আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

পরিবর্তনশীল সমীকরণ

VISTA-ENG-24-07-2020-1

পাকিস্তানের নিকট প্রতিবেশীর ভূরাজনৈতিক সমীকরণ পরিষ্কারভাবে বদলে যাচ্ছে এবং যারা এই দেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেন তারা এখন অবশ্যই এখন নিশ্চিত হতে চাইছেন যে আমরা উদীয়মান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মতো ভালো অবস্থায় আছি। গত কয়েক দিনের খবরে প্রকাশ পেয়েছে যে চীন ও ইরান ২৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। এতে অর্থনৈতিক ও সামরিক বিষায়াদিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অধিকন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক আরো স্থবির হতে যাচ্ছে। অনেকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের কথাও বলছেন। যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকান মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণের জন্য হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। চীন একে নীতিবিগর্হিত কাজ হিসেবে অভিহিত করেছে। অধিকন্তু, যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক এক সফরে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও চীনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরান ও চীনের সাথে পাকিস্তানের সীমান্তের বিষয়টি বিবেচনা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সম্পর্কের বিষয়টি মাথায় রেখে ইসলামাবাদের উচিত হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আন্তর্জাতিক দাবার কোর্টে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কার্ডগুলো খেলা। 

কয়েক শ’ বিলিয়ন ডলার মূ্ল্যের ইরান-চীন চুক্তিটি পাকিস্তানের জন্য দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। চীনের সাথে আগেই পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো ছিল। এখন ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অবয়বে একুশ শতকের সিল্ক রোড নির্মাণ করতে চাচ্ছে। এতে বেইজিং থেকে সারা দুনিয়ায় বাণিজ্য রুট ছড়িয়ে পড়বে। সিপিইসি যখন একই উদ্দেশ্যে কাজ চলছে, তখনই ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন চাচ্ছে চীন।

অন্যদিকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন অবরোধে সঙ্কটে থাকা তেহরান আনন্দের সাথে বৈদেশিক বিনিয়োগ গ্রহণ করবে, এবং তার তেল ও গ্যাস বিক্রি করতে চাইবে। এই সম্পর্ক উন্নয়নে পাকিস্তান ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। সেইসাথে দক্ষিণ এশিয়া ও উপসাগরীয় বন্দরগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও বাণিজ্য করিডোরের কাজ করতে পারবে পাকিস্তান।

তবে বিনিময়ে কিছু করতে হবে। চীনের ব্যাপারে যুদ্ধংদেহী অবস্থায় আছে যুক্তরাষ্ট্র। আর চার দশক ধরে ইরান হলো যুক্তরাষ্ট্রের অপছন্দের দেশ। সিপিইসি সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র আগেই করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ যাতে করতে না হয়, সেজন্যই ইরানি প্রকল্পগুলো থেকে সরে এসেছে ভারত।

আঞ্চলিক উন্নয়নের সুবিধা গ্রহণ করার জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন কিছু কুশলী কূটনীতি। আঞ্চলিক একীভূতকরণ এই দেশকে সহায়তা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে হবে যে আমেরিকার সাথে সম্পর্ককে পাকিস্তান মূল্যবান মনে করলেও ইসলামাবাদ নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের অপছন্দনীয় আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না।

ভারতের উচিত হবে তার বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখা। সে কি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হওয়ার কল্পনার পেছনে ছুটবে? নাকি সে তার প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে বাস করবে?