কোভিড যুদ্ধের ছদ্মবেশে কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণহীন ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে

শ্রীনগরে গত শনিবার মহররমের মিছিলে পুলিশ যে বর্বর সহিংসতা চালিয়েছে, তাতে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, উপত্যকার জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের প্রথম নীতিই হলো শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করা। অন্তত ১৯ জন হামলায় আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের অনেকেই গায়ে ছড়ড়া বন্দুকের গুলি লেগেছে, চোখেও লেগেছে অনেকের। ছবিতে মনে হয় যথেষ্ট কাছ থেকে এই গুলি ছোড়া হয়েছে।
২০১৬ সালে কাশ্মীরে বুরহান ওয়ানি-কেন্দ্রিক বিক্ষোভে ছড়ড়া গুলিতে বহু মানুষ অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকার ছড়ড়া বন্দুকের ব্যবহার কমিয়ে আনার চিন্তা করেছিল, যতক্ষণ না এর একটা বিকল্প কিছু আসছে।
বেশ কাছ থেকে এই গুলি ছোড়ার কারণে সেগুলো মানুষের মুখে, মাথায় ও বুকে লেগেছে এবং বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে তাদের।
এই ধরণের অস্ত্র জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণে কাজে আসেনি কিন্তু এগুলো মৃত্যুর কারণ হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়েছে।
পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, এই অস্ত্র ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ আছে। গত বছর, জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক স্বায়ত্বশাসন বাতিলের অল্প পরেই সরকারী বাহিনী শ্রীনগরে বেসামরকি নাগরিকদের ভিড়ের উপর ছড়ড়া গুলি ব্যবহার করেছিল। পুরনো শহরের দরিদ্র এলাকায় এটা করা হয়েছিল।
এই ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে সরকার সাজানো মিথ্যাচার শুরু করে যে, সেখানকার জনগণ স্বায়ত্বশাসন প্রত্যাহারের বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মেনে নিয়েছে এবং কোন বিক্ষোভ করেনি।
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট মহররমের মিছিল করা নিষিদ্ধ করে এই যুক্তিতে যে, এটা কারণে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পেছনে একটি সম্প্রদায়কে (শিয়া মুসলিম) দায়ি করা হতে পারে। এর আগে তাবলিগ জামায়াতের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল।
শীর্ষ আদালত যেখানে কমন সেন্স থেকে এই আদেশ দিয়েছে, সেখানে কাশ্মিরের কর্তৃপক্ষ চর বর্বরতা নিয়ে তাদের শক্তি প্রয়োগ করেছে।
বেশ অনেক বছর ধরেই কাশ্মিরে মহররমের মিছিলকে কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই সীমিত রাখা হয়েছে যাতে কোন ধরণের গোষ্ঠিগত সঙ্ঘাত সৃষ্টি না হয়। কিন্তু গত সপ্তাহের সঙ্ঘাত থেকে দেখা গেছে যে, সরকার ছোট একটা মহররমের মিছিলের উপর কোভিড-১৯ বিরোধী লড়াইয়ের নামে চরম শক্তি প্রয়োগ করেছে।
কাশ্মীরে যখন এই বর্বরতা চালানো হচ্ছে, তখন দেশের আরও বহু জায়গায় ধর্মীয় সমাবেশ হচ্ছে, যার মধ্যে অনেকগুলো হয়েছে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে যে আচরণ দেখানো হয়েছে, সেটার কারণ হলো এখানকার রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে, এবং দেশের বাকি অংশের মতো সমান মর্যাদায় তারা আর নেই।
কাশ্মীরে কোন শান্তি নেই, এবং জনগণের ব্যাপারে সরকারের ভয়টা যেন বাস্তব।
শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা আর আটক নেই কিন্তু পুলিশ তাদেরকে ঘর ছাড়তে নিয়মিত বাধা দিচ্ছে। গত সপ্তাহে, পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এক দল বিক্ষোভকারীকে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষিপ্ত করে দেয়।
মহররমের মিছিলে পুলিশি হামলার পরেই এটা ঘটে। এই লক্ষণগুলো সরকারের নিরাপত্তাহীনতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।