যু্দ্ধে হারতে চলেছে ভারত

গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এক সাক্ষাতকারে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলে ভারত সরকারের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরীরা ভারতের চেয়ে বরং চীনের শাসনকে বেশি পছন্দ করবে।
ভারত-পন্থী এই কাশ্মীরী নেতাকে অধিকাংশ কাশ্মীরী তাদের অধিকারের প্রশ্নে বিশ্বাসঘাতক মনে করেন। তিনি পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে, কাশ্মীরীরা নিজেদেরকে ‘দাস’ মনে করছে এবং কারফিউ উঠে যাওয়ার পর তারা বিক্ষোভে নামবে। তিনি পরিস্কারভাবে বলেছেন যে, কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্তকে কাশ্মীরের কেউ সমর্থন করে না এবং এ মর্যাদা ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি সংগ্রাম করবেন।
ফারুক আব্দুল্লাহ আরও বলেন যে, তার পরিবার এবং কাশ্মীরের আরেক ভারতপন্থী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির পরিবারের মধ্যে যে বিরোধ চলছিল, সেটা দূর হয়ে গেছে এবং এখন থেকে তারা একসাথে কাজ করবেন। মুফতি এখনও গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন।
এটা স্পষ্ট যে গত বছরের আগস্টে সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত, তার ফল হয়েছে ভয়াবহ। বিজেপি সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটার মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের বহুদিনের আশঙ্কা অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়ে উঠেছে। তাদের আশঙ্কা ছিল, নয়াদিল্লী কাশ্মীরীদের মুসলিম ও কাশ্মীরী পরিচয় মুছে দিয়ে জোর করে এখানকার জনমিতিক চেহারা বদলে দিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার নতুন অধিবাসী আইন করেছেন, যে আইন অনুসারে হিন্দুরাও এখন ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সম্পদ কিনতে পারবে এবং সেখানে বসত গড়তে পারবে।
তাদের উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট: ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে হিন্দু সংখ্যাগুরু এলাকায় রূপান্তরিত করা এবং কাশ্মীরীদেরকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তি থেকে বঞ্চিত করা, সংখ্যাগুরু হওয়ার কারণে যে সুবিধাটা এতদিন তাদের ছিল। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অবশ্য ভারত প্রত্যেক কাশ্মীরীকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং ফারুক আব্দুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতির মতো তাদের অনুগতরাও দূরে সরে গেছে। পুরো অধিকৃত কাশ্মীরকে একটা উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করার মাধ্যমে ভারত কাশ্মীরীদেরকে তাদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দিকে জোর করে ঠেলে দিয়েছে। ভারতকে এই দখলদারিত্বের জন্য যে মূল্য দিতে হচ্ছে, সেটার মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে।
এই পরিস্থিতি চলতে না। ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের কারণে ভারতের ভেতরেও বিজেপি সরকারের সমালোচকদের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেদের অবস্থানের যৌক্তিকতা দেখাতে পারছে না ভারত। সময়ের সাথে সাথে জনগণের প্রতিরোধ নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে। এক সময় যারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে জোট করে ছাড় দিয়েছে, সেই ফারুক আব্দুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতির মতো রাজনীতিবিদরাও এখন রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিচ্ছে। ভারতের জন্য আগামীতে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
ভারতের উপর যে সব দেশের প্রভাব আছে, তাদের উচিত মোদিকে উন্মাদনার পথ থেকে ফেরানো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুস্থ চিন্তা আর যৌক্তিকতা দাবি করে যে, অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া উচিত। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় পুরো জম্মু ও কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে।