সিপিইসিকে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে চীন ও পাকিস্তান

শুক্রবার পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে মৌখিক বার্তা পাঠান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপি। চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) পলিটিক্যাল পার্টিজ জয়েন্ট কনসালটেশান মেকানিজমের দ্বিতীয় বৈঠক শুরু হওয়ায় প্রেসিডেন্ট আলভি যে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, সে বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট শি। একই সাথে শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপও হয়েছে, যে বৈঠকে সিপিইসির প্রকল্পের কাজে গতি বাড়ার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানানো হয়।
শি বলেছেন, চীন ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক মতৈক্য তৈরির জন্য নিয়মিত যোগাযোগ করছে, যেটা সিপিইসির দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য সহায়ক।
বৃহস্পতিবার সিপিইসি পলিটিক্যাল পার্টিজ জয়েস্ট কনসাল্টেশান মেকানিজমের দ্বিতীয় বৈঠকের পর এই বার্তা দেয়া হয়।
শুক্রবার চীন আর পাকিস্তানের যে কৌশলগত সংলাপ শেষ হয়েছে, সেখানে শীর্ষ এজেন্ডাগুলোর মধ্যে সিপিইসি ছিল বলে ধারণা করা হয়। কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনের কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ চীনের হায়নান প্রদেশে। যৌথভাবে এতে সভাপতিত্ব করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি।
কৌশলগত সংলাপটি খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ দুই পক্ষ মহামারী বিরোধী সহযোগিতা নিয়ে গভীর বিনিময় করবে। অভিন্ন ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো নিয়ে দুই দেশ বিনিময় করবে বলেও বৃহস্পতিবারের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
দুই দেশের মানুষের সুবিধায় বেল্ট অ্যাণ্ড রোড ইনিশিয়েটিভের গতি বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিপিইসি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে যেখানে উচ্চমানের উন্নয়ন, সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা, আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো, এবং বাণিজ্যিক পার্ক, মানব সম্পদ প্রশিক্ষণ, দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য সেবা ও কৃষিতে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
সফরে যাওয়ার আগে কোরেশি বলেন তার এই চীন সফর ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তার এই সফর পাকিস্তান-চীনের সবসময়ের কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে জোরদারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাকিস্তানী মিডিয়া এ তথ্য জানিয়েছে।
চায়না ইন্সটিটিউটস অব কনটেমপোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশান্সের দক্ষিণ এশিয় ইস্যুর বিশেষজ্ঞ ফু শিয়াওকিয়াং গ্লোবাল টাইমসকে শুক্রবার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য চীন এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। এই মুহূর্তে দুই শক্তিশালী মিত্র চীন আর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক আর কৌশলগত দিক থেকে এক সাথে কাজ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সিপিইসির কিছু প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এখই দুই পক্ষই কাজের গতি বাড়িয়ে ওই ঘাটতিটা পূরণ করে নিতে চাচ্ছে।
আগস্টের শুরুর দিকে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটি মেইন লাইন-ওয়ান (এমএল-১) প্রকল্পের অনুমোদন দেনয়। এই প্রকল্পের অধীনে করাচি আর পেশোয়ারের মধ্যে রেললাইনের আপগ্রেড করা হবে। সিপিইসির অধীনে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে।
হিন্দুস্তান টাইমস বলেছে পাকিস্তান আর চীন তাদের সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে অন্যদিকে, ভারতের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।
ফু বলেন, “চীন আর পাকিস্তানের সহযোগিতার ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে ভারত এবং তারা বিশ্বাস করে দেশ দুটি শিগগিরই ভারতের বিরুদ্ধে একজোট হবে; এটা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থানের সাথে এটা মানানসই নয়”।