ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অমানবিক রূপটি প্রকাশ পেয়েছে

ইরানের উপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য এখনই সময় যুক্তরাষ্ট্রের। করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে কঠিনভাবে আক্রান্ত দেশগুলোর একটি হলো ইরান। এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে সেখানে। আর এই মারাত্মক সঙ্কটকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল নিষেধাজ্ঞা – যেটা নিঃসন্দেহে মানবিক চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী – সেটার কারণে পরিস্থিতি আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে ইরানের উপর চাপ দিয়ে আসছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের সাথে পারমানবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর চাপ বাড়িয়েছে তারা। ওয়াশিংটন তেহরানের তেল শিল্পের উপর আঘাত হানতে বেশ কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে তেহরান অনেকটা বিশৃঙ্খলা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বহু মিলিয়ন ইরানি দুর্দশার মধ্যে পড়ে গেছে।
এখন ইরানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যখন দ্রুত বাড়ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র কোন সহায়তা তো দিচ্ছেই না, বরং নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত সপ্তাহে ইরানের সাথে বাণিজ্যরত কিছু বিদেশী কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে ইরানের উপর চাপ আরও বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এই নিষ্ঠুর বার্তা দিয়েছে যে ইরানের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের কোন সমবেদনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ চাপের কারণে’ ইরান শুধু ভাইরাস মোকাবেলা করতেই হিমশিম খাচ্ছে না। বরং তাদেরকে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও বাধা সৃষ্টি করছে তারা।
ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান এ পর্যন্ত ২০০ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছে। ফলে সঙ্কট মোকাবেলায় দেশটি বড় ধরণের সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। একটা মহামারী পরিস্থিতিতে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার, সেই মেডিকেল সরঞ্জাম পেতেই তারা এখন ব্যার্থ হচ্ছে।
ইরানে ওষুধের জন্য যে কাঁচামাল লাগে, এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই তাদেরকে আমদানি করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটা সীমিত হয়ে গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ওয়াশিংটন যদিও দাবি করেছে যে, তাদের নিষেধাজ্ঞা মানবিক সহায়তায় বাধা দিচ্ছে না, কিন্তু এর কারণে এখনও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নিজেদেরকে মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে বিজ্ঞাপন করে এসেছে। এই বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে আবারও তারা সেই গর্বের কথা জানিয়েছে। দ্য ডেইলি বিস্টে প্রকাশিত এক সরকারী নথিতে বলা হয়েছে যে, “যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকান জনগণ আবারও দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা বিশ্বের ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা শক্তি”।
কিন্তু ইরানের ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপের দিকে একবার তাকান। এটা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ছাড়া কিছু নয়। রয়টার্স ইরানের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করেছে, যিনি এই মন্তব্য করেছেন। বহু ইরানি যখন ভয়ঙ্কর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, সে সময় ‘সবচেয়ে বড় মানবতাবাদীরা’ কিভাবে সেটা নিয়ে উদাসীন থাকে? নিষেধাজ্ঞা কি যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তার ধরন? ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজের মিথ্যাচারিতাই শুধু প্রকাশিত হয়েছে। ইরানীদের জীবন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কোন বিবেচনায় নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক অর্জন।
সৌভাগ্যজনক দিক হলো, অন্যান্য অনেক দেশ ইরানের মানবিক সঙ্কটের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ইরানে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সহায়তা পাচ্ছে। চীন সেখানে মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের একটি টিম পাঠিয়েছে। বিভিন্ন চ্যানেলে তাদেরকে মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠিয়েছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। রাশিয়া, কুয়েত ও কাতারের মতো দেশগুলোও সময়মতো সাহায্য পাঠিয়েছে।
ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস সারা বিশ্বের অভিন্ন শত্রু। কোন দেশই এটার কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে সকল পুরনো বিবাদ সরিয়ে রাখা উচিত। সব দেশের একমাত্র অগ্রাধিকার এখন হওয়া উচিত একজোট হওয়া যাতে বৈশ্বিক এই মহামারীকে মোকাবেলা করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অমানবিক নিষেধাজ্ঞা একটা খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ভাইরাস মোকাবেলার জন্য অন্যান্য দেশ যে প্রচণ্ড চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের এই নিষেধাজ্ঞা। এবং এক পর্যায়ে হয়তো তাদের নিজেদের জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যকেই সেটা হুমকির মুখে ফেলে দেবে।