আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

সীমান্তে শান্তির জন্য চীনের ব্যাপারে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করা উচিত ভারতের

VISTA-ENG-29-05-2020

ভারত সম্প্রতি গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে চীনা অঞ্চলের মধ্যে প্রতিরক্ষা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে চীনের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে এর প্রয়োজনীয় জবাব দেয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি ও সঙ্ঘাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।

চীন-ভারত সীমান্তে এমন কোন নিয়ন্ত্রণ রেখা নেই, যে ব্যাপারে দুই দেশ পুরোপুরি একমত। সীমান্ত এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে টহলের মাত্রা বেড়েছে, যেটার কারণে অচলাবস্থার মাত্রা বেড়ে গেছে। তবে এগুলোর অধিকাংশই সীমান্তের কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে সরাসরি সমাধান হয়ে যায়। সামান্য কিছু ঘটনাই কেবল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করেছে।

আগের অচলাবস্থাগুলোর মতো সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনাটি কোন দুর্ঘটনা ছিল না, বরং এটা ছিল নয়াদিল্লীর পরিকল্পিত পদক্ষেপ। ভারত সুস্পষ্টভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে জানে যে, গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চল চীনের অংশ। তবে মিডিয়ার ভাষ্য মতে, মে মাসের শুরুর দিকে, ভারত সীমান্ত পার হয়ে চীনা সীমানার গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে প্রবেশ করে। একই সাথে ভারতীয় সেনারা ইচ্ছাকরে চীনা সেনাদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাত উসকে দেয়। ভারত যদি যত দ্রুত সম্ভব এই ধরনের উসকানি বন্ধ করতে না পারে, তাহলে এটা বেইজিং-নয়াদিল্লী সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে – এবং সেটা হয়তো দোকলাম অচলাবস্থার পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

কিছু ভারতীয় বিশ্বাস করেন যে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় এবং কিছু পশ্চিমা দেশ চীনের বিরুদ্ধে দোষারোপের খেলা শুরু করার কারণে তারা একটা সুযোগ পেয়ে গেছে এবং কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে সীমান্ত ইস্যু এখন তাদের অনুকূলে পড়বে।

ভারতের সরকার ও সামরিক বাহিনীর কিছু বলয়ে প্রকাশিত মতে এই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল বিবেচনা এবং চীনের জাতীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই এই ধরনের অনুমাননির্ভর ধারণা পোষণ করা হচ্ছে। এগুলো যুক্তি হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য এগুলো হবে ক্ষতিকর।

প্রথম দেশ হিসেবে চীন কার্যকরভাবে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলা করেছে। চীনে ব্যবসায় এবং জনগণের জীবন আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে গেছে। এর মাধ্যমে শক্তিশালী চীন সরকার এবং দৃঢ় সামাজিক সংহতির বহিপ্রকাশ ঘটেছে।

এদিকে, ভারতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে গেছে, এবং সেখানে এই হার কমার মুহূর্তে এখনও আসেনি। এই মুহূর্তে সীমান্ত বিবাদ উসকে না দিয়ে ভারতের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মহামারী মোকাবেলা এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা।

চীন বিশ্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বলে যে মিডিয়া প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেটা একটা বিভ্রম এবং মার্কিন স্বার্থেই সেটা করা হচ্ছে। বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটা চীনের বিরুদ্ধে ভারতের সুবিধা নেয়ার মতো কোন পরিস্থিতি নয়। ভারত ও অন্যান্য কিছু দেশের মানুষেরা বিশ্বাস করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর যুক্তরাষ্ট্র যেন একই বিষয়, এবং কোন দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিবাদ থাকার মানেই হলো সে ‘আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ হয়ে গেছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সম্পর্কটা এখন উত্তেজনাপূর্ণ, তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৯৬২ সালের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছে চীন, যে সময় ভারত চীনের বিরুদ্ধে সীমান্ত যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং চীন তাদেরকে পরাজিত করেছিল। ১৯৬২ সালে চীন আর ভারতের জাতীয় শক্তির মধ্যে তুলনা করা সম্ভব ছিল। আজ চীনের জিডিপি ভারতের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।

চীন জাতি যত বাইরের চাপের মুখে পড়বে, তারা ততই শক্তিশালীভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে। আশা করি যে, ভারত সরকার, সামরিক বাহিনী, স্কলার এবং মিডিয়া চীনের ব্যাপারে তাদের বোঝাপড়া বাড়াবে। প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে, ভারতের এই প্রজ্ঞা থাকার কথা যাতে তারা পক্ষপাতদুষ্ট মার্কিন দৃষ্টি দিয়ে চীনকে বোঝার চেষ্টা না করে। ভারতের নিজের স্বার্থেই প্রকৃত চীনকে তাদের বুঝতে হবে এবং তার ভিত্তিতে সঠিক কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে।