আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, জুন ০৬, ২০২৩

বোরকা ও মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা

2768tyty

জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকার জনসমক্ষে বোরকা ও নিকাবসহ সবধরনের মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

দেশটির জন নিরাপত্তা মন্ত্রী সারাত উইরাসেকারা বিবিসিকে বলেছেন, বোরকা নিষিদ্ধ করার নির্দেশে তিনি সই করেছেন। সেটি কার্যকর করতে পার্লামেন্টের অনুমোদন লাগবে।
 
মন্ত্রী বলেন, খুব দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশা করছেন। 
 
প্রায় দু'বছর আগে খ্রিস্টানদের ইস্টার সানডে উৎসবের দিন শ্রীলঙ্কায় হোটেল ও কয়েকটি গির্জার ওপর সমন্বিত হামলার পর দেশটির সরকার এই উদ্যোগ নিচ্ছে। 
 
২০১৯ সালে এপ্রিল মাসে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা ক্যাথলিকদের গির্জা ও পর্যটকদের হোটেল লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সে হামলায় প্রাণ হারায় আড়াইশ'র বেশি মানুষ। ইসলামিক স্টেট জঙ্গী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করে।
 
কর্তৃপক্ষ জঙ্গীদের ধরতে অভিযান চালায় এবং সেসময় বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে জরুরিকালীন পদক্ষেপ হিসাবে সবধরনের মুখ ঢাকা পোশাক পরার ওপর স্বল্পমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। 
 
এখন দেশটির সরকার এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে চালু করার উদ্যোগ নিল।
 
উইরাসেকারা সাংবাদিকদের বলেন যে বোরকা 'দেশটিতে সাম্প্রতিককালে ধর্মীয় উগ্রবাদের একটা লক্ষণ'। তিনি আরও বলেন যে এটা 'জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি' তৈরি করছে এবং স্থায়ীভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। 
 
''ফলে আমি এই নির্দেশে সই করেছি এবং খুব শিগগির এটি বাস্তবায়িত হবে,'' তিনি বলেন।
 
উইরাসেকারা আরও জানান, সরকার ১০০০ এর বেশি মাদ্রাসা বন্ধ করারও পরিকল্পনা করেছে। তিনি বলেন, এই মাদ্রাসাগুলো জাতীয় শিক্ষা নীতি লঙ্ঘন করছে। 
 
"যে কেউ স্কুল খুলে শিশুদের যা খুশি পড়াতে পারে না। সরকারের শিক্ষা নীতি মেনে সব স্কুলে পাঠদান করতে হবে।" 
 
শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদ বিবিসিকে বলেন, ধর্ম বিশ্বাস যার যেটাই হোক না কেন মুখ ঢেকে চলাফেরা করার অধিকার প্রত্যেকের আছে।
 
"অধিকারের বিচারে সেটা বিবেচনা করতে হবে, শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা বিচার করলে হবে না।"
 
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসঙ্গে হিলমি আহমেদ জোর দিয়ে বলেন, দেশটির অধিকাংশ মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে নিবন্ধিত। 
 
"হয়ত মাত্র ৫% প্রতিষ্ঠান সরকারের শিক্ষা নীতি মেনে চলছে না এবং তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে," যোগ করেন তিনি  

সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ পরিকল্পনার আগে গত বছর শ্রীলঙ্কা সরকার নির্দেশ দিয়েছিল, কোভিড-১৯ এ কেউ মারা গেলে তার মরদেহ বাধ্যতামূলকভাবে দাহ করতে হবে, যেভাবে দেশটির বৌদ্ধদের অন্তেষ্ট্যি করা হয়। মুসলিমরা কোভিডে মৃতদের দাফন করতে পারবে না। 
 
আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে এ বছর শ্রীলঙ্কা সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

এতে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচারের আওতায় আনার আহবান জানানো হয় এবং দেশটিতে ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা নেবারও আহবান জানানো হয়। 

শ্রীলঙ্কায় ১৯৮৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলা ওই গৃহযুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই ছিল সংখ্যালঘু তামিল সম্প্রদায়ের বেসামরিক মানুষ।

দেশটির সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করেছে এবং সদস্য দেশগুলোকে এই প্রস্তাব সমর্থন না করার অনুরোধ জানিয়েছে।