আমরা লাইভে English বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০২৩

কোভিড-১৯ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য গ্রেফতার, মামলা ও হুমকির শিকার হয়েছেন ৫৫ ভারতীয় সাংবাদিক: রিপোর্ট

MEDIA-ENG-18-06-2020

আশ্বিনি সাইনি একটি ফেসবুক পেজের কন্ট্রিবিউটর যেখানে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার খবর প্রকাশ করা হয়। 

সাইনি হিন্দি দৈনিক জাগরণেও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। ৮ এপ্রিল ‘মান্ডি লাইভ’ নাম দিয়ে ফেসবুক পেজটিতে একটি ভিডিও রিপোর্ট প্রকাশ করেন তিনি। জেলার সুন্দরনগর সাব-ডিভিশানে আটকা পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে রেশন সরবরাহের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের ব্যার্থতার বিষয়টি তুলে ধরেন তিন রিপোর্টে। 

যদিও রিপোর্টে সরাসরি শ্রমিকদের দেখানো হয়েছে, যারা ক্যামেরার সামনে নিজেরাই তাদের রেশন না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন, এর পরও সুন্দরনগর সাব-ডিভিশানের ম্যাজিস্ট্রেট রাহুল চৌহান ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে সাইনির বিরুদ্ধে ‘ভুয়া খবর’ প্রচারের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেছেন। ক্ষুব্ধ সাইনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয় রাম ঠাকুরের কাছে চিঠি দিয়েছেন, যেখানে এসডিও’র বিরুদ্ধে ‘মিডিয়ার বাক-স্বাধীনতা’য় হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। 

এর পর সাইনির বিরুদ্ধে আরও তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। 

দমে না গিয়ে ১৩ এপ্রিল সাইনি এবং দিব্য হিমাচলের আরেক সাংবাদিক আরেকটি ভিডিও রিপোর্ট প্রচার করে। এই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে লকডাউন নিয়ম পরিস্কারভাবে লঙ্ঘন করে সাব-ডিভিশানে ইট ব্যবসায়ীরা কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ দ্রুত কাজে নেমে পড়ে, ইট ভাটা বন্ধ করে দেয়, কিন্তু সাইনির বিরুদ্ধে ভারতীয় পেনাল কোডের বিভিন্ন ধারায় মামলা দেয়া হয়।

রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য যে গাড়িটি তিনি ব্যবহার করতেন, সেই গাড়িটি জব্দ করা হয় এবং মোটর ভেহিকেল অ্যাক্টের অধীনে তার বিরুদ্ধে আরেকটি এফআইআর দায়ের করা হয়। 

সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনের কারণে সাইনির বিরুদ্ধে এক এপ্রিল মাসের মধ্যে পাঁচটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। পুলিশ এবং বিজেপি-শাসিত রাজ্য এই এফআইআরগুলো দায়ের করেছে। 

দিব্য হিমাচল এলাকার আরেক সাংবাদিক ওম শর্মার বিরুদ্ধেও লকডাউন চলাকালে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। শিল্প নগরী বাড্ডি থেকে ফেসবুকে লাইভ করার কারণে ২৯ মার্চ শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে রাজ্য পুলিশ। ওই লাইভে দেখানো হয়েছিল যে, ক্ষুধার্ত অভিবাসী শ্রমিকরা রাস্তার পাশে বিক্ষোভ করছে। এফআইআরে তার রিপোর্টকে ‘উত্তেজনা সৃষ্টিকারী/ভুয়া খবর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

ফেসবুকে অমর উজালা নিয়ে সংবাদ শেয়ার করার দায়ে ২৬ এপ্রিল শর্মার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় এফআইআর দায়ের করা হয়। এর একদিন পরেই সোলান জেলা প্রশাসনের দোকানপাট বন্ধ সংক্রান্ত নির্দেশনা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের দায়ে তার বিরুদ্ধে তৃতীয় এফআইআর দায়ের করা হয়। 

মিডিয়ায় কর্মরতদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কিছু দমনমূলক ব্যবস্থার মধ্যে এগুলো কয়েকটি মাত্র। বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের এই তৎপরতা চলছে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ‘ভারত: কোভিড-১৯ লকডাউনকালে মিডিয়ার বিরুদ্ধে দমন অভিযান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই সব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

দিল্লী-ভিত্তিক রাইটস অ্যাণ্ড রিস্ক অ্যানালিসিস গ্রুপের (আরআরএজি) তৈরি করা ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রায় ৫৫ জন সাংবাদিক কোভিড-১৯ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের কারণে বা ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার কারণে’ ‘গ্রেফতার, এফআইআর দায়ের, সমন জারি, কারণ দর্শানো নোটিশ, শারীরিক হামলা, কথিত সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও হুমকির’ শিকার হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মে সময়ের এই সব ঘটনাগুলো ঘটেছে। 

বার্ষিক ওয়ার্ল্ড প্রেস সূচকে ভারতের অবস্থানের ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে। প্যারিস-ভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স তাদের ২০২০ সালের সূচকে ভারতকে ১৪২তম অবস্থানে রেখেছে। সেখানে প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলংকাও রয়েছে ভারতের উপরে।