আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

ভারতীয় টিভির মতো বিকৃতিকরণ

VISTA-ENG-11-07-2020

বিগত কয়েক দিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে জনতা সমাজবাদী দলের নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপেন্দ্র যাদবকে ভারতীয় টেলিভিশনের এক সংবাদিক প্রশ্ন করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হাউ ইয়ানকির ‘ফাঁদে’ পড়ে গেছেন কি না। জবাবে যাদবকে হাঁ বলতে দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে। নিজের জবাবে কিছুটা ইতস্তত যাদবকে মনে হচ্ছে প্রশ্নকর্তার ভাষাকে সম্ভবত তিনি বুঝতে পারেননি। কিন্তু এরপরও প্রশ্নকর্তার শব্দের খেলার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে যাদব নিজেকে এবং রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ট্রল করেন। যাদবের দায়িত্বজ্ঞানহীন জবাব – যেটা নেপালের নেতাদের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে, সেটাকে বাদ দিলেও, প্রধানমন্ত্রী ওলি এবং রাষ্ট্রদূত হাউয়ের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই, তাদের উভয়েই ডানপন্থীদের এবং জাতীয়তাবাদী ভারতীয় টেলিভিশনের একাংশের মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়ে আসছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। 

বিতর্কিত লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুরি এবং কালাপানি এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেপাল নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মানচিত্র প্রকাশের পর থেকেই ভারতের জাতীয়তাবাদী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রধানমন্ত্রী ওলির বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করেছে। একজন অপপ্রচারকারী-সাংবাদিক সত্য থেকে কতদূর যেতে পারে, তার উপর নির্ভর করে তার অভিযোগের ধরন: ধরেই নেয়া যায় ওলি চীনের ইঙ্গিতে কাজ করছেন, চীনের কাছে নেপালকে বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি, চীনকে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন তিনি, এমনকি পাকিস্তানের ভারত-বিদ্বেষী মনোভাবকে ব্যবহার করে দক্ষিণের প্রতিবেশীকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন তিনি। 

প্রতিটি দিনই জাতীয়তাবাদী কোন মিডিয়া ওলির বিরুদ্ধে নতুন কোন মিথ্যা প্রচারণা নিয়ে হাজির হচ্ছে। দিল্লী বা মুম্বাইয়ের স্টুডিওতে বসে ওলির পদত্যাগের দিন-তারিখ ঘোষণা করতে তাদের কোন ইতস্তত বোধ হচ্ছে না। তাদের অনেকে এমনকি ওলিকে পদত্যাগ পর্যন্ত করতে বলছেন। মনে হচ্ছে, টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট অর্জনের জন্য ওলি তাদের সামনে নতুন বিষয় হিসেবে হাজির হয়েছেন, যেটার বিরুদ্ধে তাদের অবশ্যই লড়তে হবে। তাদের টার্গেট হওয়ার ক্ষেত্রে এবং টিআরপি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওলি অবশ্য অব্যাহতভাবে তাদের রসদের উৎস হয়ে উঠেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওলি সঠিকভাবেই নেপালিদের মধ্য থেকে ইট-পাটকেল আর ফুলের তোড়া উভয়ই পাচ্ছেন। কিন্তু প্রপাগান্ডা চ্যানেলগুলো যেভাবে তার পেছনে লেগেছে, সে রকম উদাহরণ আর দেখা যাবে না। 

মিথ্যা অপপ্রচার করতে গিয়ে অপপ্রচারকারীরা রাষ্ট্রদূত হাউয়ের আচরণ নিয়েও আজেবাজে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রদূতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কূটনৈতিক মহলে হয়তো প্রশ্ন তোলা যেতে পারে বা বিতর্ক হতে পারে, যেটা ভারতীয় কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে সবসময় হয়েছে, যখন তারা নেপালের রাজনীতিবিদদের সাথে একইভাবে দেখা-সাক্ষাত করেছেন। কিন্তু চীনা রাষ্ট্রদূতকে বিষকন্যা বলা, ওলির সাথে তার ছবি দেখানোর মাধ্যমে বোঝা যায় ভারতের সংবাদকক্ষের মানুষগুলোর মধ্যে কি ধরণের নারীবিদ্বেষ জমে আছে। একজন পেশাজীবী হিসেবে, একজন নারী ও মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রদূত হাউয়ের মর্যাদাকে অবশ্যই কঠোরভাবে রক্ষা করতে হবে, এবং মিডিয়াতে যেটা শুরু হয়েছে, সমাজের সকল পক্ষের উচিত হবে তার কঠোর নিন্দা করা। 

এই অপপ্রচারের মাধ্যমে ভারতীয় টেলিভিশন মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও চরিত্রের গভীর সঙ্কটটিও সামনে উঠে এসেছে। দীর্ঘ দিন ধরে তারা এই ধারনাটা দলে পিষে এসেছে যে, তাদের একমাত্র দায় থাকা উচিত সত্যের প্রতি, কোন ব্যক্তি, দল বা সরকারের প্রতি নয়। সত্য সন্ধানের জায়গা থেকে যত বেশি তারা দূরে সরে যাবে, নাগরিকদের চোখ আর কানের ভূমিকা পালনের জায়গা থেকে তত দূরে সরে যাবে তারা।