আমরা লাইভে English বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩

ইন্দো-প্যাসিফিক ফ্রেমওয়ার্কের বিরোধিতায় চীন, কী ভাবছে বাংলাদেশ?

indo-pacific-region-01b33cc77fc4768a364c37c1c458cf5d

গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র-কেন্দ্রিক ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়। প্রথম অবস্থায় আলোচনায় অংশ নিয়েছে ১৩টি দেশ। ওই ফ্রেমওয়ার্কের বিরোধিতা করছে চীন। বাংলাদেশকে ওই জোটে না যেতে ইতোমধ্যে তাদের মতামতও জানিয়েছে দেশটি। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ফ্রেমওয়ার্কটি নিয়ে চিন্তা করছে এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীনের বিরোধিতার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা কারও কথায় যোগ দেবো না, যোগদানে বিরতও থাকবো না। এটি যদি আমাদের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে থাকে ও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষা হয়, তবে যোগ দেবো। কে কী ভাবলো তা ভেবে লাভ নেই।

ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুক্ত হওয়ার বা না হওয়ার বিষয় নয়। এটি এমন নয় যে আমাদের আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে। তারা এটি ঘোষণা করেছে, এখন তারা যাচাই করছে।’

বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আমাদের স্টাডি করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ব্রেইন-স্টর্মিং করতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আলোচনায় বসার সময় যেন ভীত না থাকি এবং ভয়ের কারণে যেন আলোচনায় যোগদানে বিরত না থাকি।’

একটি দেশ যদি আলোচনার টেবিলে না থাকে, তবে আলোচনার ওই বিষয়ে কোনও ভূমিকা রাখতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নির্ভর করছে না। এখন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা রাখার সময় এসেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে।’

সামরিক ফ্রেমওয়ার্ক নয়

শসসের মবিন আরও বলেন, ‘এটি কোনও সামরিক ফ্রেমওয়ার্ক নয়। নিতান্তই অর্থনৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক। ১৩টি দেশ ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। এরমধ্যে ৭টি আসিয়ান দেশ। ওই সব দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’

এছাড়া রয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এদের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা যদি আগেভাগে আলোচনায় যুক্ত হতে পারি তবে এটির নিয়ম-কানুন ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারবো। যদি এর চার্টার বা নিয়ম তৈরি হয়ে যায় এবং তারপর বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে, তবে সেক্ষেত্রে তৈরি করা নিয়মগুলোই মেনে নিতে হবে।’

বাংলাদেশের স্বার্থ হচ্ছে যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, বিনিয়োগ, সাপ্লাই চেইন, বৈধ অভিবাসনসহ অন্যান্য বিষয়। যদি প্রাথমিক অবস্থায় যুক্ত হওয়া যায় তবে সেগুলোর পলিসি তৈরিতে প্রভাব রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

নিরপেক্ষ অবস্থান

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা একটি ধাক্কা খেয়েছে। অনেক দেশ, যেমন- জার্মানি, জাপান তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ওই যুদ্ধের ফলে যে মেরুকরণ হচ্ছে সেটার প্রভাব শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সব দেশেই অনুভূত হবে। এতে নিরপেক্ষ থাকার জায়গা ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।’

অন্তর্ভুক্তিমূলক ফ্রেমওয়ার্ক

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে সমমনা দেশ ছাড়াও অন্য দেশ থেকে যেন আমদানি বা রফতানির সুযোগ থাকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনও সদস্য দেশ জ্বালানি বা অস্ত্র যদি অ-সদস্য রাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করতে চায়, তবে সেটার সুযোগ যেন এই ফ্রেমওয়ার্কে থাকে।