ধরনের ব্যবস্থায় কিভাবে কাজ করতে হয় তা বোঝেননি বা ওই ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োগ করেননি। দলগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে জনগণের সেবা করার বদলে পরিবার বা গ্রুপগুলোর স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য।

সামন্তবাদীরা শিল্পপতিতে এবং ব্যক্তিরা সামন্তবাদীতে পরিণত হতে থাকায় উভয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করছে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার মিশন নিয়ে। তারা জনগণের বিনিময়ে শাসনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। সেনাবাহিনীর আশঙ্কা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে দেশ হয়তো ভেঙে যাবে। এর ফলে পাকিস্তানের অস্তিত্বের অর্ধেক অংশ সামরিক শাসনের অধীনে। স্বাভাবিকভাবেই এটি গণতান্ত্রিক আদর্শ ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিকাশে কোনোই ভূমিকা পালন করে না। 

এমনকি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার ৭০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক পার্থক্যনির্বিশেষে জাতির স্বার্থে কাজ করার বদলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট কিছু পরিবার ও গ্রুপের স্বার্থসিদ্ধি করতে থাকে। এমনও বলা যেতে পারে যে বেশির ভাগ শাসক দেশের স্বার্থকে সমুন্নত করতে চায় না। কারণ তা করতে হলে দেশের সব নাগরিককে সমান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, সবাইকে সমান অধিকার দিতে হবে, সবার মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সব রাজনৈতিক দল, ক্ষমতাসীন দলসহ, একই মানসিকতাসম্পন্ন।

কোভিড-১৯সহ পাকিস্তানের বর্তমান নানামুখী সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করার কারণ হলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও এর প্রধান প্রধান খেলোয়াড়ের দুর্বলতা। পরিস্থিতি সর্বোচ্চ সংহতি দাবি করে। কিন্তু রাজনৈতিক খেলোয়াড়েরা জনগণ ও অর্থনীতির ক্ষতি করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো বয়কটের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে।

করোনা সঙ্কটের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অর্থ হলো শিল্প ও কৃষি খাতের পতন। কোটি কোটি লোকের জন্য আরো কম আয় হবে। ফলে দেশ মহা বিপদে পড়ছে। সরবরাহ লাইনে বাধার মাধ্যমে শিল্প ও কৃষিতে বিঘ্ন সৃষ্টির ফলে আরো শিল্পের পতন ত্বরান্বিত করতে পারে। এর ফলে বেকারত্ব আরো বাড়তে পারে।

অর্ধেক লোক দারিদ্রসীমার নিচে বা কাছাকাছি থাকায় পাকিস্তান বিশেষভাবে নাজুক অবস্থায় আছে। তাদের টিকে থাকার জন্য খাদ্যের সংস্থান অত্যাবশ্যক। তা করতে ব্যর্থ হলে খাদ্য দাঙ্গার সৃষ্টি হতে পারে, বেপরোয়া লোকজন মুদি দোকান বা খাদ্যের গুদামে হামলা করতে পারে কিংবা দুর্বৃত্তরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিপদে ফেলে জরুরি অবস্থা বা এমনকি সামরিক শাসন নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। নিয়মতান্ত্রিক সরবরাহে বাধা সৃষ্টির জন্য হাতেনাতে যেই ধরা পড়বে, তাকেই শাস্তি দিতে হবে।

সিন্ধুতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পণ্য পরিবহনে লকডাউন তুলে নেয়া সত্ত্বেও কার্গো চলাচলে বাধা দিচ্ছে। সিন্ধু সরকার লকডাউনের ডিক্রি জারি করলেও তারাই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মানহানির জন্য রাজনীতি করছে। সরবরাহ লাইন বাধাগ্রস্ত করার জন্য মিডিয়াও তাদের সমর্থন দিচ্ছে। পিপিপি গর্বিতভাবে ঘোষণা করছে যে তারা সব অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে, কিন্তু প্রয়োজনীয়গুলোর ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত?

পাঞ্জাবে পাকিস্তান মুসলিম লিগের শাহবাজ শরিফ ও তার দলবল জনগণ ও শিল্প সরবরাহ যথাযথ করার কাজে সহায়তার বদলে ক্ষমতাসীন সরকারকে অক্ষম প্রমাণ করার দিকেই বেশি আগ্রহী। এমনকি তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকার যদি ভুল করে, তবুও জাতীয় স্বার্থে এসব ভুলের রাজনৈতিক ফায়দা আদায় ঠিক নয়। সবসময় পাকিস্তানি জাতির অপেক্ষাকৃত কল্যাণের দিকেই নজর দেয়া উচিত ছিল।

অবশ্য, ক্ষমতাসীন জোটেরও প্রয়োজন বিরোধীদলের কাছে যাওয়া এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা। এটি জাতীয় ফ্রন্ট গঠনে সহায়তা করবে। ব্যক্তি বা গ্রুপের লোভের কাছে দেশ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।

একটি মহা আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিলাওয়াল ভুট্টোর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলি ব্যুরোর (এনএবি) প্রধানের পদত্যাগ দাবি করা। বেনজির ভুট্টোর কারণে ব্যক্তিগতভাবে বিলওয়ালের প্রতি আমার সফট কর্নার ছিল। কিন্তু এই লোকটি তার বাবার দুর্নীতির পরিমাণ ও তিনি পাকিস্তানের জন্য কী করেছেন, তা জানেন না। বিলওয়াল হয় আনাড়ি কিংবা ভণ্ড কিংবা উভয়টিই। এনএবিকে দুর্বল করে দেয়ার মানে হলো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদেরকে শাস্তি থেকে রেহাই দেয়া। প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে, এমনটা কখনো হতে না দেয়া। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার দায়দায়িত্ব সবার। সঙ্কট কেবল সমস্যাই সৃষ্টি করে না, এটি চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে যা নতুন জোট গঠন করতে পারে, নতুন সমঝোতা সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের উচিত হবে না এই সুযোগকে হাতছাড়া করা।

 

লেখক: প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক