ইন্দো-মার্কিন চুক্তি

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যাণ্ড কোঅপারেশান এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির ফলে তাদের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও সামরিক সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। এমন সময় চুক্তিটা হলো যখন লাদাখে চীন ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার নয়াদিল্লীতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন এবং সেখানে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। বিইসিএ’র মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত চারটি চুক্তি সম্পন্ন হলো। এই চুক্তির ফলে ভারত ভূ-স্থানিক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবে, যেগুলো তাদের সামরিক প্রয়োজনে কাজে লাগবে। দুই মার্কিন মন্ত্রী তাদের এই সফরে শ্রীলংকা ও মালদ্বীপকেও রেখেছেন। সফরের উদ্দেশ্য হলো চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের সাথে চীনের সীমান্ত উত্তেজনার প্রসঙ্গ তুলে নয়াদিল্লীর পক্ষে সংহতি জানিয়েছেন। শ্রীলংকায় মার্কিন কর্মকর্তা চীনকে ‘শিকারী’ বলেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জবাবে মার্কিন মন্ত্রীকে তার শীতল যুদ্ধকালীন মানসিকতা পরিত্যাগ করতে বলেন এবং “চীন ও আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট না করার” আহ্বান জানান।
চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হয়তো কৌশলগত কারণ রয়েছে। কিন্তু এ অঞ্চলের আন্ত-রাষ্ট্র সম্পর্কের প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের সচেতন থাকা উচিত। ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্যের মোকাবেলা করতে চায় কিন্তু এটা ইসলামাবাদের সাথে তাদের সম্পর্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
পরাশক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাস্তবতার মধ্যে পাকিস্তান একটা ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করেছে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সাথেই গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটা আমাদের জন্য মানানসই এবং এমন কোন কারণ নেই যে জন্য একটি দেশের সাথে সম্পর্কের স্বার্থে অন্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা ছাড় দিতে পারি। সত্তরের দশক থেকেই চীনের সাথে আমাদের কৌশলগত ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক সম্পর্ক চলে আসছে। সিপিইসি চালুর মাধ্যমে দুই দেশ আরও কাছাকাছি এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও আমরা শক্তিশালী সম্পর্ক ধরে রেখেছি, যেটা এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল দিচ্ছে।
আমরা এই সুষম ভারসাম্যটা ধরে রেখেছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতের সামরিক সক্ষমতা এমনভাবে বাড়াতে থাকে, যেটা পাকিস্তানের জন্য সুস্পষ্ট বিপদ সৃষ্টি করবে, তাহলে এই ভারসাম্য থাকবে না। ওয়াশিংটন খুব ভালোভাবেই জানে ভারত কিভাবে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তানে ভূখণ্ডে বোমা ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল, যেটা দুই দেশকে যুদ্ধের প্রায় দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান ভারতের আগ্রাসনের জবাব দিলেও কৌশলগতভাবে নিজেকে নিবৃত রেখে সশস্ত্র সঙ্ঘাত এড়িয়েছে।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুমকিমূলক বিবৃতি দেয়া জারি রেখেছে, যেটা এই অঞ্চলকে সহিংসতার হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুধাবণ করতে হবে এবং এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যেটা ভারতের ঔদ্ধত্যকে উসকে না দিয়ে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। এটা একটা জটিল অঞ্চল এবং সেই জটিলতা উপলব্ধি করেই ওয়াশিংটনকে এখানে পদক্ষেপ নিতে হবে।