পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলা

বেশ কিছুদিন শান্ত থাকার পর নগর সন্ত্রাসের ভূত আবারো পূর্ণ শক্তিতে ফিরে এসেছে সোমবার করাচিতে, ওইদিন পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলা করে বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, চার হামলাকারিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আর এটা করতে গিয়ে তিন নিরাপত্তা রক্ষী ও এক পুলিশ কর্মকর্তা জীবন দিয়েছেন। এই সন্ত্রাসের দায়িত্ব গ্রহণ করছে নিষিদ্ধ বালুচিস্তান লিবারেশনে আর্মি (বিএলএ)। অন্যদিকে সিন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে অভিযুক্ত করেছেন পাকিস্তানে ‘স্লিপার সেল’ সক্রিয় করার দায়ে।
টার্গেট বাছাইয়ের গুরুত্বটি উপেক্ষা করা যাবে না। দেশের অর্থনৈতিক রাজধানীতে স্টক এক্সচেঞ্জ হলো হৃৎপিণ্ডের মতো। এখানে আছে পাকিস্তানের কেন্দ্রিয় ব্যাংক, কেন্দ্রিয় পুলিশ দফতরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। স্পষ্টত শত্রুরা এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে দেশের অর্থনৈতিক স্নায়ুকেন্দ্র নাজুক অবস্থায় আছে।
তবে পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের সাহসিকতা ও তৎপরতার প্রশংসা করতে হয়। তা নাহলে আরো বড় বিপর্যয় ঘটতে পারতো।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায় যে হামলাকারীরা সাথে করে খাবার ও পনি নিয়ে আসে। এর মানে হলো তারা চেয়েছিলো পণবন্দী আটক করে অবরোধকে আরো দীর্ঘায়িত করতে। সিন্ধু রেঞ্জার্স প্রধান বলেন যে, এই হামলার সঙ্গে ২০১৮ সালের নভেম্বরে করাচিতে চীনা কনস্যুলেটে হামলার মিল রয়েছে। তাতেও বিএলএ হামলাকারিরা জড়িত ছিলো।
সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরো জানান, ভারতীয় গোয়েন্দারা বালুচ ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদদের নিয়ে একটি চক্র তৈরি করেছে। এর মধ্যে এমকিউএম-লন্ডনের প্রতি অনুগতরাও রয়েছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে সিন্ধুতে রেঞ্জারদের বিরুদ্ধে যে সহিংস হামলা চালানো হয় সেটাও একই এজেন্ডার অংশ। নগর পুলিশ প্রধান বলেন, পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে আগেই গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিলো।
গত দুই দশক বা তারও বেশির সময় ধরে করাচি বহু সংখ্যক বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী ঘটনা দেখেছে। এগুলোর বেশিরভাগ করেছে জিহাদি ও বিচ্ছিন্নতাবাদি জঙ্গিরা। ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে এখানে জাতিগত, রাজনৈতিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদি হত্যাকাণ্ড নগরির শান্তি ধ্বংস করে দিয়েছিলো। সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ বহু মূল্যবান জীবন হারিয়ে গেছে। এই নগরি সন্ত্রাসের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছিলো। সোমবারের হামলার পাশাপাশি গত কয়েক দিন ধরে ছোটখাট হামলায় মনে হচ্ছে আবারো এই মেট্রোপলিটন শহরটিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করা হয়েছে।
অন্তর্ঘাতমূলক উপাদানগুলোর পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের তৎপরতা বাড়াতে হবে। এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক উত্তাপ যখন বাড়ছে তখন শত্রু দেশটির পাকিস্তানে অশান্তি উষ্কে দেয়া বিচিত্র কিছু নয়। তাই নিরাপত্তা বাহিনীকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদি ও রাজনৈতিক জঙ্গিদের হাত মেলানোর খবর যদি সত্যি হয় তাহলে দেশকেও তার আলোকে সন্ত্রাসদমন নীতি গ্রহণ করতে হবে।