আমরা লাইভে English বুধবার, জুন ০৭, ২০২৩

‘দোজ ওয়্যার দ্য ডেইজ’: সচেতনতার জন্য মিউজিক ভিডিও - মিলিয়ন মানুষের জন্য মিলিয়ন মাস্ক

SAM SPECIAL-12-06-2020

কৌশিকী চক্রবর্তী

দোজ ডেইজ অব দ্য পাস্ট
ক্যান উই এভার ফরগেট?
হোয়াট দ্য আইজ স, দ্য হার্ট ফেল্ট,
উই ক্যাননট ফরগেট।

‘পুরনো সেই দিনের কথা’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী একটি গান।

স্কটিশ জাতীয় কবি রবার্ট বার্নসের ‘অল্ড ল্যাং সাইন’ গানটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই গানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

বার্নসের কথাগুলো ইংরেজিভাষী দুনিয়ায় নতুন বছরের উদযাপনের সাথে সমার্থক হয়ে গেছে। এই কথাগুলোর মধ্যে তরুণকালের পুরনো বন্ধুদের সাথে পানীয় বিনিময় আর বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারের বিষয়গুলোকে স্মরণ করা হয়েছে। এটা বন্ধুদের একটা পুনর্মিলনী।

লন্ডন-ভিত্তিক একটি সাংস্কৃতিক গ্রুপ গানের নতুন ভার্সনটির সাথে একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছে। গানটি রবীন্দ্রনাথের ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ গান এবং বহু পুরনো অল্ড ল্যাং সাইনের গানের হিন্দু অনুবাদকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ আজও ‘স্বাধীনতার’ স্বপ্ন দেখে সিকিমের জাতীয়তাবাদীরা

‘দোজ ওয়্যার দ্য ডেইজ’ শিরোনামের এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আইসোলেশানে থাকা মানুষদের জন্য যারা তাদের পরিবারের সদস্য বন্ধুদের সাথে মিলিত হতে চায়, কিন্তু সেটা তারা করতে পারছে না।

ভারত ও ব্রিটেনের মিউজিক এবং সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কিছু বড় বড় ব্যক্তি এই কাজের পেছনে একত্র হয়েছেন এবং কঠিন এই লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে ঐক্যের মনোভাব দেখিয়েছেন।

এই মিউজিক ভিডিওটি তৈরি করেছে লন্ডন-ভিত্তিক সংগঠন বৈঠকইউকে। অলাভজনক প্রভাবশালী এই সাংস্কৃতিক গ্রুপটি ব্রিটেনে দক্ষিণ এশিয়ার সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কাজ করছে। তারা ব্রিটেন ও ভারতের বেশ কিছু শিল্পীকে একত্রে নিয়ে এসেছেন এবং এই কাজের মাধ্যমে ভারতের দুটো চ্যারিটির জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে, যে চ্যারিটিগুলো সব বয়সের ও সমাজের সকল পরিবেশ থেকে উঠে আসা অসহায় মানুষদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারী যাদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

বৈঠকইউকে ভারতের উত্তর প্রদেশের দুটো চ্যারিটির সাথে জোট বেঁধেছে। চ্যারিটি দুটো হলো ‘কোলকাতা গিভস’ ও ‘মিজওয়ান ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। এক মিলিয়ন মানুষকে এক মিলিয়ন মাস্ক দেয়ার জন্য তারা তহবিল সংগ্রহ করছে।

মিউজিক ট্র্যাকে কাজ করার জন্য বৈঠকইউকে বেশ কতগুলো সৃজনশীল মানুষকে তুলে এনেছে। এর মধ্যে বহু পুরনো ‘অলড ল্যাং সাইন’, রবীন্দ্রনাথের বাংলা গান ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ এবং এবং বিশিষ্ট কবি-গীতিকার-স্ক্রিপ্টরাইটার জাভেদ আখতারের নতুন হিন্দি অনুবাদ– ‘বিতে দিনো কা’কে একত্র করা হয়েছে। মিউজিক ভিডিওর শিল্প নির্দেশক ও চলচ্চিত্রকার সংগীতা দত্ত এ তথ্য জানিয়েছেন।

“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম বার্ষিকীতে মিউজিকের ঐক্যের শক্তিকে উদযাপনের জন্য বৈঠকইউকে আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত ফোক গান স্কটিশ জাতীয় কবি রবার্ট বার্নসের ‘অল্ড ল্যাং সাইন’, রবীন্দ্রনাথের বাংলা গান আর বৈঠকইউকের জন্য বিশেষভাবে লেখা কিংবদন্তী কবি জাভেদ আখতারের নতুন হিন্দি অনুবাদকে একসাথে নিয়ে এসেছে”, লন্ডন থেকে ফোনে সাউথ এশিয়ান মনিটরকে এ কথা জানান দত্ত।

