চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেপাল সফর টেকসই বন্ধুত্বের প্রমাণ

চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়ে ফেঙ্গি রোববার নেপাল সফর করেছেন। এটা ছিলো ২০১৯ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাঠমান্ডু সফরের পর সেখানে সর্বোচ্চ কোন চীনা কর্মকর্তার সফর।
ওয়ে প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি ও প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ও ওলির হাতে। তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ফ্রেমওয়ার্ক ও সামরিক বিনিময় নিয়ে কথা বলেন।
নেপালের জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন ওয়ে এবং বলেন যে নেপাল সেনাবাহিনীর অগ্রগতি ও আঞ্চলিক শান্তি-স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীন অব্যাহত সাহায্য দিয়ে যাবে।
তিনি নেপালি সেনাপ্রধান পূর্ণ চন্দ্র থাপার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।
চলমান মহামারির মধ্যে এই সফর অনুষ্ঠিত হয় যাতে দুই বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী তাদের সম্পর্কের তাৎপর্য নিয়ে মুখোমুখি আলোচনা করতে পারে। এই সফর দুই দেশ ও তাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা জোরদার করবে বলে মনে করেন শিঙ্ঘুয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ইন্সটিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেং।
নেপাল এখনো করোনাভাইরাস মোকাবেলা করছে এবং চীনা সেনাবাহিনী দেশটিকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে। এরই মধ্যে নেপাল সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী পাঠিয়েছে পিএলএ।
চীন-নেপাল যোগাযোগের উপর বরাবরের মতেই ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে ভারত। এমন এক সময় ওয়ের সফর অনুষ্ঠিত হলো যখন চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিবাদ চলছে। ভারতীয় মিডিয়া বলছে যে নেপালকে কাছে টানতে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই সফর।
এর একদিন আগেই ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা কাঠমান্ডু সফর করেন। অক্টোবরের শেষ দিক থেকেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নেপাল সফর বেড়ে যায়। এদের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রধান সামন্ত গোয়েলও রয়েছেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছে যে ভারতীয় সফরগুলো বেইজিংকে উদ্বিগ্ন করেছে। তাই ভারসাম্য আনতে তারাও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পাঠাচ্ছে।
ওয়ে’র সফর ভারতের খপ্পর থেকে নেপালকে উদ্ধারের চেষ্টা বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় পত্রিকা দি প্রিন্ট।
অথচ চীন ও নেপাল সেনাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ একেবারেই গতানুগতিক। ২০১৯ সালের জুনে জেনারেল থাপাকে বেইজিংয়ে স্বাগত জানান ওয়ে। নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষমন্ত্রী ঈশ্বর পোখরেল গত বছর জুনে বেইজিংয়ে শিয়াংশান ফোরামে যোগ দেন। তখন দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ২২.৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেন। এতে নেপাল সেনাবাহিনীকে সামরিক সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টানা তিন বছর ধরে দুই দেশের সেনাবাহিনী যৌথ মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
কোন ভিত্তি ছাড়াই সীমান্ত ইস্যুতে নেপালে চীনবিরোধী মনোভাব উষ্কে দেয়ার জন্য নয়া দিল্লীকে অভিযুক্ত করছে বেইজিং। নেপালের তিনটি ভূখণ্ড নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। নেপাল ইতিহাস ও প্রমাণের ভিত্তিতে কূটনৈতিক চ্যানেলে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
আবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত জোট গড়া প্রশ্নে নেপালের ক্ষমতাসীন দলে বিরোধ নিয়ে চীনের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
কিয়ান বলেন, সীমান্ত ইস্যু নিয়ে ভারতের হৈ চৈ করায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে বড় প্রতিবেশী হিসেবে নেপালকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দেয়া চীনের দায়িত্ব।
তিনি আরো বলেন যে, ওয়ের সফর ভারত চীন-বিরোধী কট্টরপন্থীদের জন্য একটি হুঁশিয়ারি। বিশেষ করে যারা চীন ও নেপালের মধ্যে সমস্যা উষ্কে দিতে চায়।