চীনের সঙ্গে চুক্তি: নবজীবন পেলো পাকিস্তানে ‘বেল্ট অ্যাণ্ড রোড’ প্রকল্প

পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড কর্মসূচি নতুন জীবন পেয়েছে। গত মাসে ১১ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এই কর্মসূচির কাজে ঢিল পড়েছিল। পরে সাবেক এক লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে দায়িত্ব দেয়ার পর এই কর্মসূচি আবারও চাঙ্গা হয়েছে।
২৫ জুন ও ৬ জুলাই দুই দেশ বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে দুটো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে চুক্তি করেছে, যেগুলোর ব্যয় ৩.৯ বিলিয়ন ডলার। আরেকটি প্রকল্প হলো পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক আমলের রেললাইনের সংস্কার প্রকল্প, যেটার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭.২ বিলিয়ন ডলার, যেটা পাকিস্তানে চীনের নেয়া এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর অথরিটি পরিচালনার জন্য গত বছর আসিম সেলিম বাজওয়াকে নিয়োগ দেয় খানের সরকার। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থেকে নিয়ে হাইওয়ে – সব মিলিয়ে ৭০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের দেখভাল করে এই কর্তৃপক্ষ। এপ্রিলের শেষ দিকে খানের মন্ত্রিসভাতেও যোগ দেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এখন যে ডজনাধিক সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত হলেন বাজওয়া।
অগ্রগতি সামান্য
পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বেইজিংয়ের অর্থায়নে যে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব এরই মধ্যে সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চীন সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে নিয়ে গোয়াদরের মরুভূমিতে গৃহীত প্রকল্পগুলোও রয়েছে, যেখানে একটি বন্দর পরিচালনা করছে চীন। বিগত বছর চীনের পরিচালিত তিনটি প্রকল্পে সন্ত্রাসী হামলার পর সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি সেকানে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তাবাদল্যাবের সিনিয়র ফেলো মোশাররফ জাইদি – যিনি আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রিন্সিপাল উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন – তিনি বলেছেন, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, প্রধানমন্ত্রী খান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিপিইসি প্রকল্পের গতি কমে গেছে। নতুন করে বিদ্যুৎ ও অনুমোদনের যে সব অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর প্রায় পুরোটাই হয়েছে চেয়ারপার্সনের তৎপরতার কারণে, এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী খানের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণে”।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানে দিয়ামের ভাসা ড্যামের নির্মাণকাজ শুরু
আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব
দুটো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই নির্মিত হচ্ছে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে, যে অঞ্চলটি প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতের সাথে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে, তার দুইটিই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। গত বছর ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়েছিল, সেটা ছিল এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তীব্রতর।
২.৪ বিলিয়ন ডলারের কোহালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে মুজাফফরাবাদে ঝিলাম নদীর উপর। এর মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরেই দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়ে থাকে। অন্যটি হলো আজাদ পত্তন প্রকল্প। এটিও নির্মিত হচ্ছে একই নদীর উপর এবং সেটা নির্মাণে ব্যয় হবে ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাণ্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো জনাথন হিলম্যান বলেছেন, “চীন আর পাকিস্তান হয়তো ভারতকে ক্ষুব্ধও করছে”। দুটো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই নির্মিত হচ্ছে কাশ্মীরে। আর যে রেলওয়ে প্রকল্পটি আধুনিকীকরণের কথা বলা হচ্ছে, সেটিও গেছে কাশ্মীরের উপর দিয়ে”।
বেশ কিছু দেশই বেল্ট অ্যাণ্ড রোড প্রকল্পগুলো নিয়ে সমস্যায় পড়েছে অথবা তাদেরকে পরিকল্পনায় সংশোধন আনতে হয়েছে। প্রকল্পগুলো নিয়ে দুর্নীতি, ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি, ভারি ঋণের বোঝা, পরিবেশের উপর ক্ষতি এবং স্থানীয়দের বাদ দিয়ে চীনা শ্রমিক আমদানি নির্ভরতার অভিযোগ ওঠার পর সেগুলোতে সংশোধনী আনতে হয়েছে।
চলতি মাসে তিনটি প্রকল্প ঘোষণা দেয়ার বেশ কিছুকাল আগে থেকেই সেগুলো নিয়ে আলোচনা চালানো হচ্ছিল।