Lifts-01 SAM Special ‘দোজ ওয়্যার দ্য ডেইজ’ সচেতনতার জন্য মিউজিক ভিডিও - মিলিয়ন মানুষের জন্য মিলিয়ন মাস্ক

বলিউডের গায়ক ও কম্পোজার শঙ্কর মহাদেবন প্রথমবারের মতো রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছেন কৌশিকী চক্রবর্তীর সাথে, যিনি ভারতের তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ক্লাসিক্যাল গায়ক। তাদের সাথে রয়েছেন সঙ্গিতা দত্ত ও সৌমিক দত্ত, যারা এই ট্র্যাকটির জন্য মিউজিক কম্পোজ করেছেন।

সঙ্গীতা দত্ত সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, “এই লকডাউনের সময়ে বেশ কিছু শিল্পী বৈঠকের ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং ভিডিও তৈরি করা হয়েছে শিল্পীদের ফোনে বা বাড়ির স্টুডিওতে গান গাওয়ার ভিডিও ফুটেজ দিয়ে”।

ব্রিটেন ও ভারতের ২৫ জনের বেশি অভিনেতা, গায়ক, মিউজিক কম্পোজার এবং ভারতের ক্লাসিক্যাল নৃত্যশিল্পীরা লকডাউনের কারণে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত নিজেদের বাড়ি থেকে এই গানে অংশ নিয়েছেন।

অভিনেতা বিদ্যা বালান মূল বার্তাটি দিয়েছেন– ‘সবার জন্য মাস্ক’। অন্যদিকে অভিনেতা শাবানা আজমী, শর্মীলা ঠাকুর এবং অভিনেতা-পরিচালক অপর্না সেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃতি করেছেন এবং মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করে নিরাপদ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভিডিওতে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের ভিডিওও ব্যবহার করা হয়েছে।

বাংলা অংশের জন্য কৌশিকী চক্রবর্তীর সাথে যোগ দিয়েছে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক, জনপ্রিয় অভিনেতা-পরিচালক পরমব্রত চ্যাটার্জি, বাংলা রক স্টার রুপম ইসলাম এবং খুবই জনপ্রিয় সাঙ্গীতিক জুটি সৌম্যজিৎ দাস ও সৌরেন্দ্র মুল্লিক।

এই গ্রুপের সাথে যোগ দিয়েছেন অভিনেতা-নৃত্যশিল্পী শ্রীনানন্দ শঙ্কর।

অল্ড ল্যাং সাইন উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক সোপরানো গায়ক প্যাট্রিসিয়া রোজারিও, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সঙ্গীতা দত্ত, সরোদ বাদক-কম্পোজার সৌমিক দত্ত এবং মিউজিক্যাল থিয়েটার আর্টিস্ট শাশা ঘোষাল।

শিল্পীরা দর্শকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা নিরাপদে থাকেন এবং মাস্ক পরিধানের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মেনে চলেন।

“রবার্ট বার্নসের ফোক গান ‘অল্ড ল্যাং সাইন’ গানটির প্রতিপাদ্য হলো বন্ধুদের সাথে পুনর্মিলন। আমরা সবাই এখন আমাদের পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিলিত হতে চাই, কিন্তু সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, রোগ ও মৃত্যুর কারণে আমরা এখন সেটা পারছি না”, সাউথ এশিয়ান মনিটরকে এ কথা জানান দত্ত। প্রয়াত লেখক-পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি দ্য বার্ড অব ডাস্ক তথ্যচিত্রের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন দত্ত।

“ভারতের হাজার হাজার অভিবাসী ও দিনমজুর যারা ঘরবাড়ি থেকে দূরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, যারা তাদের বাড়িতে যেতে পারছে না এবং পরিবারের সাথে দেখা করতে পারছে না, তাদের কথা ভেবে এই গানটি করা হয়েছে।

“বিভিন্ন স্থান ও কালের শিল্পীদেরকে ভার্চুয়াল কমিউনিটিতে একত্রিত করার মাধ্যমে আমরা এই কঠিন সময়টাতে একটা ইতিবাচক ও শৈল্পিক বার্তা দিতে পারবো”।

মিউজিক ভিডিওর জন্য রবীন্দ্রনাথের কালোত্তীর্ণ গানটির হিন্দি অনুবাদ করেছেন গীতিকার জাভেদ আখতার। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের গান অনুবাদের চ্যালেঞ্জ হলো এর সহজতা, বিশুদ্ধতা, ভালোবাসার এই যাদুকরী কবিতাকে বজায় রাখা।

