নাওয়াজের কাজ ভারতের হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ: কায়েদ অবশ্যই কষ্ট পাচ্ছেন

কায়েদ-ই-আযমের মাজারে মরিয়মের স্বামী ক্যাপ্টেন সফদরের অত্যন্ত নোংরা অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং কোনো কিছু প্রকাশ ছাড়াই তা মরিয়মের দেখা নওয়াজের একান্ত অনুগতদের ছাড়া সবখানের পাকিস্তানিদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও ব্যাপকভিত্তিক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মাজারের পবিত্রতা লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক চিৎকারের কারণে পরের দিন সিন্ধু পুলিশ ক্যাপ্টেন সফদরকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গ্রেফতার করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এতে আইনের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
আবারো দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনা পাকিস্তানিদের জন্য আরো বড় পরিণতি ডেকে আনে। ৫ কোরের কমান্ডার লে. জেনারেল হুমায়ুন আজিজের পরিচালনায় তদন্ত অবশ্যই শাস্তিযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোর ৪টায় তার প্রতি যা ঘটেছে, সেজন্য তার প্রতি আমার পূর্ণ সহানুভূতি থাকবে। আইজির বিপর্যস্তকর অবস্থা পুরোপুরি যৌক্তিক। চেইন অব কমান্ডের কে এ ধরনের নির্দেশনা দিলো? যিনিই এই নির্দেশ দিয়ে থাকুন না কেন, তাকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে, কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করতে হবে।
অ্যাডিশনাল আইজি গোলাম নবী মেমেনের প্রশংসা আমি ব্যাপকভাবে করি। তিনি অত্যন্ত পেশাদার লোক। পুলিশের আইজি অপদস্থ হওয়ার কারণে তার ছুটির আবেদন করার পর সিন্ধু পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে ছুটির আবেদন পড়েছে। এটি বিদ্রোহ, পুরোপুরি ও সহজ!
আমরা এখন ক্যাচ-২২ পরিস্থিতিতে আছি। ক্ষমা করা হলে পাল্টা আঘাত হবে, ক্ষমা না করা হলে ভবিষ্যতের জন্য তা উদাহরণ হয়ে থাকবে। পরিণতিতে একটি সঙ্ঘবদ্ধ বাহিনীতে অগ্রহণযোগ্য মতভিন্নতার চেইন রিঅ্যাকশন সৃষ্টি হবে।
দীর্ঘ সময় পর সিন্ধু পুলিশ স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল, তারা দারুণ অফিসারদের সেট পেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদ্রোহমূলক আচরণ অগ্রহণযোগ্য। কেউ যদি তাদের এমন কিছু করার নির্দেশ দিয়ে থাকে, তবে তা আত্মরক্ষামূলক একটি যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা যায়। তবে ওই ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি ওই নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এলইএর মধ্যে এ ধরনের সঙ্ঘাত গৃহযুদ্ধের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
মুসলিম লিগ (নওয়াজ) কর্মীদের মারাত্মক অশোভন আচরণ ছিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যক্তিত্বের প্রতি। অথচ নওয়াজ যে দলের প্রধান, ওই দলটির নেতৃত্বে একসময় ছিলেন কায়েদ। তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করেছিলেন। তবে তা কেবল আইনের শাসনের ব্যাপারে ব্রিটিশ চেতনার জন্য নয়, সেইসাথে আচরণ, ভদ্রতার জন্যও। আর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বজায় রেখেছিলেন।
সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল জিয়াউল হকের নীরব সমর্থনে পাঞ্জাবের গভর্নর লে. জেনারেল গোলাম জিলানি নওয়াজ শরিফকে রাজনীতিতে আনেন। আর তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে তাকে সহায়তা দিয়েছিলেন লে. জেনারেল হামিদ গুল। তিনি ছিলেন ওই সময়ে আইএসআইয়ের ডিজি। নওয়াজ শরিফ কেন সেনাবাহিনীর প্রতি অশ্রদ্ধাশীল ও ক্ষেপে গেলেন, তা রহস্যময়ই রয়ে গেছে। দেশের জন্য প্রতিদিন আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীকে কুলষিত করাটা নওয়াজ ও নওয়াজ লিগের রাজনৈতিক ডিএনএ’র সহজাত অংশে পরিণত হয়েছে।
১৯৯৭ সালেও নওয়াজের লোকজন সুপ্রিম কোর্ট ভবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। আবার সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের বিরুদ্ধে তার দলের এক লোক ভুয়া কাহিনী ফেঁদেছিল। মারিয়ম তো শত শত সোস্যাল মিডিয়া ও টেক বিশেষজ্ঞকে কাজে লাগিয়েছিলেন অন্যায় কাজে।
নওয়াজ শরিফ এখন প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেমেছেন। তারা আসলে ভারতের হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ হিসেবেই কাজটি করছেন।
শরিফ পরিবার এখন তাদের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে এসব কাজ করছেন।
পাকিস্তানে সবকিছুই ভালো নয়। উপর্যুপরি সরকারগুলো আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। এমনকি বর্তমান সরকরারও ভুল থেকে মুক্ত নয়। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, নানা সমস্যা সত্ত্বেও ইমরান খান ভুলকে ঠিক পথে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি তখনই কেবল সফল হতে পারবেন, যখন তিনি দেশের বড় একটি অংশের কাছ থেকে সমর্থন পাবেন।
অবশ্য কিছু কিছু রহস্যের সমাধানও করতে হবে। যেমন ১. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ছাড়া কায়েদের মাজারে সফদরের অশোভন আচরণ করার কথা নয়। তিনি অবশ্যই রাজনৈতিক ইন্ধন পেয়েছিলেন। ২. পাকিস্তান নওয়াজ শরিফকে পলাতক ঘোষণা করার ঘটনাকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তার দল কিছু করার চেষ্টা করছে। ৩. সফদরকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সিন্ধু পুলিশের ভূমিকাও রহস্যময়। তারপর পুলিশের কর্মকর্তাদের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
সিন্ধু পুলিশের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবাদটিই সবচেয়ে বড় ঘটনা। পুলিশ বা সিন্ধু সরকারের কারো কাছ থেকে নির্দেশনা না পেলে তারা এমন কাজ করত না। এখন আমাদেরকে অবশ্যই ডজনদুয়েক দারুণ অফিসারকে এই ঘটনার জন্য বাড়ি পাঠাতে হবে। আর কায়েদ অবশ্যই তার কবর থেকে কষ্ট পাবেন।
লেখক: প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক