‘দুই ফ্রন্টে’ যুদ্ধের ব্যাপারে ভারতের দাবি নাকচ করলো পাকিস্তান

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে যে, তারা চীনের সাথে সঙ্ঘবদ্ধভাবে ভারতকে বিতর্কিত কাশ্মির অঞ্চলে ‘দুই ফ্রন্টের’ যুদ্ধে জড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সিনিয়র সেনাবাহিনীর কমান্ডার উল্টা বুধবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর তারা উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে। এই এলওসির মাধ্যমেই হিমালয় অঞ্চলের পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল পৃথক হয়েছে।
কাম্মীরে পাকিস্তানী সেনাদের শীর্ষ কমান্ডার মেজর জেনারেল আমের আহসান নওয়াজ দাবি করেছেন যে, কাশ্মিরে দুই পক্ষ অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে যে সম্মতিতে পৌঁছেছিল ভারত চলতি বছরে প্রায় ২,০০০ বার সেটা লঙ্ঘন করেছে, এবং বেসামরিক মানুষকে টার্গেট করে তারা হামলা চালিয়েছে এবং এতে বহু ডজন মানুষ হতাহত হয়েছে।
সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে জেনারেল বলেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আকাশপথে ৭৮০ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ রেখা ঘুরে দেখেছে, অনেক জায়গায় গ্রামবাসীরা সীমান্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই সীমান্ত রেখাটি বিশ্বের সর্বাধিক সামরিকায়িত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
“ভারতীয়দের সাথে দুই ফ্রন্টের যুদ্ধে লড়ার কোন মহাপরিকল্পনা আমাদের অন্তত নেই”। নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপরের একটি পোস্টে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
পাকিস্তানী এই জেনারেল বলেন, “ভারতীয়দের একটা ভয় আছে, আর তাদের একটা গল্প রয়েছে, যেটা তারা প্রচার করতে চায়, এবং এটাকে ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে তারা সে ধরণের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে”।
পাকিস্তান ও চীন সম্মিলিতভাবে ভারতের উপর দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে, ভারতের এ ধরণের উদ্বেগ নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নওয়াজ এ মন্তব্য করেন।

ভারত আর চীনের মধ্যে উত্তেজনা কয়েক দশকের মধ্যে নিম্নতম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। গত মাসে হিমালয় অঞ্চলে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে সম্পর্কের এই অবনতি হয়। সেখানে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে দুই দেশের সেনারা এখনও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে মে মাসে বলেন যে, “দুই ফ্রন্টের যুদ্ধের ব্যাপারে বলতে চাই যে, এর সম্ভাবনা রয়েছে”।
পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী একই সাথে দুই ডজন গ্রামবাসীর সাথে সেখানে মতবিনিময়ও করেছে। এই গ্রামবাসীরা সীমান্ত এলাকায় বাস করে এবং বিভিন্নভাবে তারা সঙ্ঘাতের শিকার হয়েছে।
আব্দুল আজিজ নামের এক গ্রামবাসীর ডান হাতে অনেক ক্ষত রয়েছে। তিনি বললেন, “৩ জুলাই রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, যখন ভারতীয় বাহিনী হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে শেল নিক্ষেপ শুরু করে। একটি মর্টার আমাদের পাশের বাড়িতে আঘাত হানে, আমি নিজেও সে সময় আহত হই”।
গ্রামবাসীদের প্রায় সবাই জানান যে, দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় নিত্যদিনের গোলাগুলির কারণে তাদেরকে প্রায় নিয়মিতই আন্ডারগ্রাউণ্ড বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়।
অন্যদিকে, ২০০৩ সালের অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্ত দিয়ে গোলাগুলি শুরুর জন্য পাকিস্তানী সেনাদেরকে দোষারোপ করে থাকে ভারত। বুধবার ভারতীয় কর্মকর্তারা পুঞ্চ জেলায় পাকিস্তানী পক্ষের বিরুদ্ধে ‘বিনা উসকানিতে’ ক্ষুদ্র-অস্ত্র দিয়ে গুলি ও মর্টার শেল বর্ষণের অভিযোগ করে।
নয়াদিল্লীর কর্মকর্তারা নিয়মিত অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তানের জঙ্গিরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সমস্যা সৃষ্টির জন্য সেখানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে থাকে।
ইসলামাবাদ অবশ্য সব সময় এ অভিযোগ নাকচ করে এসেছে।