কলঙ্কিত প্রতিভা নিজ প্রজন্মের সেরা

ডিয়াগো ম্যারাডোনা তার প্রজন্মের শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার এবং বিশ্বের এ যাবতকালের সেরা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বুধবার ৬০ বছর বয়সে তার মৃত্যুটি অনেক আগেই হয়েছে। তবে ক্রীড়াবিশ্বের এই কলঙ্কিত প্রতিভা নিশ্চিতভাবেই জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করেছেন।
আর্জেন্টিনা তার এই জাতীয় নায়কের মৃত্যু উপলক্ষে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে, তার লাশ ১০ লাখের বেশি লোক দেখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবস্থানের ফুটবল ফ্যানরা এই ক্ষতি অনুভব করবে। চীনা ফ্যানদের মধ্যে তার বিশেষ স্থান ছিল। তারা সামাজিক মাধ্যমে তাদের মনের কথা জানিয়েছেন।
১৯৮০-এর দশকে চীনের উন্মুক্ততা শুরু হওয়ার সময়ই ম্যারাডোনার উত্থান। চীনা ফ্যানরা তখন সবেমাত্র টেলিভিশন কেনা শুরু করেছে। তারা টিভিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে থাকায় ম্যারাডোনা তাদের নজরে পড়ে। তিনি ছিলেন দেং জিয়াওপিংয়ের প্রিয় খেলোয়াড়। এই চীনা মহান নেতা ম্যারাডোনাকে ১৯৮৭ সালে চীন সফর ও খেলার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু ম্যারাডোনা এ জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার ডলার দাবি করেন। পরিমাণটি খুব বেশি হওয়ায় তা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি পরে চীন সফর করেছিলেন, হংকংয়ে একটি ম্যাচও খেলেছিলেন।
ম্যারাডোনা যে ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শন করেছিলেন, তা যারা দেখেছে, তারা কখনো সে কথা ভুলবে না। তিনি ১৯৮৬ সালে দুর্দান্তভাবে বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার করা গোল দুটি প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে।
তার প্রথম গোলটি ছিল অবৈধভাবে, হাত দিয়ে করা। এটা ‘হ্যান্ড অব গড’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। দ্বিতীয় গোলটি ছিল অবিশ্বাস্য। তিনি ৫ ইংরেজ খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে গোল করেন। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা গোলগুলোর একটি। আরো তিনটি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করেন ম্যারাডোনা। তিনি ক্লাব পর্যায়ে বার্সেলোনা ও ন্যাপোলিতে খেলেছেন। এসব ক্লাবেও তার অবদানের কথা এখনো স্মরণ করা হয়।
তবে তার চরিত্রে মোটা দাগে আরেকটি বিষয়ও ছিল। তার ড্রাগ আসক্তি ও অ্যালকোহল পান তার দেহে মারাত্মক ক্ষতি করে। তার ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যায়। তিনি যদি আজকে খেলতেন, যেখানে শীর্ষ ফুটবলাররা তাদের নিজস্ব বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে থাকেন, সতর্কভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করেন, তবে তার জীবন হয়তো ভিন্ন হতো। কিংবা হতো না।
তার সব ত্রুটি সত্ত্বেও ম্যারাডোনা ওই অল্প কিছু লোকের মধ্যে থাকবেন, যারা তাদের নিজেদের জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। চীনের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন যথাযথভাবেই তাকে অভিহিত করেছে, ‘ফুটবলের সম্রাট’।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট