কারা সংস্কারে আহ্বান: নারী বন্দীদের মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি শত শত নারী বন্দীদের ছেড়ে দিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। ছোট অপরাধে যারা বিচারের অপেক্ষায় আছে বা কারাদণ্ডের মেয়াদের অধিকাংশ সময় যাদের পেরিয়ে গেছে, সেই সব নারী বন্দীদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
অধিকার কর্মীরা এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে আশাবাদ জানিয়েছেন যে, এতে নারী বন্দীদের সংখ্যা কমে আসবে।
নতুন সরকারী এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, নারী বন্দীরা খারাপ অবস্থার মধ্যে থাকে এবং তাদের সুরক্ষার জন্য আইনগুলো কর্তৃপক্ষ তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। এর প্রেক্ষিতেই নতুন এই নির্দেশ দিলেন খান।
কেন্দ্রীয় মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি নারী বন্দী রয়েছে ১,১২১ জন। এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশেরই চূড়ান্ত রায় হয়নি এবং বিচারের অপেক্ষায় থেকেই তারা কারাভোগ করছে।
যে সব নারী বন্দির কারাদণ্ড তিন বছরের কম আছে, তাদের জন্য আর্থিক জরিমানা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যাতে তারা অবিলম্বে মুক্তি পেতে পারে।
খান একই সাথে ‘বিদেশী বন্দী নারীদের ব্যাপারে তথ্য জানতে চেয়েছেন এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারীদের রায় মানবিক বিবেচনার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে প্রয়োজনে তাদের ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
সংস্কারের প্রয়োজন
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) সরকারের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার বলেছে যে, মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের নারী বন্দীদের প্রতি অসদাচরণের বিষয় উঠে এসেছে। কারা ব্যবস্থার বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “এই সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কিন্তু পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ যদি এর সুপারিশ মেনে ব্যাপক দুর্ব্যবহার বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়, তখনই কেবল পরিবর্তন আসবে”।
সরকারী রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ১৩৪ জন কারাবন্দী নারীর সাথে তাদের বাচ্চাও রয়েছে কারাগারে। এদের কারও কারও বয়স ৯ ও ১০, অথচ আইন অনুসারে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু তাদের সাথে থাকতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, “কারাগারে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দের ঘাটতি রয়েছে। ফলে যে সব নারীর সাথে তাদের সন্তান রয়েছে, তারা সেখানে দরকারি সেবা পান না। ফলে নারী ও শিশু দুজনকেই সেখানে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে”।
ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী
পাকিস্তানে কারাগারগুলোতে বন্দী রয়েছে ৭৩ হাজারের বেশি। বেশির ভাগই সেখানে গাদাগাদি করে আছে। সরকারের হিসেবে সারা দেশে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা হলো ৫৮,০০০।
অধিকাংশ বন্দীই হয়তো বিচারের অপেক্ষায় আছে অথবা তাদের বিরুদ্ধে এখনও রায় হয়নি। সমালোচকরা বলেছেন, পাকিস্তানে মামলা নিষ্পত্তি হতে দশক না লাগলেও বহু বছর লেগে যায়। কারণ দেশে বিচারক, আইনজীবীর ঘাটতির পাশাপাশি রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি, বিশেষ করে নিম্ন আদালতে দুর্নীতি প্রবল।
চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত এক সরকারী প্রতিবেদনেও পাকিস্তানের কারাগারের সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুসারে প্রায় ২,৪০০ জন বন্দী এইচআইভি, হেপাটাইটিস ও যক্ষ্মার মতো রোগে ভুগছে।