Lifts-02 SAM Special‘দোজ ওয়্যার দ্য ডেইজ’ সচেতনতার জন্য মিউজিক ভিডিও - মিলিয়ন মানুষের জন্য মিলিয়ন মাস্ক

“কিভাবে এক ভাষা থেকে এটাকে অন্য ভাষায় নেয়া সম্ভব? কেউ একজন অত্যন্ত সঠিকভাবে বলেছেন যে, এক পাত্র থেকে আরেক পাত্রে ধূপ যত সাবধানেই ঢালা হোক না কেন, এর কিছু সুগন্ধ বাতাসে হারিয়ে যাবে।

“কিন্তু এটা রবীন্দ্রনাথের মিউজিক, এর সুগন্ধ সেইভাবে হারাতে পারে না”, বললেন বহু পুরস্কার জয়ী কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্য লেখক জাভেদ আখতার। সঙ্গীতা দত্তের ফিচার ফিল্ম ‘লাইফ গোজ অন’র জন্যও তিনি রবীন্দ্রনাথের গান হিন্দিতে অনুবাদ করেছিলেন।

মিউজিক ভিডিওর জন্য প্রথমবারের মতো রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছেন শঙ্কর মহাদেবন। ‘কি অসামান্য গান’ – এভাবেই উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন তিনি।

মহাদেবন বলেন, “গানের সুরটা দারুণ ভালো লেগেছে, আর খুব আনন্দ নিয়ে গেয়েছি”।

বাংলা পরিবারে বড় হয়েছেন ক্লাসিক্যাল ভোকালিস্ট কৌশিকী চক্রবর্তী। এই ট্র্যাকের জন্য বাংলা ও হিন্দি দুই ভার্সনেই গেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান হিন্দিতে গাওয়াটা আমার জন্য একটা আনন্দের অর্জন, আবার সেটাও এসেছে জাভেদ আখতারের কাছ থেকে।

“বৈঠকইউকে’র এই প্রডাকশানে কাজ করাটা, সকল অংশগ্রহণকারীর সাথে কাজ করাটা অনেক সম্মানের এবং একই সাথে সেটা একটা বড় দায়বদ্ধতা কারণ সঙ্গীদের একটা বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার শক্তি রয়েছে।”

তিনি বলেন, “মাস্ক নিরাপত্তা সচেতনতা তৈরির জন্য এই কাজটা করতে পেরে আমি আনন্দিত এবং সকল চ্যারিটির জন্য আমার শুভ কামনা”।

সৌমিক দত্ত বলেন, লকডাউনের কারণে এই স্বনামধন্য কণ্ঠস্বরগুলোকে একত্র করাটা একটা চ্যালেঞ্জিং ও উত্তেজনাকর বিষয় ছিল, যেটা একাধিক ভাষার প্রবাহের মধ্য দিয়ে গেছে। এই ভিডিওর জন্য মিউজিক কম্পোজ করেছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক কম্পোজার, সরোদ বাদক ও টেলিভিশনের উপস্থাপক সৌভিক দত্ত সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, “এটা আসলে সঙ্গীতের শক্তি যেটা সামাজিক দূরত্বকে অতিক্রম করে মানুষকে সারিয়ে তোলে”।

তার সবশেষ অ্যালবামের নাম ‘জঙ্গল’। বন উজার ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে এই অ্যালবামটি তৈরি করেছেন তিনি। ভারতীয় মিউজিক নিয়ে তার ট্রালেলগ ‘টিউনিং টু-ইউ’ চ্যানেল ফোরে এবং সনি বিবিসি আর্থ এবং রিদমস অব ইন্ডিয়ায় (বিবিসি ফোরে) প্রচারিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ প্রতিবেশীদের দূরে ঠেলে দিয়েছে মোদি সরকারের পেশী শক্তির পররাষ্ট্রনীতি

সঙ্গীতা দত্ত জানান, এই মিউজিক ভিডিওর চিন্তা থেকে শুরু করে শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ, রেকর্ডিং ও সম্পাদনা করতে তিন সপ্তাহ সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, “লন্ডনে আপনি সত্যিই রবার্ট বার্নস/রবীন্দ্রনাথ/জাভেদ আখতারের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক বিনিময়ের অনুভূতি পাবেন, যেন তারা গানের মধ্য দিয়ে বাক্যালাপ করছেন”।

“কাজটা ছিল পরিশ্রমলব্ধ কিন্তু লকডাউনের মধ্যে এই ভিডিওটি তৈরি করা, বিভিন্ন শিল্পীকে একসাথে নিয়ে আসা এবং মিউজিকের শক্তির মাধ্যমে একটা জরুরি বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি ছিল একটা এক্সাইটিং বিষয়। কোলকাতা গিভস ও মিজওয়ান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির জন্য আমার শুভ কামনা”।