আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে খুনের পরও পুলিশকে রেহাই দিচ্ছে

how-the-supreme-court-lets-cops-get-away-with-murder

জর্জ ফ্লয়েডের দেহ থেকে প্রাণ বের না হওয়া পর্যন্ত তার গলা পা দিয়ে প্রায় ৯ মিনিট চেপে রাখা মিনেয়াপলিসের ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে থার্ড ডিগ্রি খুন ও নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ন্যায়বিচারের পথে এটি একটি পদক্ষেপ। যারা প্রাণ কেড়ে নেয়, তাদের উচিত, একই ধরনের বিচারের মুখে পড়া। গ্রেফতার করা একটি বিরল ঘটনা। বস্তুত পুলিশের পোশাক পরে অন্যদের ওপর নৃশংসতা চালায় বা হত্যা করে, এমন পুলিশ অফিসারেরা খুব কমই কোনো ধরনের পরিণাম ভোগ করেন। আর আমেরিকার আইনব্যবস্থা যে কত বেআইনি, তাই এটা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর পর মৃত্যুর পর রাজপথের বিক্ষোভকারীদের অভিন্ন সংযম হলো: ‌‘বিচার না হলে শান্তি নয়।’ ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতিতে শান্তি আসতে পারে না।

মি. ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় কয়েক ডজন নগরীতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সহিংসতাতেও রূপ নেয়। লুইসভিলে অন্তত সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ওহাইয়োর রাজধানীতে জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। মিনেয়াপলিসের একটি থানায় আগুন দেয়া হয়েছে। এই নগরীতে ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যরা আবার রাস্তায় টহল দেয়া শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট শুক্রবার টুইট করেছেন যে ‘যখন লুটপাট শুরু হয়, তখন গুলি শুরু হয়ে যায়।’ তার এই বক্তব্য সমস্যাটি আগেই সমাধানের কথা বলে।

আরও পড়ুনঃ কোভিডে কতজন মারা গেছে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করবেন না

নানা কারণে পুলিশ অফিসারেরা ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হন না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী পুলিশ ইউনিয়ন, সহকর্মীদের রক্ষায় পুলিশ অফিসারদের নীরবতা, ভীরু আইনজীবী, বিচারকদের অনীহা।

তবে সুপ্রিম কোর্টই কার্যত পুলিশ অফিসারদের সীমাহীন ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে, তারা চাকরিকালীন সব ধরনের দায়মুক্তি পেয়ে আসছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে। আর এ কারণেই তারা অনেক ঘটনা ঘটাতে পারছেন।

আর ১৯৬৭ সালে মিয়ামির পুলিশপ্রধান বলেছিলেন যে ‘যখন লুটপাট শুরু হয়, তখন গুলি শুরু হয়ে যায়।’ তার এই কথাটি প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছে। তিনি এই কথা বলেছিলেন নাগরিক অধিকারের জন্য বিক্ষোভকারীদের। আর তখনই সুপ্রিম কোর্ট পুলিশকে দায়মুক্তি দিয়েছিল। তারপর মিসিসিপিতে নাগরিক অধিকারের জন্য আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের সহিংসতা নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে পুলিশ অফিসারেরা যদি বিশ্বস্ততা ও সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য কাজ করেন, তবে তারা আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন না।

কিন্তু বিশ্বস্ততার মানদণ্ড পূরণ করা কঠিন। আবার অনেক আদালত অন্য আদালতের রায়কে প্রতিষ্ঠিত রীতি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। অথচ নাগরিক অধিকার আইনে এ ধরনের কিছু নেই। আর ওই ধরনের রীতির কারণেই ফরিয়াদিরা কেবল হেরেই চলে।

পাঁচ দশক ধরে চলা ওই মতবাদের রেশ ধরে পুলিশের সব ধরনের অসদাচরণকে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। এমনকি নরহত্যা পর্যন্ত অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। পুলিশের অসদাচরণের বিরুদ্ধে মামলাকারীদের জন্য মানদণ্ড ক্রমাগত উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর সুপ্রিম কোর্টের বিধান নিম্ন আদালতে অনুসরণ করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে রয়টার্সের এক বড় ধরনের তদন্তে দেখা যায় যে ২০০৫ সাল থেকে পুলিশকে বাড়াবাড়ি রকমের শক্তিপ্রয়োগের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান হারেই দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা আরো বেড়েছে।

আরও পড়ুনঃ সঙ্কটকালে চেনা যায় সত্যিকারের নেতাদের

বেশির ভাগ পুলিশ অফিসার ভদ্র, সৎ নারী ও পুরুষ। তারা সমাজের সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজটি করছেন। তাদেরকে মানবিক ভুল বা বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালনকালে ত্রুটি থেকে অবশ্যই ক্ষমা করা উচিত। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, মন্দ পুলিশ সদস্যরা নাগরিকদের সাথে অসদাচরণ, এমনকি হত্যা করেও নির্দোষ থাকতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে কতজন মারা গেছে, তার কোনো সরকারি হিসাব নেই। এটি আমাদের অতি শ্রেণীবদ্ধ সমাজের সাধারণ ধারণার পরিপন্থী। অবশ্য সাংবাদিক ও অধিকার গ্রুপগুলোর ধারণা আমেরিকায় প্রতি বছর পুলিশের হাতে নিহত হয় এক হাজার। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের চেয়ে অনেক বেশি নিহত হয় কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা।

নাগরিকেরা যখন পুলিশের সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে, তখন তাদেরকে পুলিশবিরোধী ও আমেরিকানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আদালতের আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ কমে আসায় এবং দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে যাওয়া ঠেকাতে জনগণের প্রবল প্রতিরোধের মুখে এখন চিন্তা জাগতে পারে যে বৈশ্বিক অতিমারির মধ্যেই কি আন্দোলনে নামতে হবে দেশের পরিবর্তনের জন্য?

আরেকজন খারাপ পুলিশ সদস্যের হাতে আরেকজন জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার আগেই কি তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থাটি পরিবর্তন করা হবে? যখন খারাপ পুলিশ সদস্য বিচার এড়িয়ে যেতে পারে এবং পুলিশ ও সমাজের মধ্যকার আস্থা গুঁড়িয়ে যায়, তখন কেবল নাগরিকেরাই পরিণাম ভোগ করে না, এমনকি খোদ ভালো পুলিশ সদস্যকেও এজন্য ভুগতে হয়।