আরব আমিরাত-ইসরাইল চুক্তি

আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে বৃহস্পতিবার শান্তি চুক্তির ঘোষণাটি ছিলো অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। তবে যারা মধ্যপ্রাচ্যের বিকাশনাম ঘটনাবলী সম্পর্কে সচেতন তারা জানেন যে বহু বছর ধরে পর্দার আড়ালে আবু ধাবি ও তেল আবিবের মধ্যে সম্পর্কটি প্রস্ফুটিত হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা ছিলো এই গোপন প্রচেষ্টার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মাত্র। বিশেষ করে গত বছর বা তারও আগ থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা গতি পায়, ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ও উপসাগরীয় শেখশাসিত রাজ্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় চলছিলো, পাশাপাশি সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রচেষ্টা চলে- যা সম্পর্ক স্থাপনের পথটি সুগম করেছে।
‘সাহসী’ ও ‘ঐতিহাসিক’-এমন কিছু ন্যাক্কারজনক বিশেষণ যুক্ত করে এই উদ্যোগের প্রধান তিন চরিত্র যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও আরব আমিরাত চুক্তির প্রশংসা করলেও তাতে ফিলিস্তিনীদের জন্য আশাবাদের কিছু নেই। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র চুক্তিটিকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন। অন্যদিকে হামাস একে বলেছে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’।
ফিলিস্তিনের ধ্বংস্তুপের উপর ইসরাইলের জন্ম। তাছাড়া দেশটির সঙ্গে উপসাগরের প্রান্তে থাকা আরব আমিরাতের কোন সীমান্তও নেই। তাহলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই তাড়া কেন? স্পষ্টত, দুটি রাষ্ট্রের নেতৃত্বেই রয়েছেন আমেরিকান অক্ষের সদস্যরা। তাদের অভিন্ন ভূকৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে এবং নিশ্চিতভাবে তাতে এমন কিছু নেই যাতে ফিলিস্তিনীদের কল্যাণ হবে।
তেল আবিব ও দুবাই উভয়ের সঙ্গে তেহরানের সাপে-নেউলে সম্পর্ক এবং এই চুক্তি নিশ্চিতভাবে ইরানের রাজধানীতে সতর্ক ঘন্টা বাজাবে। তাছাড়া আমিরাতের শাসক শেখরা রাজনৈতিক ইসলামের ঘোর বিরোধী। আরব বিশ্বে যার নেতৃ্ত্ব দিচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাস (ব্রাদারহুড থেকে সামাসের সৃষ্টি)।
অন্যদিকে, গাজা ভূখণ্ডে হামাসের সঙ্গে বহুবার মুখোমুখি হয়েছে ইসরাইল, সেখানে ইহুদি রাষ্ট্রটি অসহায় বেসামরিক লোকজনকে কচুকাটা করেছে। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হামাস। এর মানে হলো ইসরাইল ও আরব আমিরাত এখন এই অভিন্ন শত্রুকে দমন করার জন্য প্রকাশ্যে লেনদেন করতে পারবে। অবশ্য ট্রাম্প এ চুক্তিকে তার নির্বাচনী প্রচারণায়ও ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি তার খ্রিস্টবাদী ভোটারদের দেখাতে পারবেন যে তিনি আরব বিশ্বে ইসরাইলের আরেকটি মিত্র সৃষ্টি করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি সবার আকাঙ্ক্ষা। তবে শান্তি আসতে হবে ন্যায়বিচার ও ন্যায্য খেলার মাধ্যমে; তা না হলে এ ধরনের ‘শান্তি চুক্তি’ হবে ডুমুরের ফুল, আত্মসমর্পন মাত্র। এই চুক্তি পশ্চিম তীরকে অবৈধভাবে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করা ঠেকিয়েছে বলে প্রশংসা করা হয়। কিন্তু চুক্তিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বুঝা গেছে সেটা মিথ্যা। বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু মিডিয়াকে বলেছেন, অধিকৃত ভূখণ্ডে ‘সার্বভৌমত্ব সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে আমার পরিকল্পনার কোন পরিবর্তন হয়নি।’
টেকসই দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনীদের মানবাধিকার ও জাতীয় অধিকার রক্ষায় এ ধরনের শান্তিচুক্তি কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে? এ ব্যাপারে ফিলিস্তিনিদের উত্তর যা হবে তা এক টুইটে এক বাক্যে সংকলিত করেছেন পিএলও নেতা ড. হানান আশরাবি: “তুমি তোমাকে বিক্রি করে দিতে তোমার ‘বন্ধুদের’ সুযোগ দিওনা।”