ডিসেম্বরের শেষেও বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য চুক্তি না হওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল এ মাসের শেষ নাগাদ। কিন্তু নেপালি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সন্দিহান। কারণ, তারা মনে করছেন এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় বছর শেষ হয়ে এলেও এই চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ার আশঙ্কা করছে নেপাল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্ট। এতে আরো বলা হয়, গত ৮ই অক্টোবর দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। তাতে প্রস্তাব করা হয়েছিল অগ্রাধিকার বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হবে এ বছরের শেষ নাগাদ। ওই সমঝোতার অধীনে সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর থেকে শুল্কহার কমানোর কথা বলা হয়।
তবে একেবারে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়নি। নেপালের শিল্প, বাণিজ্য ও সরবরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ওই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা কম। অক্টোবরের মিটিংয়ে অন্য সব শুল্কহার বাতিল করার প্রস্তাব করেছিল নেপাল। তারা অগ্রাধিকার বাণিজ্যিক সুবিধা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরে এটাকে এজেন্ডার মূল শর্ত দিয়েছিল। পরোক্ষ খরচের সঙ্গে সাধারণভাবে যুক্ত হয়ে থাকে অন্যান্য শুল্ক চার্জ। নেপালের পক্ষ থেকে এজেন্ডা প্রস্তুতিতে জড়িত এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কিন্তু বাংলাদেশ এই অন্যান্য শুল্ক চার্জ প্রত্যাহার করতে রাজি নয়। বছর শেষ হতে আর দু’সপ্তাহেরও কম সময় আছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা কিছু শুনতে পাইনি। উল্লেখ্য, নেপাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে মসলা, বাঁধাকপি, টমেটো, কিউয়ি, অ্যাভোক্যাডো, কমলা, মসূর ডাল, আচার, স্নাকস, কার্পেট, ডেইরি পণ্য প্রভৃতি। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একজন সদস্য, তাই তারা অন্যান্য শুল্ক চার্জে ছাড় দেয়ার অনুমোদন আছে তাদের। নেপাল থেকে পণ্য রপ্তানিতে যদি এসব অন্যান্য চার্জ প্রয়োগ অব্যাহত থাকে তাহলে মোট চার্জের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকরা ১৩০ থেকে ১৩২ ভাগ। এতে দেশের রাজস্ব কমে যাবে বলে বাংলাদেশ এই অন্যান্য চার্জ প্রত্যাহারে ইচ্ছুক নয়। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হলে তাতে নেপালি পণ্য কোনো সুবিধা পাবে না। তিনি আরো বলেন, নেপাল যেসব বড় ইস্যু উত্থাপন করেছে সেসব বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। আমরা ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে চুক্তি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো নড়চড় নেই। একই মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, অন্যান্য চার্জ প্রত্যাহার না করলে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে নেপাল হেরে যাবে। এ বিষয়ে শর্তাবলীর একটি খসড়া বাংলাদেশের কাছে পাঠিয়েছে নেপাল। কিন্তু বাংলাদেশ তার প্রেক্ষাপটে কোনো জবাব দেয়নি।
উল্লেখ্য, কাকরভিটা-ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ট্রানজিট রুট চালু হয় ১৯৯৭ সালের আগস্টে। এরপরই নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে অধিক পরিমাণ বাণিজ্য করছিল নেপাল। কিন্তু মসুর ডাল রপ্তানি কমে যাওয়ারয় সেই বাণিজ্যে ঘাটতি পড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৫২৯ কোটি রুপির পণ্য আমদানি করেছে নেপাল। অন্যদিকে নেপাল রপ্তানি করেছে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ রুপির পণ্য।